ঝালকাঠীর নলছিটির বিকেসিএস নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ধর্মীয় শিক্ষক ছিলেন আনোয়ার হোসেন। জালিয়াতি করে নিয়োগ ও এমপিওভুক্ত হওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বরখাস্ত হয়ে এমপিও হারান ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবরে। সেই থেকে তিনি আর শিক্ষক নন। কিন্তু গত ১৭ ডিসেম্বর থেকে নতুন শিক্ষাক্রমের এক সপ্তাহের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলা সদরের গালর্স হা্ইস্কুল প্রশিক্ষণ ভেন্যুতে।
আনোয়ারের মতো একই স্কুলের আরো দুজন জালিয়াত শিক্ষকও প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। প্রশিক্ষক্ষণের সম্মানী পাওয়ার চূড়ান্ত তালিকায়ও নাম রয়েছে তাদের।
এই তালিকা তৈরিতে যুক্ত শিক্ষা অফিসের কর্মচারীরা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে নাম ও পরিচয় না প্রকাশের শর্তে তারা বলেছেন, স্যারের চাকরি আছে আর তিন মাস, তাই শেষ সময়ে কামাচ্ছেন।
এই স্যার হলেন- উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এমডি আবুল বাসার তালুকদার। যার বিরুদ্ধে অনিয়মের এন্তার অভিযোগ রয়েছে।
দৈনিক আমাদের বার্তার অনুসন্ধানে জানা গেছে, জালিয়াত ও অশিক্ষকের শিক্ষক প্রশিক্ষণ নেয়ার এমন শত শত উদাহরণ আছে সারাদেশে। জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসের এক শ্রেণির কর্মকর্তা ও কর্মচারি, এমপির দালাল, অনিয়মে সব্যসাচী প্রতিষ্ঠান প্রধান ও সভাপতির চক্র এসব অপকর্মের নেপথ্যে রয়েছে। এর ফলে একদিকে সরকারি অর্থের দেদার অপচয় হচ্ছে, অপরদিকে নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে অপপ্রচার করার সুযোগ বাড়ছে।
কুমিল্লার মুরাদনগর থেকে দৈনিক আমাদের বার্তার প্রতিনিধি জানান, উপজেলায় ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের অষ্টম ও নবম শ্রেণির নতুন শিক্ষাক্রমের প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে। শুধু শিক্ষকদের এই প্রশিক্ষণ নেওয়ার কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠান প্রধান ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের সহায়তায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন নাইটগার্ড ও অফিস সহায়করাও।
গত বুধবার মুরাদনগর উপজেলা শহরের নূরুন্নাহার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময় ধরা পড়েন কাজিয়াতল দক্ষিণপাড়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার নাইটগার্ড আরিফুল ইসলাম। এ সময় একই মাদ্রাসার অফিস সহায়ক মিজানুর রহমানসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের অন্তত ১০ জন শিক্ষক না হওয়ায় প্রশিক্ষণ ছেড়ে পালিয়ে যান।
এ বিষয়ে কথা হয় কাজিয়াতল দক্ষিণপাড়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে। দৈনিক আমাদের বার্তাকে তিনি বলেন, আমার মাদরাসায় সাতজন শিক্ষক রয়েছেন। তাই বাধ্য হয়ে নাইটগার্ড আরিফ ও অফিস সহায়ক মিজানকে দিয়ে গণিতসহ বিভিন্ন ক্লাস নিতে হয়। এই বিষয়টি আমি মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসকে জানিয়েছি। যেহেতু তারা ক্লাস নেন, সে জন্য অফিসকে জানিয়ে আমি তাদের প্রশিক্ষণের অনুমতি দিয়েছি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষক দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের অফিস সহায়ক গোলাম মোস্তফার সঙ্গে আঁতাত করে ওইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা এ ধরনের অপকর্ম করতে সাহস পেয়েছেন। সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে প্রশিক্ষণের অনুমতি দেওয়ার দায়িত্ব ছিলো তাঁর।
তবে আঁতাতের অভিযোগ অস্বীকার করে গোলাম মোস্তফা বলেন, আমাদের এখানে প্রায় ১ হাজার ১০০ শিক্ষক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। শিক্ষক সংখ্যা বেশি হওয়ায় আমরা যাচাই-বাছাই করতে পারিনি। প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা যে তালিকা দিয়েছেন, সেটির ওপর নির্ভর করেই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। শুরু থেকেই আমরা সতর্ক আছি।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী ফরিদ আহমেদের ভাষ্য, বিষয়টি দুঃখজনক। আমি নিজেও প্রতিটি প্রশিক্ষণ কক্ষে গিয়ে শিক্ষকদের সতর্ক করেছি। যেসব ব্যক্তি শিক্ষক না হয়েও এখানে প্রশিক্ষণ নিতে এসেছেন, তাদের এবং তাদের প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুস সামাদ শিকদার দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, বিষয়টি জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, দেশের ৪৭৭টি উপজেলায় অষ্টম-নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বিস্তরণে শিক্ষক প্রশিক্ষণ চলছে। ইআইআইএন-ধারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা এ প্রশিক্ষণ পাচ্ছেন। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে। প্রশিক্ষণে অংশ নেয়া প্রত্যেক শিক্ষক ৭ হাজার ২৮০ টাকা সম্মানী পাচ্ছেন। আর প্রশিক্ষণ করানো মাস্টার ট্রেইনাররা ক্ষেত্র বিশেষে ১৮ হাজার ২৭০ টাকা থেকে সাড়ে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত পাবেন। এ টাকা শিক্ষক-প্রশিক্ষকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হবে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, এমন যতো অভিযোগ পেয়েছি, সবগুলোই তদন্তসাপেক্ষে শাস্তিমূলক ব্য
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।