দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক: শহীদ জননী জাহানার ইমামের জন্মদিন আজ। তিনি ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে মুর্শিদাবাদ জেলার সুন্দরপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক নাম জুড়ূ। জাহানারা ইমামের বাবা সৈয়দ আবদুল আলী ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। মা সৈয়দা হামিদা বেগম।
মুক্তিযুদ্ধে তার ছেলে রুমী শহীদ হন, স্বামী শরিফ ইমামও মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে অসুস্থ হয়ে বিনা চিকিৎসায় মারা যান। বিজয় লাভের পর রুমীর বন্ধুরা জাহানারা ইমামকে সব মুক্তিযোদ্ধার মা হিসেবে বরণ করে নেন। এক সন্তান হারিয়ে সারাদেশের সব মুক্তিযোদ্ধার জননী হয়ে উঠেছিলেন তিনি। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করার ক্ষেত্রে জাহানারা ইমামের অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে। জাহানারা ইমামের লেখা ‘একাত্তরের দিনগুলি’ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম দলিল।
উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত জাহানারা ইমাম ময়মনসিংহে বিদ্যাময়ী বালিকা বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজে শিক্ষকতা করেন। এ ছাড়া কিছুদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটেও খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করেন।
১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ ডিসেম্বর গোলাম আযমকে জামায়াতে ইসলামী তাদের দলের আমীর ঘোষণা করলে বাংলাদেশে জনবিক্ষোভের সূত্রপাত হয়। বিক্ষোভের অংশ হিসাবে ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ জানুয়ারি ১০১ সদস্যবিশিষ্ট একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠিত হয় জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে। তিনি হন এর আহ্বায়ক। এর পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী প্রতিরোধ মঞ্চ, ১৪টি ছাত্র সংগঠন, প্রধান প্রধান রাজনৈতিক জোট, শ্রমিক-কৃষক-নারী এবং সাংস্কৃতিক জোটসহ ৭০টি সংগঠনের সমন্বয়ে পরবর্তীতে ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৯২ ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি’ গঠিত হয়।
সর্বসম্মতিক্রমে এর আহ্বায়ক নির্বাচিত হন জাহানারা ইমাম। এই কমিটি ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ মার্চ গণ-আদালত-এর মাধ্যমে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একাত্তরের নরঘাতক গোলাম আযমের ঐতিহাসিক বিচার অনুষ্ঠান করে। গণআদালাতে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে দশটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উত্থাপিত হয়। ১২ জন বিচারক সমন্বয়ে গঠিত গণআদালতের চেয়ারম্যান জাহানারা ইমাম গোলাম আযমের ১০টি অপরাধ মৃত্যুদন্ডযোগ্য বলে ঘোষণা করেন।
দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ জুন তিনি যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে মারা যান। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষের কাছে জাহানারা ইমাম দেশপ্রেম, ত্যাগ ও সংগ্রামের এক অনন্য প্রেরণার উৎস হিসেবে আজও অবিস্মরণীয়।