জেন-জি ও তাদের মনস্তত্ত্ব

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক |

প্রতিটি প্রজন্মই তার আগের প্রজন্ম থেকে এগিয়ে থাকে। অন্য কিছুতে না হলেও প্রযুক্তিতে অবশ্যই এগিয়ে থাকে। আমাদের বাবাদের তারুণ্য ছিলো রেডিওনির্ভর। কালক্রমে টিভি, ভিসিপি, ভিসিআর—শেষ পর্যন্ত কেবল টিভি চ্যানেল দেখে গেছেন। তারা মুঠোফোন ভালো চালাতে জানতেন না।

আমাদের তারুণ্য শুরু বোতাম টেপা মুঠোফোন দিয়ে, বেঁচে থাকতেই অ্যান্ড্রয়েড ফোন আর এআইয়ের ক্যারিশমায় আছি। টিভি প্রায় দেখিই না বলতে গেলে। ইউটিউব আর গুগলনির্ভর জীবন। কিন্তু আমার ছেলেদের প্রযুক্তিজ্ঞানের কাছে আমি শিশু। ওদের সন্তানরা ওদের চেয়ে এগিয়ে থাকবে। এই কথাগুলো বলেছেন কবি, লেখক ও সমাজচিন্তাবিদ শাশ্বতী বিপ্লব। তিনি জেন-জিদের সমসাময়িক বাহ্যিক আচরণ ও অভ্যন্তরীণ মনস্তত্ত্ব নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিশ্লেষণধর্মী একটি লেখা প্রকাশ করেছেন। 

মূলত জেন-জি এমন একটি শব্দ, যার আগে আমাদের প্রজন্মের নামকরণ বা কালসীমা নিয়ে তেমন কোনো ধারণা ছিলো না। কেবল নাইন্টিজ কিড বা নব্বইয়ের শিশু-কিশোর বলে একটি পরিচয়ের গণ্ডিতে একটি প্রজন্মকে পৃথক করা যেতো। তবে এটিও কিন্তু সেই প্রজন্মের নাম নয়। তাহলে তাদের নাম কী? আর বাকিদের নামই-বা কী?

প্রতিটি প্রজন্মের নামকরণ এবং এর শুরু ও শেষের সময়সীমা কোনো সরকারি কমিশন বা গোষ্ঠী সিদ্ধান্ত নেয় না। বরং বিভিন্ন নাম ও জন্মতারিখ হিসাব করে প্রস্তাব করা হয় এবং কিছুটা এলোমেলো প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মিডিয়া ও জনপ্রিয় কথাবার্তায় ধীরে ধীরে ঐকমত্য গড়ে ওঠে। যেহেতু প্রজন্ম প্রায়ই নির্দিষ্ট ঘটনা দ্বারা গঠিত হয়, তাই তাদের মান ও সময়সীমা কখনো কখনো এক দেশ থেকে অন্য দেশে পৃথক হয়।

তবে এটা নিশ্চিত যে ১৯৯৭ থেকে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের ভেতর যাদের জন্ম, তারাই হলো জেন-জি বা জেনারেশন জেড। বর্তমানে এই প্রজন্মের সদস্যদের বয়স ১২ থেকে ২৭ বছর। এই প্রজন্মের বৈশিষ্ট্য, ভালো দিক, মন্দ দিক নিয়ে অনেক কথা হয়, অনেক গবেষণা ও আলাপও হয়। তার পাশাপাশি এ প্রশ্নও ওঠে, জেড যেহেতু ইংরেজি বর্ণমালার সর্বশেষ বর্ণ, তাহলে জেনারেশন ওয়াই বা এক্সও নিশ্চয়ই আছে। তারা কারা?

সাধারণত ২০ থেকে ২৫ বছর অর্থাৎ দুই যুগের মতো সময় ধরে একটি প্রজন্ম গড়ে ওঠে। যদিও তাদের শুরু ও শেষের বছরটি বিভিন্ন পরিসংখ্যান ও তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে নির্ধারিত হয়। প্রযুক্তিগত ক্রমবিবর্তন, বিশ্বায়ন ও সভ্যতার উন্নয়নও এ ক্ষেত্রে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কেয়ারগিভার্স অব আমেরিকায় প্রকাশিত একটি নিবন্ধে এ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।

আসুন একনজরে একটু জেনে নেই বিভিন্ন প্রজন্মের নাম, তাদের জন্মের সময়সীমা ও বর্তমানে তাদের বয়স-
গ্রেটেস্ট জেনারেশন বা মহত্তম প্রজন্ম: এদের জন্মকাল আনুমানিক ১৯০১ থেকে ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এবং এদের বর্তমান বয়স অবশ্যই ৯৫ বছরের বেশি।

সাইলেন্ট জেনারেশন বা নীরব প্রজন্ম: এদের জন্মকাল আনুমানিক ১৯২৮ থেকে ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এবং এদের বর্তমান বয়স ৭৯ থেকে ৯৪ বছর।

বেবি বুমার্স জেনারেশন: এদের জন্মকাল আনুমানিক ১৯৪৬ থেকে ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এবং এদের বর্তমান বয়স ৬০ থেকে ৭৮ বছর।

জেনারেশন এক্স: এদের জন্মকাল আনুমানিক ১৯৬৫ থেকে ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এবং এদের বর্তমান বয়স ৪৪ থেকে ৫৯ বছর।

জেনারেশন ওয়াই বা মিলেনিয়ালস বা সহস্রাব্দ প্রজন্ম: এদের জন্মকাল আনুমানিক ১৯৮১ থেকে ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। এবং এদের বর্তমান বয়স ২৮ থেকে ৪৩ বছর। এই প্রজন্মেরই যাদের জন্ম আবার ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দের ভেতরে অর্থাৎ যারা পুরো নব্বই দশকে তাদের শৈশব-কৈশোর পার করেছেন, তাদের বলা হয় নাইন্টিজ কিডস। এদের মা-বাবারা বেশির ভাগই বুমার্স ও জেনারেশন এক্সের সদস্য।

জেনারেশন জেড বা জেন-জি: এদের জন্মকাল ১৯৯৭ থেকে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এবং এদের বর্তমান বয়স ১২ থেকে ২৭ বছর। এদের মা-বাবারা মূলত জেনারেশন এক্স ও ওয়াইয়ের সদস্য।

জেনারেশন আলফা: এদের জন্মকাল আনুমানিক ২০১২ থেকে ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এবং এদের বর্তমান বয়স ০ থেকে ১২ বছর। এদের মা-বাবারা আবার জেনারেশন ওয়াই বা সহস্রাব্দ প্রজন্মের সদস্য।

যদিও আলফা প্রজন্মের শেষ সময় এখনো নির্ধারিত হয়নি। এই প্রজন্ম এখনো শিশু এবং এদের আচরণগত বৈশিষ্ট্য ও পরিসংখ্যান এখনো সর্বব্যাপী প্রকাশিত নয়, কাজেই বলা যাচ্ছে না যে কত খ্রিষ্টাব্দে এই সময়কাল শেষ হবে।

প্রজন্ম নিয়ে লেখা বেশির ভাগ লোকের মতো প্রাথমিকভাবে ধরে নেওয়া যায় যে সহস্রাব্দের যুগটি ১৯৯৯-এর কাছাকাছি জন্মগ্রহণ করা পর্যন্ত চলতে থাকবে। কিন্তু ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের দিকে কিছু বৃহৎ, জাতীয় তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, যে প্রজন্মের সদস্যরা প্রথম একটি স্মার্টফোনের সঙ্গে তাদের পুরো বয়ঃসন্ধিকাল কাটিয়েছেন, তাদের তিন-চতুর্থাংশের পূর্ববর্তী প্রজন্মের মতো ঐকমত্য খুঁজে পেতে কিছুটা সময় লাগছে। কেউ কেউ এই গোষ্ঠীর জন্য জেনারেশন জেড নাম ব্যবহার করেছেন। কিন্তু অন্যরা যুক্তি দিয়েছেন যে যদি জেনারেশন ওয়াই না থাকে, তাহলে জেনারেশন জেডকেও উপযুক্ত বলে মনে হয় না।

জেনারেশন জেডের সবচেয়ে বয়সী সদস্যও মাত্র ২৭ বছরের। অর্থাৎ, এই প্রজন্মের সদস্যদের দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে বেশ কিছুটা সময় লাগতে পারে। তবে ইতিহাস বলে এদের হাত ধরেই আসে নতুন পৃথিবী।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
একাদশ-দ্বাদশ বাংলা-ইংরেজির সিলেবাস প্রকাশ - dainik shiksha একাদশ-দ্বাদশ বাংলা-ইংরেজির সিলেবাস প্রকাশ ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ১ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ১ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে ঠুঁটো জগন্নাথ অধ্যাপকের পকেটে ৬০ লাখ টাকা - dainik shiksha ঠুঁটো জগন্নাথ অধ্যাপকের পকেটে ৬০ লাখ টাকা সব কয়টারে গু*লি কইরা মা*রমু - dainik shiksha সব কয়টারে গু*লি কইরা মা*রমু স্কুলে ভর্তি: সরকারিতে জোয়ার, বেসরকারিতে ভাটা - dainik shiksha স্কুলে ভর্তি: সরকারিতে জোয়ার, বেসরকারিতে ভাটা স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা জাতীয়করণের দাবি যৌক্তিক: ধর্ম উপদেষ্টা - dainik shiksha স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা জাতীয়করণের দাবি যৌক্তিক: ধর্ম উপদেষ্টা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031981468200684