জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় সমাজবিজ্ঞান ও আইন অনুষদভুক্ত বি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। এ বছরের পরীক্ষায় মেয়ে ও ছেলেদের আলাদাভাবে দুটি করে চারটি পালায় পরীক্ষা নেয়া হয়। গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত ফল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মেয়েদের দুটি পালার প্রথম পালা থেকে মাত্র ২২ জন এবং দ্বিতীয় পালা থেকে ১৭১ জন উত্তীর্ণ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
একইভাবে ছেলেদের দুটি পালার প্রথম পালায় ৫৭ জন এবং দ্বিতীয় পালা থেকে ১৩৭ জন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। বিষয়টিকে বৈষম্য হিসেবে দেখছেন বিশ্ববিদ্যালয়–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভর্তি পরিচালনা কমিটির তথ্য মতে, বি ইউনিটে ৩৮৬টি আসনের বিপরীতে ৪১ হাজার ৪৭৮টি আবেদন জমা পড়েছিল। এর মধ্যে ৩১ হাজার ৭২৮ জন ভর্তি–ইচ্ছুক শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। পাসের হার ৩০ দশমিক ৭৭ শতাংশ। ছেলে ও মেয়েদের আলাদা মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক বশির আহমেদ বলেন, শিফট পদ্ধতিতে বৈষম্য প্রতিবছরই হয়ে থাকে। এ বৈষম্য খুবই দুঃখজনক। প্রশাসন এবার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিল শিফট পদ্ধতি বাতিল করে পরীক্ষা নেওয়ার। তবে ভর্তি পরীক্ষা শিক্ষকদের সম্মিলিত মতামতের ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একাডেমিক কাউন্সিলে অনেক শিক্ষক শিফট পদ্ধতি বাতিল করার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করায় তা আর বাস্তবায়িত হয়নি।
শিফট পদ্ধতিকে বিতর্কিত আখ্যা দিয়ে এটি বাতিল করতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন প্রগতিশীল শিক্ষার্থীরা। তাঁরা ভর্তি পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে কয়েকবার মানববন্ধন করেন এবং উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম বরাবর স্মারকলিপি দেন। এবারও শিফট পদ্ধতিতে বৈষম্যের শিকার হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তাঁরা।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সোহাগী সামিয়া বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় একাধিক শিফট পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা পরিচালনা করছে। একাধিক শিফট পদ্ধতিতে পরীক্ষা হওয়ায় যে ফলাফল বৈষম্য দেখা যায়, তাতে স্পষ্ট বোঝা যায় শিফট পদ্ধতিতে সঠিক মেধা যাচাই হচ্ছে না। শিফট পদ্ধতির এই জটিল আয়োজনের মাধ্যমে প্রশাসন ব্যাপক লুটপাটের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে। যতবার তাঁরা লুটপাট ও বৈষম্যমূলক ব্যবস্থার পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছেন, ততবারই প্রশাসন কোনো সুনির্দিষ্ট জবাব হাজির করতে পারেনি বলে দাবি করেন তিনি। যত দিন এ পদ্ধতি বাতিল না হচ্ছে তত দিন তাঁদের আন্দোলন জারি রাখবে বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।