জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক: কারিগরি বোর্ডের সনদ জালিয়াতির ঘটনায় দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। কারিগরি বোর্ড কর্তৃক নার্সিং বিষয়ে সনদ জালিয়াতির ঘটনা নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। ডাক্তার, নার্স ও রোগীদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা বিরাজ করছে। এর মধ্যে কারিগরি বোর্ডের সনদ জালিয়াতির ঘটনায় গ্রেফতারকৃতরা প্রকাশ করেছেন তারা কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট বিষয়ে জাল সনদ বিক্রি করেছেন। তবে এই সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। শনিবার (২৭ এপ্রিল) দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন আবুল খায়ের।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়,  গ্রেফতারকৃতদের ফের রিমান্ডে আনছেন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এই হেলথ টেকনোলজিস্ট ও নার্সিংয়ের জাল সনদ কেলেংকারির সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক  কর্মকর্তা, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের একাধিক কর্মকর্তা, নার্সিং অধিদপ্তরের একাধিক সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তা জড়িত।

গ্রেফতারকৃতদের তথ্য ও গোয়েন্দাদের অনুসন্ধানে এবং  স্বাস্থ্য বিভাগের বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত অনেক কর্মকর্তা এই বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত। তারা বলেন, কারিগরি বোর্ডের আধীনে এই বিতর্কিত সনদ নিয়ে নার্সিং কাউন্সিল থেকে তাদের রেজিস্ট্রেশন দেওয়ার জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছিলো। ওই কমিটিতে নার্সিং অধিদপ্তরের সাবেক একজন শীর্ষ কর্মকর্তা, নার্সিং কাউন্সিলের একাধিক বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা এবং নার্সিংয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা এবং একজন বিতর্কিত নার্স নেতাও রয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে তারা আর্থিক লাভবানের জন্য সনদ দেওয়ার এই প্রক্রিয়া অনুসরন করেছেন।

নার্সিং কাউন্সিলের একাধিক সত্ কর্মকর্তা এই বিষয়টি গ্রহন করতে রাজি নয়। তবে তারা ছয় মাসের পরীক্ষায় পাস করলেও তাদের এখনো কোন রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়নি। কারন তাদের কাছে জালিয়াতির বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত। তবে যেই কমিটির জোর সুপারিশে রেজিস্ট্রেশন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তারা আর্থিক লাভবানের পাশাপাশি পদোন্নতিও পেয়েছেন। এদের ২/১ জন ছাড়া সবাই অবসরে গেছেন।

কারিগরি বোর্ডের জাল সনদ জালিয়াতির ঘটনায় কুষ্টিয়ার সদরের স্থানীয় এক নেত্রী  আওয়ামী লীগের পরিচয় দেন। তিনি এই জাল চক্রের হোতা। স্থানীয় পর্যায়ে খোজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের কেউ নন। বর্তমানে কথিত ওই নেত্রী কলি জেল হাজতে রয়েছেন। এই নেত্রীসহ গ্রেফতারকৃতদের পাচজন কারিগরি বোর্ডের সনদ জালিয়াতি থেকে শুরু করে নার্সিং ও মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের সম্পর্কে ডিবির কর্মকর্তাদের নানা তথ্য দিয়েছেন। ডিবির কর্মকর্তারা স্বীকারোক্তি ও তথ্য অনুসন্ধান করে নিশ্চিত হয়েছেন যে, তারা নার্সিংয়ের পর হেলথ টেকনোলজিস্টদের সনদ জালিয়াতি করেছেন। তবে গ্রেফতারকৃতদের তথ্য অনুযায়ী কয়েক হাজার টেকনোলজিস্টের জাল সনদ বিক্রি করেছেন। এই বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগে চরম উদ্বিগ্ন দেখা দিয়েছে। তারা বলেন, চিকিত্সা সেবায় নৈরাজ্যজনক ঘটনা এটা। বর্তমান স্বাস্থ্য মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন একজন ক্লিন ইমেজের লোক। তিনি শক্তহাতে এই বিষয়টিকে নিয়ন্ত্রণ করবেন বলে আশা প্রকাশ করছেন। মন্ত্রীও এই বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।

জাল সনদ নিয়ে টেকনোলজিস্টদের সিংহভাগই রয়েছেন বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়োজিত। সরকারি পর্যায়ে তাদের সংখ্যা একেবারেই নগণ্য। বর্তমানে অহরহ ভুল চিকিত্সায় রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় বিশেষ করে বেসরকারি হাসপাতালে বেশি হচ্ছে। এটার অন্যতম কারন হচ্ছে এ ধরনের হাতুড়ি মার্কা টেকনোলজিস্টরা।

ডিসি ডিবি মশিউর রহমান বলেছেন, কারিগরি বোর্ডের সনদ জালিয়াতির ঘটনায় গ্রেফতারকৃত হেলথ টেকনোলজিস্টদের জাল সনদ বিক্রি করেছে অনেকের কাছে। তাদের আবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে আনা হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বর্তমান ও সাবেক একাধিক উর্দ্ধতন কর্মকর্তা বলেছেন, কারিগরি বোর্ডের অধীনে সনদ নিয়ে হেলথ টেকনোলজিস্টদের বেশ কিছু সংখ্যক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে নিয়োগ পরীক্ষা অংশ গ্রহন করতে কয়েক দফা আসছিলো। সাবেক ওই উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের দৃঢ়তার কারনে কারিগরি বোর্ডের সনদ নিয়ে আসা টেকনোলজিস্টরা নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। সাবেক ওই উর্দ্ধতন কর্মকর্তা কারিগরি বোর্ডকে জানিয়ে দিয়েছেন যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীন ইনস্টিটিউট অফ হেলথ টেকনোলজি থেকে পাস করা সনদ ব্যতীত কোন টেকনোলজিস্টকে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব নয়। উচ্চ আদালত থেকেও তারা হেরে যায়। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পদটি অত্যন্ত সংবেদনশীল। সঠিক চিকিত্সার পূর্ব শর্ত হলো সঠিকভাবে রোগ নির্ণয়। এই কাজটি মূলত করে থাকেন হেলথ টেকনোলজিস্টরা। এ কারনে মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের দক্ষ ও অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত হতে হয়। চিকিত্সা শিক্ষা সংক্রান্ত সকল কোর্স স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হওয়ার বিষয়টি সরকারের নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে। এই নীতিমালাকে উপেক্ষা করে কারিগরি বোর্ড ২০০৬ সাল থেকে তিন থেকে ছয় মাস এবং এক বছর থেকে তিন বছর পর্যন্ত মেডিকেল টেকনোলজিস্ট কোর্স পরিচালনা শুরু করে দেয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেন, বিশেষায়িত এই কোর্সটি পরিচালনার মত অবকাঠামো এবং মেডিকেল বিষয়ে যোগ্য ও অভিজ্ঞ জনবল এবং হাসপাতাল কোনটাই নেই কারিগরি বোর্ডের।  অসৎ উদ্দেশ্যে সার্টিফিকেট বাণিজ্যের লক্ষ্যে এই কোর্সটি চালু করেছেন। তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে গত বছর কারিগরি বোর্ডের সনদ প্রাপ্ত কিছু সংখ্যক হেলথ টেকনোলজিস্ট নিয়োগ পেয়েছে। এর আগে তাদের কোন নিয়োগ দেওয়া হয়নি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে আটটি সরকারি ও ত্রিশটি বেসরকারি মেডিকেল টেকনোলজি ইনস্টিটিউট রয়েছে। বর্তমানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে ছয় সহস্ত্রাধিক টেকনোলজিস্ট নিয়োজিত রয়েছে। প্রশিক্ষণ নিয়ে অভিজ্ঞ ১৮ হাজার টেকনোলজিস্ট চাকরির অপেক্ষায় রয়েছেন। যদিও সরকারি হাসপাতালগুলোতে হেলথ টেকনোলজিস্টদের চাহিদা রয়েছে ব্যাপক। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রশিক্ষিত হাজার হাজার টেকনোলজিস্ট রয়েছেন সেখানে কারিগরি বোর্ডের অধীনে অনভিজ্ঞদের নেওয়ার কারন কি?


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি - dainik shiksha ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ অষ্টম পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষায় সরকারকে সহযোগিতা করবে ইউএনএফপিএ - dainik shiksha অষ্টম পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষায় সরকারকে সহযোগিতা করবে ইউএনএফপিএ ইসরায়েলকে বোমা পাঠানো বন্ধ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র - dainik shiksha ইসরায়েলকে বোমা পাঠানো বন্ধ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে - dainik shiksha ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! - dainik shiksha ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল - dainik shiksha জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027899742126465