জাবিতে ছাত্রলীগের ‘চাপে’ নির্মাণকাজ বন্ধ

জাবি প্রতিনিধি |

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। প্রকল্পের আওতায় গ্রন্থাগার ভবন ও আল-বেরুনী হল সংলগ্ন মাঠের নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। নির্মাণকাজ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এসে তাদের কাছে কিছু ‘দাবিদাওয়া’ জানিয়েছেন। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত নির্মাণকাজ বন্ধ রাখতেও বলে গেছেন। এরপর থেকেই কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ১ হাজার ৪৪৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকার উন্নয়ন প্রকল্প চলছে। গেল বছরের ৮ জুন এ প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপের আওতায় ১৪টি স্থাপনার নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয়। যার মধ্যে আল-বেরুনী হলের খেলার মাঠ ও গ্রন্থাগার ভবন রয়েছে। খেলার মাঠ নির্মাণের কাজ করছে আলম বিল্ডার্স, আর অনিক ট্রেডিং করপোরেশন নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান করছে গ্রন্থাগার ভবন নির্মাণের কাজ। তবে এ দুটি প্রতিষ্ঠান একই মালিকানাধীন বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১৮ ডিসেম্বর খেলার মাঠের নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন আল-বেরুনী হল ও শহীদ সালাম-বরকত হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। হল দুটির মাঝে খেলার মাঠের অবস্থান হওয়ায় দুই হলের ছাত্রলীগ নেতারা একসঙ্গে নির্মাণসংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে গিয়ে চাঁদা দাবি করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ছাত্রলীগের নেতাদের এ দাবি না মানা হলে কাজ করতে দেয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেয়া হয়।

অন্যদিকে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাজ্জাদুল ইসলাম সাজ্জাদ ও রাকিবুল ইসলাম সজিবের বিরুদ্ধে। তারা দুজনই মওলানা ভাসানী হলের আবাসিক ছাত্র এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

আল-বেরুনী হলসংলগ্ন মাঠের কাজ বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে উঠেছে তারা হলেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি মো. এনামুল হক এনাম, মাসুফ আহমেদ ও মো. আসাদুজ্জামান আসাদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরাফাত ইসলাম বিজয় ও সাংগঠনিক সম্পাদক চিন্ময় সরকার। তাদের মধ্যে এনাম ও মাসুফ জাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেলের এবং আসাদ, বিজয় ও চিন্ময় সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

এদিকে সম্প্রতি ‘চাঁদাবাজির টাকা ভাগাভাগি’ নিয়ে শহীদ সালাম-বরকত হলের এক জুনিয়র নেতাকে মারধরের অভিযোগ ওঠে হলটির এক জ্যেষ্ঠ নেতার বিরুদ্ধে। হলটির জুনিয়র নেতারা দাবি করেছেন, ‘চাঁদাবাজির’ সব অর্থ ভাগাভাগি করে নেন হলের জ্যেষ্ঠ নেতারা। ওই অর্থের কৈফিয়ত দাবি করেন হলটির ৪৫তম ব্যাচের নেতারা। এতে তাদের ওপর চড়াও হন সিনিয়ররা। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে ৪৫তম ব্যাচের এক নেতাকে চড় মারেন সিনিয়র এক নেতা।

নির্মাণসংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের এক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ বলেন, ‘আমাদের দুটি সাইটের কাজ বন্ধ রয়েছে। গত ১৮ ডিসেম্বর ভাসানী হলের কিছু ছাত্র এসে আমাদের কাজ করতে নিষেধ করে। তারা হল প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে কাজ করতে বলে। আমরা হল প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি, কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি। একই দিনে আল-বেরুনী হলের মাঠের কাজ বন্ধ করে দেন আল-বেরুনী ও শহীদ সালাম-বরকত হলের কয়েকজন নেতা। ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা সাইট ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে দেখা করে কাজ বন্ধ রাখতে বলেন এবং কিছু দাবিদাওয়ার কথা জানান। এ সময় তারা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের কোম্পানির শীর্ষ কর্তাদের ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে দেখা করতে বলেন। পুরো ঘটনা আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে অবহিত করেছি। তবে এখন পর্যন্ত আমাদের কাজ বন্ধ আছে।’

তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। হলের মাঠ নির্মাণকাজ বন্ধে অভিযুক্ত জাবি ছাত্রলীগের সহসভাপতি এনামুল হক বলেন, ‘হলের শিক্ষার্থীরা আমাদের কাছে কিছু সমস্যার কথা জানান। পরে আমরাও দেখেছি হলের কাজ করার ক্ষেত্রে নির্মাণ প্রতিষ্ঠান কোনো নিয়মনীতি মানছে না। তারা মাঠের কাজ করার ক্ষেত্রে কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনী রাখেনি। ধুলোবালিতে শিক্ষার্থীদের সমস্যা হচ্ছে। পরে আমরা আল-বেরুনী হল ও শহীদ সালাম-বরকত হলের নেতারা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দেখা করি এবং সব ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখতে বলি।’

আরেক সহসভাপতি সাজ্জাদুল ইসলাম সাজ্জাদ বলেন, ‘গ্রন্থাগারের কাজের কারণে বটতলার কিছু দোকানের খাবারে ধুলোবালি পড়ছে। বটতলার দোকানের সঙ্গে স্থায়ী একটা টয়লেট করা হয়েছে। যা সরানোর দাবি জানিয়েছে হলের শিক্ষার্থীরা। শুনেছি, হলের ছেলেরা কথা বলতে গিয়েছিল। এর বাইরে কিছু জানি না।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন বলেন, ‘এসব বিষয়ে (চাপের মুখে উন্নয়নকাজ বন্ধ) আমার জানা ছিল না। অভিযোগের সত্যতা পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আল-বেরুনী হল সংলগ্ন মাঠের কাজ দ্রুততার সঙ্গে চলছিল। কিন্তু কিছু কারণে কাজটি বন্ধ রয়েছে। ঠিক কী কারণে বন্ধ আছে আমি বলতে চাচ্ছি না। আপনারা সাংবাদিকরা অনুসন্ধান করলেই বুঝতে পারবেন কেন বন্ধ আছে। আমরা কাজটি দ্রুত চালু করতে চাই এবং কাজ সম্পন্ন করে হস্তান্তর করে দিতে চাই। কিন্তু এ ধরনের বাধা পেলে আমাদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম বলেন, ‘মাঠের কাজ বন্ধ আছে আমি জানি। তবে গ্রন্থাগারের ওখানে কাজ বন্ধ আছে এটা জানি না। আমি কথা বলে কাজ শুরুর ব্যবস্থা করছি।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
আগের নিয়মে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগারিক নিয়োগের দাবি - dainik shiksha আগের নিয়মে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগারিক নিয়োগের দাবি শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ - dainik shiksha শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ মাদকের গডফাদারদের ধরার নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার - dainik shiksha মাদকের গডফাদারদের ধরার নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার শিক্ষা প্রশাসনে বদলি আতঙ্কে নাহিদ-দীপু সিন্ডিকেটের ৯২ কর্মকর্তা - dainik shiksha শিক্ষা প্রশাসনে বদলি আতঙ্কে নাহিদ-দীপু সিন্ডিকেটের ৯২ কর্মকর্তা দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! - dainik shiksha দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই পক্ষের হাতাহাতি, সভা পণ্ড - dainik shiksha বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই পক্ষের হাতাহাতি, সভা পণ্ড শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে সর্বশেষ - dainik shiksha শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে সর্বশেষ অগ্রসর সমাজ তৈরির লক্ষ্যই বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন - dainik shiksha অগ্রসর সমাজ তৈরির লক্ষ্যই বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0057930946350098