জাল সনদে ফরিদপুরের বিভিন্ন বেসরকারি স্কুল-কলেজে নিয়োগ পাওয়া ১০ জন শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ফেরত দিতে হবে বেতন বাবদ নেয়া টাকা। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করারা নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, ফরিদপুরের জাল সনদধারী শিক্ষকদের মধ্য তিনজন কলেজে ও সাতজন স্কুলের কর্মরত আছেন।
ফরিদপুরে যে দশটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দশ শিক্ষকের জাল সনদের প্রমাণ পাওয়া গেছে এর মধ্যে সাতজন শিক্ষক এমপিওভুক্ত। তারা সরকারি বেতন তুলেছেন। বাকি তিন শিক্ষক ননএমপিও। তারা কোনো সরকারি আর্থিক সুবিধা পাননি। ভুয়া সনদে এমপিওভুক্ত হওয়া ওই সাত শিক্ষক মোট বেতন বাবদ সরকারি তহবিল থেকে ৩৫ লাখ ২৯ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
জাল সনদধারী এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মধ্যে সালথা কলেজের শরীরচর্চা বিষয়ের শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসকে ২ লাখ ৫৬ হাজার টাকা, বোয়ালমারীর হাসামদিয়া ইউনাইটেড উচ্চ বিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী শিক্ষক নারায়ণ চন্দ্র সাহাকে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা, ফরিদপুর সদরের বাখুন্ডা উচ্চ বিদ্যালয়ের কৃষি শিক্ষা বিষয়ের সহকারী শিক্ষক আকলিমা খানমকে ১১ লাখ ২৪ হাজার টাকা, ফরিদপুর মহাবিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক নরেশ চন্দ্র মন্ডলকে ৩ লাখ ৪১ হাজার টাকা, নগরকান্দার এম এন একাডেমির সমাজ বিষয়ের সহকারী শিক্ষক জেসমিন খানমকে ৫ লাখ ৩৪ হাজার টাকা, সালথার ফুলবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিষয়ের সহকারী শিক্ষক গীতা বিশ্বাসকে ৬ লাখ ৩ হাজার টাকা ও নগরকান্দার চাঁদহাট বাজার উচ্চবিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিষয়ের শিক্ষক কামরুন নাহারকে ৫ লাখ ৩৪ হাজার ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ননএমপিও তিন জাল সনদধারী শিক্ষক হলেন, জেলার মধুখালীর আখচাষী মহিলা ডিগ্রি কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রভাষক মো. আবুল হাসান মিয়া, আলহাজ্ব এম এ আজিজ হাইস্কুলের কম্পিউটার বিষয়ের সহকারী শিক্ষক মো. জাকির হোসেন ও চরভদ্রাসনের হরিরামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. সোহেল রানা।
জানা গেছে, জাল সনদধারীদের বিরুদ্ধে সাত ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে অবৈধভাবে গ্রহণ করা বেতন সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া, যারা অবসরে গেছেন তাদের অবসর সুবিধা বাতিল করা, স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়া শিক্ষক-কর্মচারীদের আপত্তির টাকা প্রধান শিক্ষক বা অধ্যক্ষের মাধ্যমে আদায় করা, জাল সনদধারীদের নিয়োগ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে বলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ।
পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) যাচাইয়ে এসব জাল সনদধারী শিক্ষক-কর্মচারী চিহ্নিত করা হয়েছিলেন। এরপর গত ফেব্রুয়ারিতে সনদ প্রদানকারী দপ্তর প্রধান বা প্রতিনিধির সমন্বয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের সনদ যাচাই করে জাল সনদের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়।
ফরিদপুর মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ বিমল চন্দ্র বিশ্বাস দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক নরেশ চন্দ্রের বিরুদ্ধে ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের অডিটে কাগজপত্র জালের প্রমাণ পাওয়া যায়। সনদ জাল হওয়ার কারণে তার চাকরি গেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে এ ব্যাপারে পরবর্তী উদ্যোগ নেয়া হবে।
সালথা কলেজের অধ্যক্ষ কৃষ্ণ চন্দ্র বর্মণ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমাদের কলেজের শিক্ষক স্বপন কুমারের জাল সনদের বিষয়টি ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে অডিটে উঠে আসে। তার সনদ জাল হওয়ায় তার বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেয়ায বিষয়েটি মৌখিকভাবে জেনেছি। কাগজপত্র পাওয়ার পর মন্ত্রণালয়ের নির্দেশমত ব্যবস্থা নেয়া হবে।