ছাত্রীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের দায়ে অভিযুক্ত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষকের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ‘দায়মুক্তি পত্র’ লেখানোর অভিযোগ উঠেছে। পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান জনির বিরুদ্ধে চাকরির প্রলোভনে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন ও শিক্ষক নিয়োগে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগে তদন্ত কার্যক্রম চলছে। ভুক্তভোগী ওই বিভাগের ৪৩তম ব্যাচের ছাত্রী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন।
জানা যায়, গত বছরের ২৪ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরোনো প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় মাহমুদুর রহমান জনির উপস্থিতিতে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীকে দিয়ে দায়মুক্তি পত্র লেখানো হয়। সেখানে প্রক্টরিয়াল বডির দুই সদস্যও উপস্থিত ছিলেন। তবে জোরপূর্বক দায়মুক্তি পত্র লেখানোর খবর পেয়ে কয়েকজন সাংবাদিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। পরে ওই ছাত্রীকে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা আড়ালে নিয়ে যায়। এরপর ক্যাম্পাসের বাইরে নিয়ে সম্পূর্ণ দায়মুক্তি পত্র লেখানো হয়।
এদিকে গত ১৬ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর ২৪ নভেম্বরের দায়মুক্তি পত্র প্রত্যাহারের আবেদন করেন ওই ছাত্রী। এতে তিনি উল্লেখ করেন, মাহমুদুর রহমান জনি আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে নিয়ে যান। পরে কীভাবে দরখাস্ত লেখা যায়—সে বিষয়ে প্রক্টর স্যারের কাছে পরামর্শ নেওয়া হয়। প্রক্টর স্যার কিছু পয়েন্ট বলে দেন এবং গুছিয়ে লিখতে বলেন। এ ছাড়া আরেকজন সহকারী প্রক্টর মহিবুর রৌফ শৈবালও উপস্থিত ছিলেন। এ সময় কিছু সাংবাদিক প্রক্টর অফিসে চলে আসেন। তাই আমাকে বের করে শৈবাল স্যারের গাড়িতে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর বাকি লেখা সম্পন্ন করা হয়। পর দিন প্রক্টর স্যারের বাসায় আপনার (উপাচার্য) অনুমতিতে জমা দিই।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, আমি বিভিন্ন সময়ে পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনি এবং তার স্ত্রী পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নন্দিতা সরকারের দ্বারা শারীরিক ও মানসিক এবং সর্বশেষ সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন ও নির্যাতিত হয়েছি। সামাজিক নির্যাতনের ক্ষেত্রে নন্দিতা সরকারের সম্পূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন পরবর্তী বিয়ের প্রলোভনের বিষয়ে তিনি বলেন, সম্পর্কের বিষয়টি স্বীকার না করার শর্তে জনি আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখায়। সামাজিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দেয়। পরে আমার থেকে উপাচার্য বরাবর চার পৃষ্ঠার একটি দায়মুক্তি পত্র লিখিয়ে নেয় এবং যথারীতি সে একজন প্রতারক। তার প্রতারণা এরপরেও অব্যাহত থাকে। এমতাবস্থায় সব সত্য বিষয়গুলো আমি সবার সামনে আনতে চাই।
ভুক্তভোগী ছাত্রীকে নির্যাতনের বিষয়ে নন্দিতা সরকার বলেন, ওই নারী যেহেতু আমার বিষয়ে কোথাও আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করেননি, তাই আমি এ ব্যাপারে কথা বলব না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাহমুদুর রহমান জনি বলেন, আমি কাউকে জোরপূর্বক কোনো পত্র লেখাইনি। ‘দায়মুক্তি পত্র’ শব্দটি এই প্রথম শুনছি। সে অভিযোগ প্রত্যাহার করলে সেটি একান্তই তার ব্যক্তিগত বিষয়। আমার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক কোনো কিছু লেখানোর অভিযোগ সম্পূর্ণ অসত্য।
অভিযোগের বিষয়ে সহকারী প্রক্টর মহিবুর রৌফ শৈবাল বলেন, তাকে দিয়ে জোরপূর্বক দায়মুক্তি পত্র লেখাতে যাব? আমার উপস্থিতিতে সে নিজেই প্রক্টরের বাসায় গিয়ে দায়মুক্তি পত্র জমা দিয়েছে।
‘চাপ প্রদানের’ অভিযোগ অস্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, চাপে ফেলে কাউকে কোনো কিছু লেখায়নি এবং কী লিখেছে, কী লেখেনি আমি কোনো কিছুই জানি না এ ছাড়া লেখার সময়ও আমি ছিলাম না।
উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম বলেন, দায়মুক্তি পত্র পেয়েছি। কিন্তু ভুক্তভোগী সরাসরি আমাকে দেয়নি। তাই আমি এটি নিয়ে কাউকে কিছু বলব না।