জাবিতে ছাত্রলীগের তদন্ত কমিটির বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ

দৈনিক শিক্ষাডটকম, জাবি |

দৈনিক শিক্ষাডটকম, জাবি : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনকে সাংগঠনিক ব্যর্থতাসহ জমিদখল, চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে গত ২৩ জানুয়ারি অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা। এ ঘটনায় ২৭ জানুয়ারি চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কমিটিকে ১০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়। কিন্তু দীর্ঘ এক মাস হলেও তদন্ত কমিটি জাবি ক্যাম্পাসে আসেনি। এ ঘটনায় আর্থিক লেনদেনের কারণে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দাখিল পিছিয়েছে বলে অভিযোগ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের একাংশ।

তবে গত ৩০ জানুয়ারি তদন্ত কমিটির সদস্য ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক তানান ক্যাম্পাসে আসে। তবে তার ক্যাম্পাসে আসার বিষয়ে তদন্ত কমিটির অন্যান্য সদস্যরা জানেন না বলে জানান। তবে এবার তদন্ত কমিটির বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ করেছে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। নাম প্রকাশ না করে শর্তে শাখা ছাত্রলীগের একাধিক নেতাকর্মী বলেন, গত ৩০ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তদন্ত কমিটির সদস্য তানান  বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন। আমরা তাকে লিটনের জমি দখলে ভিডিও দেখিয়েছি। তিনি তখন বলেন এটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। তিনি তো ক্যাম্পাসে জমি দখল করেন নি। পরে পত্রিকাতে তার জমি দখলের বিষয়টি উঠে এসেছে। পরে আমরা খোঁজ নিয়ে দেখি সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনের সাথে আর্থিক লেনদেন হয়েছে। এ কারণে তাদের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেশ করতে এতো গড়িমসি।

এদিকে তানান সেক্রেটারি হাবিবুর রহমান লিটনের কাছে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে গেছে’ এমন কথা ক্যম্পাসের প্রতিটি নেতাকর্মীর মুখে মুখে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান প্রতি হতাশ হয়েছেন নেতাকর্মীরা। নেতাকর্মীরা জানান, সাদ্দাম ভাই ও ইনান ভাই আমাদের ভরসার কেন্দ্র ছিলো। আমরা ভেবেছিলাম তারা একটি সুষ্ঠু তদন্ত করবে। কিন্তু তারা যাদের দায়িত্ব দিয়েছে তারা শুধু অবহেলাই করেনি ববং অভিযুক্তদের কাছে টাকা নিয়ে চুপ হয়ে গেছে। আশা করি সাদ্দাম ও ইনান ভাই বিষটি বিবেচনায় নিবেন।

এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির সদস্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক তানান বলেন, যারা এ ধরনের অভিযোগ করেছে সেটা ভিত্তিহীন। আমি সেদিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গিয়েছিলাম। এটা অনানুষ্ঠানিক একটা গমন ছিলো, যেখানে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল ও সম্পাদক লিটন কেউ ই জানেনা। আমি সাধারণ শিক্ষার্থী ও নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলেছি। আমাদের বিরুদ্ধে আনীত এ অভিযোগ ভিত্তিহীন। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেশ দেরি হওয়া প্রসঙ্গে তিনি আরোও বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন কমিটি গঠিত হওয়ার দশ কার্যদিবসের মধ্যে জমা দেয়ার কথা ছিল।

তবে জাহাঙ্গীরনগরে সাম্প্রতিক ধর্ষণ কান্ডে উদ্ভূত অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় আমরা আনঅফিসিয়ালি প্রতিবেদন জমা দেয়ার সময় বর্ধিত করেছি। এছাড়া ফেব্রুয়ারি মাসে বসন্তবরণ, সাংগঠনিক সফর সহ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নানা ব্যস্ততা ছিল। তবে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিতে পারবে বলে আশা করছি।

সার্বিক বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান গণমাধ্যমকে বলেন, তদন্ত কমিটি অনানুষ্ঠানিকভাবে সময় বাড়িয়ে নিয়েছে। আর তদন্ত কমিটির বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি  দেখার জন্য প্রয়োজনে আবারও আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করবো।

উল্লেখ্য, শাখা ছাত্রলীগের সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার পর গত ২৭ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ চার সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন—কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি রাজিয়া সুলতানা, এনামুল হক তানান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহীদুল হক ও উপ আইনবিষয়ক সম্পাদক সাফরিন সুরাইয়া।

এর আগে বিদ্রোহীরা গত ২৩ জানুয়ারি লিটনকে অবাঞ্ছিক ঘোষণা করে বিক্ষোভ করেন। এরপর থেকে  লিটনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। বিদ্রোহীদের অভিযোগগুলো হলো-  বিশ্ববিদ্যালয় পার্শ্ববর্তী এলাকায় ‘জমি দখল’, ব্যক্তিগত স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত থাকা, সংগঠনের কর্মীদের খোঁজ না রাখা, কমিটির দুই বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিতে সমন্বয় না করা, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়া সত্ত্বেও রাজনীতি বিকেন্দ্রীকরণ না করে নিজ হলকেন্দ্রিক চিন্তাচেতনা পোষণ করা, প্রত্যেকটি হলের কর্মীসভা করেও দীর্ঘদিন যাবৎ হল কমিটি না দেয়া এবং হল কমিটির বিষয়ে কথা বলতে চাইলে নেতাকর্মীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করা।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
যারা আপনাদের সেবা করবে তাদের ভোট দেবেন: সারজিস - dainik shiksha যারা আপনাদের সেবা করবে তাদের ভোট দেবেন: সারজিস মাদরাসায় অনুপস্থিত থেকেও ১১ মাসের বেতন তুলেছেন শিক্ষক - dainik shiksha মাদরাসায় অনুপস্থিত থেকেও ১১ মাসের বেতন তুলেছেন শিক্ষক এখনো প্রস্তুত হয়নি একাদশের, পাঁচ বইয়ের পাণ্ডুলিপি - dainik shiksha এখনো প্রস্তুত হয়নি একাদশের, পাঁচ বইয়ের পাণ্ডুলিপি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! - dainik shiksha সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! ৬৬ জন ছাত্রকে পাঁচচুলো করলেন শিক্ষক - dainik shiksha ৬৬ জন ছাত্রকে পাঁচচুলো করলেন শিক্ষক শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকারের নতুন পদক্ষেপ - dainik shiksha শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকারের নতুন পদক্ষেপ প্রশ্নফাঁসের তদন্ত নিয়ে সিআইডি ও পিএসসি মুখোমুখি - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসের তদন্ত নিয়ে সিআইডি ও পিএসসি মুখোমুখি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0052080154418945