দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের বৈধভাবে যত সনদ ও নম্বরপত্র তৈরি হয়েছে, অবৈধভাবে হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি। আর এসব জাল সনদ তৈরির কারখানা রাজধানীর পল্টনে। এর সঙ্গে জড়িত আরও একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
ডিবির এসআই অঞ্জন কুমার তালুকদার বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার খিলগাঁও থানায় মামলাটি করেন। ওই মামলায় কামরুল হাসান আবেদ (২৮) নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলায় কারিগরি শিক্ষা বোর্ডর ৫-৬ জনসহ অজ্ঞাতপরিচয় ৬-৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। কামরুল হাসানের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার নাঙ্গলকোট থানার বেলটায়, তার বাবার নাম মৃত আইনুল হক।
খিলগাঁও থানার ওসি সালাউদ্দিন মিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মামলাটি তদন্ত করবে ডিবি লালবাগ বিভাগ।
ডিবি সূত্র জানায়, চক্রের সদস্যরা জাল সনদ-নম্বরপত্রের কাগজ কিনে ফকিরাপুল থেকে। আর সার্টিফিকেট-মার্কশিটের গ্রাফিক্স তৈরি হয় খিলগাঁওয়ের একটি বাসায়। ওই বাসার অবস্থান খিলগাঁও থানার পূর্ব গোড়ান ১০ নম্বর গলিতে। সেখান থেকেই গ্রেফতার করা হয় কামরুল হাসান আবেদকে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জাল সনদ চক্রের বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।
এর আগে ১ এপ্রিল রাজধানীর পীরেরবাগ থেকে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম এনালিস্ট শামসুজ্জামানকে গ্রেফতার করে ডিবি। তার সঙ্গে গ্রেফতার করা হয় বোর্ডের চাকরিচ্যুত ও বর্তমানে শামসুজ্জামানের ব্যক্তিগত বেতনভুক্ত সহকারী ফয়সালকে। এর পরই ব্যাপক আলোচনায় আসে সনদ জালিয়াতির বিষয়টি। চক্রের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান আল আকবর খানের স্ত্রী সেহেলা পারভীনসহ কয়েকজনকে। গ্রেফতারদের মধ্যে পাঁচজনই ইতোমধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। স্ত্রীকে গ্রেফতারের পর সরিয়ে দেওয়া হয় প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আলী আকবর খানকে। পরে ডিবি কার্যালয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় আলী আকবর খান এবং প্রতিষ্ঠানটির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কেফায়েতুল্লাহকে। এই দুজন এখন ডিবির নজরদারিতে আছেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, খিলগাঁও থানার পূর্ব গোড়ান ১০ নম্বর গলির একটি বাসায় কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের জাল সনদ ও নম্বরপত্রের ব্যাকগ্রাউন্ড তৈরির খবর পেয়ে সেখানে অভিযান চালায় ডিবি। বাসার দরজা নক করার পর এক ব্যক্তি দরজা খোলেন। তিনি ডিবিকে জানান, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড তাকে ৫০০ পিস সার্টিফিকেটের ব্যাকগ্রাউন্ড ও ৫০০ পিস মার্কশিটের ব্যাকগ্রাউন্ড তৈরির ক্ষমতাপত্র দিয়েছে বলে দাবি করেন। তিনি একটি অনুমতিপত্রও দেখান। সেখানে বোর্ডের লোগো আছে। এতে বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কেফায়েতুল্লাহর নাম ও স্বাক্ষর রয়েছে।
কিন্তু এই অনুমতিপত্রে গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয় উল্লেখ নেই। এ কারণে বিষয়টি জাল বলে সন্দেহ হয় ডিবির। পরে ডিবি তাৎক্ষণিকভাবে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কেফায়েতুল্লাহকে ফোন করে। তিনি ডিবিকে জানান, তারা বিজি প্রেস ছাড়া কোথাও থেকে বোর্ডের সার্টিফিকেট, মার্কশিট এমনকি কোনো দাপ্তরিক কাগজপত্র প্রিন্ট করেন না। এরপর কামরুল হাসান আবেদকে গ্রেফতার করে ডিবি। পরে ওই বাসায় তল্লাশি চালিয়ে ৫ পিস সার্টিফিকেট ব্যাকগ্রাউন্ড ও ৫ পিস মার্কশিট ব্যাকগ্রাউন্ড উদ্ধার করা হয়। এছাড়া ১০ পিস জাল সার্টিফিকেট ও মার্কশিট, একটি কম্পিউটার সিপিইউ, মনিটর, কিবোর্ড, মাউস ও তিনটি হার্ডডিস্ক জব্দ করা হয়।
ডিবির ডিসি (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) গ্রেফতার কামরুল হাসান আবেদের বক্তব্যের বরাত দিয়ে জানান, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের লোক পরিচয়ে ৫-৬ জন ব্যক্তি তাকে ওই অনুমতিপত্র দিয়েছে। তার আরও ছয়-সাতজন সহযোগী আছে বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে। এসআই আবু বক্কর ছিদ্দিক মামলাটি তদন্ত করবেন।