সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও তার স্ত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করার অভিযোগে সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করেছেন ইউনুস শেখ নামে এক বিএনপি নেতা। মামলার এজাহারে মানহানির ক্ষতিপূরণ বাবদ ১০০ কোটি টাকা দাবি করা হয়েছে।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে পঞ্চগড় আদালত চত্বরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মামলার বিষয়টি জানান পঞ্চগড় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আদম সুফী।
এর আগে, গত রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) পঞ্চগড় আমলী আদালতে মামলাটি করেন বিএনপি নেতা ইউনুস শেখ। মামলায় সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ছাড়াও দৈনিক করতোয়া পত্রিকার সম্পাদক মোজাম্মেল হককে আসামি করেন তিনি। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে সিআইডিকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন।
মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ২১ মে জাতীয় প্রেসক্লাবে বিশ্ব কবিতা কণ্ঠ পরিষদের এক সভায় তৎকালীন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে নিয়ে অশালীন, কুরুচিপূর্ণ ও মানহানিকর কথা বলেন।
তিনি বলেছিলেন, ‘জিয়াউর রহমান ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের চর ছিলেন। জিয়াউর রহমানের কারণেই এতদিন যুদ্ধাপরাধের বিচার করা সম্ভব হয়নি এবং বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তারই ধারাবাহিকতায় যুদ্ধাপরাধের বিচারে বাধা সৃষ্টি করেছেন।’
এই বক্তব্য ইউনুস শেখ মাইকের আওয়াজে নিজ কানে শুনেছেন। এতে মর্মাহত ও বিক্ষুব্ধ হন তিনি। পবরতীতে উক্ত সংবাদটি বাংলাদেশের বিভিন্ন মিডিয়া এবং পরদিন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, পরদিন ২২ মে ইউনুস শেখ ঢাকা থেকে ফিরে তার ব্যবসাস্থল পঞ্চগড় বাজারস্থ ‘ইউনুস সাইকেল স্টোর’ দোকানে দৈনিক করতোয়া পত্রিকার প্রথম পাতার ৬নং কলামে উক্ত বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন দেখতে পান। আসামি প্রমাণপত্র ছাড়াই বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অশালীন, কুরুচিপূর্ণ ও মানহানিকর কথাবার্তা বলেন, যা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মানহানির শামিল।
মামলার বাদী ইউনুস শেখ বলেন, আমি বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র আদর্শে জীবন যাপন করি। তাছাড়া শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী ‘জেড’ ফোর্সের অধিনায়ক ছিলেন। তিনি নিজেও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। বিশেষ করে চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। ফলে বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভূষিত করেন। পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশের সফল রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন। তিনি বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করেন এবং বেগম খালেদা জিয়া তিনবারের সফল প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আমি বিএনপি পরিবারের সদস্য হওয়ায় মনে করেছি যে, কোনোরকম প্রমাণপত্র ছাড়াই বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ১নং আসামি (কামরুল ইসলাম) মানহানিকর অশালীন কথাবার্তা বলেছেন।
তিনি আরও বলেন, অপর আসামি মোজাম্মেল হক দৈনিক করতোয়া পত্রিকার সম্পাদক হয়েও এমন মিথ্যা, ভিত্তিহীন, অশালীন এবং মৃত ব্যক্তি সাবেক প্রেসিডেন্ট ও তিনবারের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে জেনেবুঝে মানহানিকর তথ্য প্রকাশ করেছেন। সুতরাং, তিনিও অপরাধী।
প্রেস ব্রিফিংয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাহিরুল ইসলাম কাচ্চু, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. আব্দুল্লাহ আল মামুন, যুগ্ম সম্পাদক ইয়াছিনুল হক দুলাল, সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন, জেলা কৃষকদলের সাবেক সভাপতি এম. এ করিম মন্ডল, বিএনপি নেত্রী অ্যাড. মোহছেনা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।