জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে এক পুলিশ সদস্যের এক ছাত্রীকে হেনস্তার প্রতিবাদে এবং বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবার বেলা আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাদদেশে এ মানববন্ধন হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের হাতে ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা আজ কোথায়, বহিরাগতমুক্ত ক্যাম্পাস দেখতে চাই, রক্ষকই ভক্ষক’–সংবলিত প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।
গতকাল রোববার রাত সোয়া ১০টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে হেনস্তার দায়ে এক পুলিশ সদস্যকে আটক করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাঁর কাছ থেকে অবৈধ ওয়াকিটকি ও হ্যান্ডকাফ জব্দ করা হয়। অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য মো. মেহমুদ হারুন। তিনি নারায়ণগঞ্জ পুলিশ লাইনসের এসএএফের কনস্টেবল পদে কর্মরত ও সাভার রাজাশন এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ওই পুলিশ সদস্যকে আটক করে আশুলিয়া থানা পুলিশে দেন। এ সময় তাঁর কাছ থেকে অবৈধ ওয়াকিটকি ও হ্যান্ডকাফ জব্দ করে আশুলিয়া থানার পুলিশ।
পরে দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, অভিযুক্ত মেহমুদ পুলিশের সদস্য। তিনি যে হ্যান্ডকাফ ও ওয়াকিটকি বহন করছেন, তা অবৈধ। হারুনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ফৌজদারি মামলা করা হবে।
হেনস্তার ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা ছয় দফা দাবি জানান। তাঁদের দাবিগুলো হলো—ঘটনাপরবর্তী আইনি পদক্ষেপ যথাযথ হচ্ছে কি না, তার তদারক করা; ঘটনার হালনাগাদ তথ্য নিয়মিত শিক্ষার্থীদের জানানো; ক্যাম্পাসে বহিরাগত ব্যক্তিদের প্রবেশ ও চলাচল নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ গ্রহণ করা; ক্যাম্পাসের মূল সড়কগুলোয় সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন ও প্রয়োজনীয়সংখ্যক নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ করা; অন্ধকারাচ্ছন্ন সড়কগুলোয় রাত্রিকালীন পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা এবং পর্যাপ্ত যানবাহন নিশ্চিত করে ক্যাম্পাসে যাতায়াত নিরাপদ করা।
মানববন্ধনে ইংরেজি বিভাগের প্রথম বর্ষের (৫১তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী মো. সাদ বলেন, ‘একজন মা–ও যেন বলতে না পারেন যে জাহাঙ্গীরনগরে মেয়েরা নিরাপদ নয়। যে পুলিশ সদস্য এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন, তিনি যেন আর এমন ঘটনা না ঘটাতে পারেন, সে ব্যবস্থা নিতে হবে। তাঁকে শাস্তি দিতে হবে। আমরা নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই এবং এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’
ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী বেদত্রয়ী গোস্বামী পৃথা বলেন, কিছু দিন ধরে এমন কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা বারবার ঘটছে। আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে জাহাঙ্গীরনগরের দায়িত্ব প্রত্যেক শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। জনবহুল বা নির্জন উভয় পরিবেশেই শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এই প্রশাসনকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী পূর্ণতা রহমান বলেন, ‘গতকাল রাতে এক পুলিশ কনস্টেবল এবং তাঁর সঙ্গে বিদ্যুৎ চৌধুরী নামের এক যুবক ক্যাম্পাসে ঢুকে এক শিক্ষার্থীকে হেনস্তা করেছেন। জানতে পেরেছি, কিছু দিন আগেও তিনি (ওই পুলিশ সদস্য) বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ঝামেলা করতে চেয়েছেন। দোষীর বিরুদ্ধে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, সেটা আমাদের জানাতে হবে। প্রশাসনের কাছে আমাদের জোর দাবি, তারা যেন আমাদের দাবিগুলো মেনে নেয়।’
মানববন্ধনের পর বেলা সোয়া তিনটার দিকে শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনার থেকে শোভাযাত্রা নিয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ে যান এবং মো. নূরুল আলম বরাবর স্মারকলিপি দেন। উপাচার্য স্মারকলিপি গ্রহণ করে যথাযথ বিচারের আশ্বাস দেন। তিনি শিক্ষার্থীদের বলেন, রাস্তাগুলোয় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা হবে। তিনি অভিযুক্ত ব্যক্তির যথাযথ বিচারের চেষ্টা করবেন। এ ছাড়া ক্যাম্পাসের রাস্তায় নিয়মিত টহল আরও বাড়ানো হবে।