জিপিএ-৫ বিক্রি: ফিরে দেখা রিপোর্ট

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

বছর ছয়েক আগের ঘটনা। শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা অদ্বৈত কুমারের জিপিএ-৫ ব্যবসা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলো দৈনিক শিক্ষাডটকম। শিক্ষাবোর্ড তখন ওই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার পক্ষ নিয়ে দৈনিক শিক্ষার প্রতিবেদনের আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়েছিলো। যদিও তার কয়েক মাস পরে তদন্তে জিপিএ ৫ বিক্রির অভিযোগ প্রমাণিত হয়। কিন্তু, জিপিএ ৫ কেনার অভিযোগে কেবল দুটি কলেজকে দণ্ড দিয়ে দায় সারে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। আর জিপিএ ৫ ব্যবসায়ী শিক্ষা বোর্ড কর্মকর্তা থেকে যান বহাল তবিয়তে। আজ সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ে এইচএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশের দিনে এ বিষয়ক দুটি রিপোর্টই দৈনিক আমাদের বার্তার পাঠকদের সামনে তুলে ধরা হলো-

পাঁচ লাখ টাকায় জিপিএ ৫ বিক্রি করেন শিক্ষা ক্যাডারের অদ্বৈত কুমার

৭ জুন, ২০১৮ (দৈনিক শিক্ষাডটকম): ফের জিপিএ ফাইভ বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এবার অভিযোগের তীর ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অদ্বৈত কুমার রায় ও রাজধানীর একটি শিক্ষা মাফিয়া চক্রের দিকে। চক্রের একজন সদস্য রাজধানীর উত্তরা ন্যাশনাল পাবলিক কলেজের শিক্ষক। উত্তরার ৪ নং সেক্টরে এই কলেজটি অবস্থিত।

কে এই অদ্বৈত: আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সরকারি কলেজ শাখায় পদায়ন পান সরকারি কলেজের এই শিক্ষক। কলেজ জাতীয়করণের লক্ষ্যে পরিদর্শনে গিয়ে কোটি কোটি টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগ অদ্বৈতর বিরুদ্ধে।

ঘুষের বিনিময়ে শিক্ষা ক্যাডারে আত্তীকরণের অযোগ্য শিক্ষককেও যোগ্য মর্মে ডজন ডজন প্রতিবেদন দেন অদ্বৈত। আবার কলেজ জাতীয়করণ ও আত্তীকরণ বিরোধী সভা-সমাবেশ ও মামলা-মোকদ্দমারও বড় ডোনার।

২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ জুন শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে ঢাকা বোর্ডের উপ-কলেজ পরিদর্শক পদে প্রেষণে যোগ দেন তিনি। ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে বোর্ডের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের পদ বাগান। চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি অদ্বৈতকে ঢাকার বাইরে বদলি করা হলেও কালো পোশাক পরিহিত একজন আন্তজার্তিক শিক্ষা মাফিয়া ডনের তদবিরে অদ্বৈত কুমারের বদলির আদেশ স্থগিত হয়। অদ্যাবধি তিনি ওই পদেই রয়েছেন।

জানা যায়, শিক্ষামন্ত্রীর সাবেক পিএস এবং বর্তমানে অতিরিক্ত সচিব মোল্লা জালালও অদ্বৈতকে বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের পদে রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা করেন।
জিপিএ ফাইভ বিক্রির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অদ্বৈত কোনও মন্তব্য করেননি।

জিপিএ-৫ বিক্রির অভিযোগ, সেই দুই কলেজের পাঠদান স্থগিত

২১ মে, ২০১৯ (দৈনিক শিক্ষাডটকম)

জিপিএ-৫ বিক্রির নামে ‘প্রতারণার’ অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় রাজধানীর উত্তরার ন্যাশনাল পাবলিক কলেজ ও দি ব্রিলিয়ান্ট কলেজের পাঠদান কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করেছে ঢাকা বোর্ড। গতবছরের জুন মাসে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের সাবেক উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অদ্বৈত কুমার রায়, ন্যাশনাল পাবলিক কলেজ ও দি ব্রিলিয়ান্ট কলেজে সিন্ডিকেটের  বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে জিপিএ-৫ বিক্রির অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ তদন্তে গঠিত কমিটি এ কলেজ দুটির বিরুদ্ধে ওঠা জিপিএ-৫ বিক্রির নামে ‘প্রতারণার’ অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় কলেজ দুটির পাঠদান কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার (২০ মে) ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড থেকে পাঠদান কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা বিষয়টি জানিয়ে ন্যাশনাল পাবলিক কলেজ ও দি ব্রিলিয়ান্ট কলেজের অধ্যক্ষকে চিঠি পাঠানো হয়।  

ঢাকা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক ড. মো. হারুন-অর-রশিদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, টাকার বিনিময়ে জিপিএ-৫ বিক্রির বিষয়ে প্রতারণার অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষ থেকে উত্তরার ন্যাশনাল পাবলিক কলেজ ও দি ব্রিলিয়ান্ট কলেজের পাঠদান কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হল। 
 
ঢাকা বোর্ডের একজন কর্মকর্তা দৈনিকশিক্ষাকে জানান, গতবছরের জুন মাসে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের সাবেক উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অদ্বৈত কুমার রায়, ন্যা্শনাল পাবলিক কলেজ ও দি ব্রিলিয়ান্ট কলেজের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে জিপিএ-৫ বিক্রির অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি দৈনিক শিক্ষাসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলে অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়। 
 
জানা যায়, দি ব্রিলিয়ান্ট কলেজ জমি ও নিজস্ব ভবনের শর্ত পূরণেও ব্যর্থ হয়েছে। আর ন্যাশনাল কলেজের বিরুদ্ধে রয়েছে অভিযোগের পাহাড়। তদন্ত কমিটিকে ন্যাশনাল কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষকদের নিয়োগপত্র দেখাতে পারেনি। কলেজে কোন ল্যাবরেটরি ও গ্রন্থাগার নেই। কথিত চেয়ারাম্যান আব্দুল মতিনের স্ত্রী কলেজের শিক্ষক পরিচয় দিলেও সে বিষয়ে কোন প্রমাণ নেই কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে। কলেজে কাম্য সংখ্যক শিক্ষার্থী না থাকলেও ফরম পূরণ ও টিসি প্রদানে অতিরিক্ত টাকা নেয়াসহ বোর্ডের নির্দেশ অমান্য করার অভিযোগ রয়েছে ন্যাশনাল কলেজের বিরুদ্ধে। 
 
তবে, জিপিএ-৫ বিক্রি চক্রের মূল হোতা ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের সাবেক উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অদ্বৈত কুমার রায়কে গতবছরই ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজে বদলি করা হয়। সেখানে তিনি ক্লাস করিয়ে নায়েমে চারমাসব্যাপী প্রশিক্ষণ গ্রহণ শেষে সম্প্রতি বিদেশে পাড়ি জমান। অদ্বৈতর বিরুদ্ধে কোন বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
উল্লেখ্য, গতবছর জিপিএ ফাইভ বিক্রির অভিযোগ বিষয়ে দৈনিক শিক্ষায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের লিখিত প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের তৎকালীন সচিব ও বর্তমানে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজও প্রশাসন) অধ্যাপক মো: শাহেদুল খবির চৌধুরী।   

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এমপিওভুক্তির নতুন আদেশ জারি - dainik shiksha এমপিওভুক্তির নতুন আদেশ জারি জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর শিক্ষা প্রশাসনে বড় বদলি - dainik shiksha শিক্ষা প্রশাসনে বড় বদলি কুবির বঙ্গবন্ধু হল ও শেখ হাসিনা হলের নাম পরিবর্তন - dainik shiksha কুবির বঙ্গবন্ধু হল ও শেখ হাসিনা হলের নাম পরিবর্তন ডিআইএ পরিচালক কাজী কাইয়ুম শিশিরকে বদলি - dainik shiksha ডিআইএ পরিচালক কাজী কাইয়ুম শিশিরকে বদলি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলনে শহীদদের স্মরণসভা - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলনে শহীদদের স্মরণসভা সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ - dainik shiksha সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ এমপিওভুক্ত হচ্ছেন আরো ১১ হাজার শিক্ষক - dainik shiksha এমপিওভুক্ত হচ্ছেন আরো ১১ হাজার শিক্ষক পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন - dainik shiksha পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029590129852295