জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীদের স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) সম্পন্ন করে তার সনদ পেতে অন্তত পাঁচটি দপ্তরের ঝামেলা পোহাতে হয়। প্রয়োজন হয় আবেদনপত্র, আবাসিক হলের ছাড়পত্র, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের ছাড়পত্র, বিভাগের সভাপতির স্বাক্ষর ও টাকা জমা দেওয়ার রশিদ। দপ্তরে দপ্তরে ঘুরে কাগজপত্র স্বাক্ষর করাতে ও জমা দিতে সময় লাগে অন্তত ২০-৩০ দিন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো শিক্ষার্থী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে তার সনদ উত্তোলন করতে চাইলে প্রথমে ওই শিক্ষার্থীকে তার বরাদ্দকৃত (অ্যালোটেড) হল থেকে সনদ উত্তোলনের আবেদন ফরম (স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের জন্য আলাদা ফরম) নিতে হয়। ফরমটি পূরণ করে বিভাগের সভাপতির স্বাক্ষরের জন্য বিভাগের অফিসে জমা দিতে হয়। পরদিন বিভাগ থেকে ফরমটি ফেরত দিলে সেটি হল প্রাধ্যক্ষের স্বাক্ষরের জন্য আবার হল অফিসে জমা দিতে হয়। প্রাধ্যক্ষের স্বাক্ষরের পর পরদিন হল অফিস থেকে ফরমটি ফেরত দেয়। হলের ছাড়পত্রের জন্য (ক্লিয়ারেন্স) নির্ধারিত ফি হল অফিসে জমা দিয়ে ছাড়পত্র নিতে হয়। এরপর কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে ছাড়পত্র নেওয়ার জন্য গ্রন্থাগার থেকে আবেদন ফরম নিয়ে পূরণ করে হল অফিসে জমা দিতে হয়। হল অফিস ফরমটি সত্যায়িত করে ফেরত দিলে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে বই নিয়ে পড়ার জন্য গ্রন্থাগার কার্ড নিয়ে থাকলে কার্ডসহ আবেদন ফরম কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে জমা দিতে হয়। গ্রন্থাগার থেকে পরদিন ছাড়পত্র দেওয়ার পর সনদ উত্তোলনের জন্য নির্ধারিত ফি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক শাখায় দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে জমা দিয়ে রশিদ নিতে হয়।
টাকা জমার রশিদ এবং হল ও গ্রন্থাগারের ছাড়পত্রসহ আবেদন ফরম পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে জমা দিতে হয়। ফরম জমা হলে সনদ নেওয়ার জন্য ১৩ দিন পর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে যেতে বলা হয়। সনদ উত্তোলনের পর পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের তারিখ উল্লিখিত আলাদা প্রত্যয়নপত্র নেওয়ার জন্য পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে আবেদনপত্র জমা দিতে হয়। কারণ জাবির শিক্ষা সনদে ফলাফল প্রকাশের তারিখ উল্লেখ করা থাকে না। এই দীর্ঘ ও জটিল প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় ফরম ও রশিদসহ যাবতীয় কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দেওয়ার পরেও বিড়ম্বনায় পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী কোনো বিভাগের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত না হলে ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা সনদ উত্তোলনের আবেদন ফরমসহ যাবতীয় কাগজপত্র জমা দিলেও সনদ দেওয়া হয় না। এই দীর্ঘ ও জটিল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে একদিকে যেমন সময় নষ্ট হয় তেমনি ভোগান্তিও পোহাতে হয়। এ ছাড়া পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত না হলে মূল সনদ দেওয়া হয় না। ফলে জরুরি প্রয়োজন হলেও মূল সনদের জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই সনাতনী ও জটিল প্রক্রিয়া ছেড়ে অটোমেশন (অনলাইননির্ভর যান্ত্রিক পদ্ধতি) প্রক্রিয়া চালু করলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি দূর হবে।
অটোমেশন প্রক্রিয়া চালুর বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক এম মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করছি। শিগগিরই অটোমেশন প্রক্রিয়ার কাজ শুরু হবে।’
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে অটোমেশন প্রক্রিয়ার কাজ শুরুর ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু পর্যাপ্ত বাজেট না থাকার কারণ দেখিয়ে তৎকালীন প্রশাসন কাজ শুরু করেনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, ‘আমরা বিষয়টি ইতিমধ্যে আলোচনা করেছি। শিগগিরই কাজ শুরু হবে বলে আশা করি।’