নাটোরের ঐতিহ্য কাঁচাগোল্লা পেল ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি। বৃহস্পতিবার নাটোরের কাঁচাগোল্লাকে দেশের ১৭তম জিআই পণ্যের স্বীকৃতি দিয়ে চিঠি দেয়া হয়। নাটোরের কাঁচাগোল্লা প্রায় আড়াই শ’ বছর ধরে একই স্বাদ ও ঘ্রাণ নিয়ে টিকে আছে।
পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরের (ডিপিডিটি) কাঁচাগোল্লাকে স্বীকৃতি দিয়ে গত ৭ জুলাই একটি নিবন্ধ প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, নাটোরের পানি, দুধ ও তৈরির বিশেষ প্রক্রিয়া ছাড়া নাটোরের কাঁচাগোল্লার আদি বৈশিষ্ট্য ধরে রাখা যায় না। নাটোরের সীমানা পেরিয়ে এর সুখ্যাতি সারা দেশে তো বটেই, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
কাঁচাগোল্লার জিআই নিবন্ধনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন নাটোরের সাবেক ও বর্তমানে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ। গত ৩০ মার্চ হলফনামা সম্পাদনের মাধ্যমে ডিপিডিটিতে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। ৮ আগস্ট কাঁচাগোল্লার জিআই স্বীকৃতি অনুমোদন করা হয়।
কোনো একটি দেশের নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের মাটি, পানি, আবহাওয়া ও সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা এবং সেখানকার জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি যদি কোনো একটি পণ্য উৎপাদনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তাহলে সেটিকে সেই দেশের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়।
নাটোরের ঐতিহ্যবাহী কাঁচাগোল্লার মূলত কোনো নির্দিষ্ট আকার নেই। তবে দীর্ঘদিন ধরে বিকৃত আকারে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ‘কাঁচাগোল্লা’ নামে মিষ্টি বিক্রি হতো। তবে এ নিয়ে নাটোরবাসীর করণীয় কিছুই ছিলো না। গত ফেব্রুয়ারিতে দেশের প্রসিদ্ধ একটি খাদ্যপণ্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান নাটোরে তাদের বিক্রয়কেন্দ্রে গোলাকার কাঁচাগোল্লা বিক্রি শুরু করে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়।
নাটোরের সুধীমহল থেকে কাঁচাগোল্লা বিকৃত করার বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়। এ অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে কাঁচাগোল্লার জিআই সনদ নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। জিআই স্বীকৃতির পর এই বিকৃত উৎপাদন বন্ধ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
দেশের প্রথম ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (জিআই) হিসেবে নিবন্ধন পায় জামদানি। এরপর একে একে ঢাকাই মসলিন, রাজশাহীর সিল্ক, রংপুরের শতরঞ্জি, নেত্রকোনার বিজয়পুরের সাদা মাটি, দিনাজপুরের কাটারিভোগ, বাংলাদেশি কালিজিরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ক্ষীরশাপাতি আম, ইলিশ, বাগদা চিংড়িসহ ১৭টি পণ্য জিআই সনদ পায়। আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ববিষয়ক সংস্থা ওয়ার্ল্ড প্রোপার্টি রাইটস অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউআইপিও) নিয়ম মেনে ডিপিডিটি এই স্বীকৃতি ও সনদ দিয়ে থাকে।