এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া মাদারীপুরের শিবচরের অস্বচ্ছল ছাত্রী সুমাইয়া আক্তারের লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়েছেন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী। তিনি সুমাইয়ার বাড়িতে মিষ্টি পাঠিয়েছেন। মাদবরচর ইউনিয়নের লপ্তিকান্দি গ্রামের দরিদ্র ভ্যানচালক মো. হবি মোল্লা ও তাসলিমা বেগমের মেয়ে সুমাইয়া জিপিএ-৫ পেলেও আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে কলেজে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিলো। তবে চিফ হুইপ সুমাইয়ার কলেজে লেখাপড়ার দায়িত্ব নেয়ায় ভর্তির সব অনিশ্চয়তা কেটে গেছে।
এছাড়া তার পরিবারের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ঘরের ব্যবস্থারও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুনির চৌধুরী পরিবারটির জন্য সেলাই মেশিন ও মেধাবৃত্তির ঘোষণা দিয়েছেন।
জানা যায়, শিবচর উপজেলার মাদবরচর ইউনিয়নের লপ্তিকান্দি গ্রামের দরিদ্র ভ্যানচালক মো. হবি মোল্লা ও তাসলিমা বেগমের চার সন্তানের তৃতীয় মেয়ে সুমাইয়া আক্তার। পদ্মা নদীর ভাঙাগড়ার খেলায় সর্বস্ব হারিয়ে চরজানাজাত থেকে এ এলাকায় এসে বছরে পাঁচ হাজার টাকা খাজনায় এক টুকরো জমি ভাড়া নিয়ে দোচালা ঘর তুলে পরিবারটি বাস করছে। দিন এনে দিন খাওয়া পরিবারটির কাছে লেখাপড়া স্বপ্নের মতো হলেও সুমাইয়ার ছিল অদম্য ইচ্ছা শক্তি। তিনি প্রতিদিন আধা ঘণ্টার পথ পায়ে পায়ে হেঁটে পাঁচ্চর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে যেতেন। নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় মা-বাবা বিয়ে ঠিক করলে দমানো যায়নি সুমাইয়াকে। প্রধান শিক্ষকের কাছে আশ্রয় নিয়ে তার সহায়তায় চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। ফরম পূরণের টাকাও দেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। সুমাইয়ার জীবন সংগ্রাম ও কলেজের ভর্তির অনিশ্চয়তার কথা জানতে পেরে গতকাল সোমবার সকালেই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী।
গতকাল সোমবার বিকেলে সুমাইয়ার বাড়িতে চিফ হুইপের পক্ষ থেকে মিষ্টি নিয়ে যান জেলা পরিষদ সদস্য আয়শা সিদ্দিকা মুন্নী, প্রেসক্লাব সভাপতি একেএম নাসিরুল হক, প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ সামসুল হকসহ একটি প্রতিনিধি দল।
সুমাইয়ার মা তাসলিমা বেগম বলেন, ‘আমাগো সংসার চালাইতেই কষ্ট হইতো। অন্যের দেয়া শাড়ি পইড়া জীবন কাটতো। মাইয়ারে পড়ানো দুঃস্বপ্ন ছিলো। সব অনিশ্চয়তা কাইটা গেছে। মেয়েডা কলেজে পড়বো। আমাগো এমপির জন্য সব হইলো।’
পাঁচ্চর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ সামসুল হক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে চিফ হুইপ মহোদয় আমাকে দুইবার ফোন দিয়ে ওর সব জেনেছেন। তাৎক্ষণিকভাবে ওর লেখাপড়া, আবাসনসহ সব ব্যাপারে অবগত হয়ে এর সুব্যবস্থা করেছেন। এর আগেও চিফ হুইপ মহোদয় বহু অদম্য দরিদ্র মেধাবীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
জেলা পরিষদ সদস্য আয়শা সিদ্দিকা মুন্নী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, চিফ হুইপ মহোদয় সুমাইয়ার ভালো ফলে খুশি হয়ে বাড়িতে আমাদের দিয়ে মিষ্টি পাঠিয়েছেন। কলেজে লেখাপড়ার ব্যবস্থা করেছেন। এছাড়া তার পরিবারের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ঘরের ব্যবস্থার নির্দেশনা দিয়েছেন। এছাড়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পরিবারটিকে সেলাই মেশিন ও মেধাবীর জন্য মেধাবৃত্তি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।