টাপুরচর নাছিরিয়া দাখিল মাদরাসাজুনিয়র শিক্ষককে প্রধানের ভার দেয়ার চেষ্টা, নিয়োগে ঘুষ লেনদেনের শঙ্কা

রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি |

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের টাপুরচর নাছিরিয়া দাখিল মাদরাসায় দাখিল মাদরাসায় ভারপ্রাপ্ত সুপার পদে সিরাজুল ইসলাম নামের এক জুনিয়র মৌলভীকে টাকার বিনিময়ে দায়িত্ব দেয়ার পাঁয়তারা করার অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে। ওই মাদরাসার সুপার ও সহকারী সুপার শিগগিরই অবসরে যাচ্ছেন।

এ পরিস্থিতিতে সভাপতির ‘অনুগত’ জুনিয়র শিক্ষককে প্রতিষ্ঠান প্রধানের ভার দেয়ার চেষ্টা করায় ওই দুই পদে নিয়োগে মোটা অংকের টাকা ঘুষ বাবদ লেনদেনের শঙ্কায় আছেন প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি নিয়ে এলাকায় সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে এসব বিষয়ে পৃথক লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন শিক্ষার্থীর অভিভাবক ও পরিচালনা পর্ষদ সদস্যরা।

মাদরাসা সংশ্লিষ্ট ও স্থানীয়দের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, রৌমারী উপজেলার টাপুরচর নাছিরিয়া দাখিল মাদরাসাটি ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে এমপিওভুক্ত হয়। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ২৩০জন ও শিক্ষক ১১ জন এবং কর্মচারী রয়েছেন ৩ জন। এদের মধ্যে প্রতিষ্ঠান সুপার আব্দুল কাদের মিয়া ও সহ-সুপার আবেদ আলী ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ ফেব্রুয়ারি অবসরগ্রহণ করবেন। এ দুই শিক্ষক অবসরগ্রহণের কথাশুনে এবং সুপার ভারের দায়িত্ব নিয়ে লাখ লাখ টাকা ঘুষ নেয়ার স্বপ্ন দেখছেন মাদরাসা সভাপতি আব্দুস সালাম। 

মাদরাসার শিক্ষক ও পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানের জুনিয়র শিক্ষক সিরাজুল ইসলামের কাছ থেকে বড় অংকের টাকা নিয়ে তাকে বিধি উপেক্ষা করে ভারপ্রাপ্ত সুপারের পদে বসানো হচ্ছে। মাদরাসার এমপিও নীতিমালার নির্দেশনা অনুযায়ী, দাখিল মাদরাসার সুপার অবসরগ্রহণের পর সহ-সুপার সুপার পদের দায়িত্ব পাবেন। সহসুপার না থাকলে এ পদের দায়িত্ব পাবেন প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক। কিন্তু তা না মেনে ও প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের কাউকে না জানিয়ে সভাপতি তার নিজের সিদ্ধান্তে টাকার বিনিময়ে জুনিয়র এক শিক্ষককে সুপার পদের ভার দেয়ার পায়তারা করছেন। 

মাদরাসা পরিচালনা পর্ষদের অভিভাবক সদস্য জমশের আলী, দেলোয়ার হোসেন, মিজানুর রহমান, শিক্ষক প্রতিনিধি সাদাকাত হোসেনসহ অনেকই অভিযোগ করে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, সভাপতি তাঁর একক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এবং টাকার বিনিময়ে ভারপ্রাপ্ত সুপার পদের দায়িত্ব দেয়ার পায়তারা করছেন। এর সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত সিনিয়র শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত সুপারের দায়িত্ব দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।

টাকার বিনিময়ে সুপারের ভার নেয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জুনিয়র শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, পরিচালনা পর্ষদ আমাকে যোগ্য মনে করায় সুপার পদের ভার দিচ্ছেন। এখানে কে সিনিয়র আর কে জুনিয়র সেটা আমার দেখার বিষয় না। 
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, আমি আগে এ প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেছি। পরে পদায়ন নিয়ে জুনিয়র মৌলভী থেকে দাখিল শাখার সহকারী শিক্ষক পদে কর্মরত আছি। কাজেই আমি সিনিয়র এবং যোগ্য শিক্ষক। আর এর জন্য সভাপতিকে কোনো টাকা দেয়া হয়নি। তবে একটা দায়িত্বে গেলে কিছু টাকা খরচ করতে হবেই তো।

মাদরাসা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মো. আব্দুস সালাম দৈনিক শিক্ষাডটকমের কাছে দাবি করেছেন, যিনি সিনিয়র শিক্ষক রয়েছেন ওই ব্যক্তিকে সুপার ভারপ্রাপ্ত হিসেবে নিয়োগ দেয়া হবে। তার মাধ্যমে নিয়মিত সুপার নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, সিরাজুল নামের শিক্ষকের কাছে কোনো টাকা নেয়া হয়নি। কেউ অভিযোগ তুললে তা মিথ্যা। 

জানতে চাইলে রৌমারীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এ বি এম সারোয়ার রাব্বি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, এ সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ পায়নি। তবে বিষয়ে  খোঁজ নেয়ার জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলা হবে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আইবুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, নীতিমালা ও বিধি অনুযায়ী সিনিয়র শিক্ষক সুপার পদের দায়িত্ব পাবেন। যদি কোনো প্রতিষ্ঠান তা না করে এবং বিধি উপক্ষো করে জুনিয়র শিক্ষককে এ দায়িত্ব দেয়া হয় তাহলে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জেলা শিক্ষা শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিইও) মো. শামছুল আলম দৈনিক শিক্ষকডটকমকে বলেন, সুপার ও সহ-সুপার একই দিনে অবসরগ্রহণ করার ফলে এ প্রতিষ্ঠানের যিনি সিনিয়র শিক্ষক রয়েছেন তিনি সুপার ভারপ্রাপ্ত হিসেবে নিয়োগ পাবেন। এর ব্যতয় ঘটলে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পর্ষদ ও সুপারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। লিখিত অভিযোগ ও সত্যতা পেলে প্রয়োজনে পরিচালনা কমিটি ভেঙে দেয়ার জন্যে বোর্ডকে সুপারিশ করা হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ইউএনওর ‘মানসিক নির্যাতনে’ শিক্ষকের মৃত্যুর অভিযোগ - dainik shiksha ইউএনওর ‘মানসিক নির্যাতনে’ শিক্ষকের মৃত্যুর অভিযোগ শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতির সভা ১৮ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতির সভা ১৮ সেপ্টেম্বর সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! - dainik shiksha সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! - dainik shiksha নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চায় অধিদপ্তর - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চায় অধিদপ্তর এক ফ্যাসিস্টকে দেশ ছাড়া করেছি অন্যকে সুযোগ দেয়ার জন্য নয়: সারজিস - dainik shiksha এক ফ্যাসিস্টকে দেশ ছাড়া করেছি অন্যকে সুযোগ দেয়ার জন্য নয়: সারজিস কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030021667480469