জেলবন্দি চাঁদাবাজ দুই হাতির গল্প

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

তিন বছর সাত মাসের বেশি সময় ধরে বন্দি জীবন কাটাচ্ছে পান্না ও রাজবাহাদুর। তাদের অপরাধ, ঢাকার রাস্তায় মানুষকে জিম্মি করে টাকা আদায় করত। চাঁদাবাজির মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকলেও স্বেচ্ছায় এ পথ বেছে নেয়নি তারা। সে ক্ষমতাও নেই তাদের। এরপরও আদালতের নির্দেশে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল থেকে মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানায় বন্দি হয়ে আছে তারা।

পান্না ও রাজবাহাদুর আসলে বিশাল আকৃতির দুটি হাতি। রাজধানীর ব্যস্ত সড়কে অনেকেই তাদের দেখেছেন। শহরের মোড়ে মোড়ে গাড়ি বা পথচারীদের আটকে টাকা আদায়ে ব্যবহার করা হতো ওদের। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের আদেশে বন্দি হতে হয় হাতি দুটিকে। এখন তাদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে আপিল বিভাগের সিদ্ধান্তের ওপর।

মামলার নথি বলছে, ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ৩ মে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মাছের আড়তে যৌথ অভিযান চালায় র‌্যাব-২ ও মৎস্য অধিদপ্তর। সেসময় পান্থপথ থেকে ফার্মগেটগামী রাস্তায় অবস্থান করছিল হাতি দুটি। তাদের দিয়ে সড়কে চাঁদা আদায় করছিলেন দুই ব্যক্তি। কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে হাতিদের দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দিচ্ছিলেন তাদের নিয়ন্ত্রকরা। এদিকে, তা দেখে একটি মাইক্রোবাস থেকে বিদেশি পর্যটকরা আতঙ্কে ‘সাহায্য কর’, ‘সাহায্য কর’, ‘পুলিশ, পুলিশ’ বলে চিৎকার করছিলেন।

এক পর্যায়ে হাতি নিয়ন্ত্রণকারী দু’জনকে সেখান থেকে সরে যেতে বলেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত র্যাব সদস্যরা; কিন্তু সেই অনুরোধ না শুনে উল্টো র্যাব সদস্যদের ওপর চড়াও হন তারা। এমনকি তাদের ধাওয়া করে হাতিরঝিল পর্যন্ত নিয়ে যায়। পথিমধ্যে রাস্তার একটি প্রাইভেটকার হাতি দুটির আক্রমণের শিকার হয়। শেষ পর্যন্ত হাতিরঝিল ও মধুবাগের বাসিন্দাদের সহায়তায় হাতির নিয়ন্ত্রক শাহিন আলী ও সজীবকে আটক করে র্যাব।

এ ঘটনায় ঢাকার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সারোয়ার আলম শাহিন আলীকে ২ বছর ও সজীবকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেন। সেই সঙ্গে আটক হাতি দুটি বাজেয়াপ্ত করে ঢাকা চিড়িয়াখানায় স্থায়ীভাবে পাঠানোর আদেশ দেন।

আটকরা জানান, সিলেটের আব্দুস সামাদের কাছ থেকে প্রতিটি হাতি দৈনিক তিন হাজার টাকা ভাড়ায় ঢাকা শহরে আনা হয়। এদের ব্যবহার করে রাস্তা থেকে টাকা তোলা হয়। হাতির মালিককে নির্ধারিত ভাড়া দেওয়ার পর বাকি টাকা সাত জনের মধ্যে ভাগ হয়।

এদিকে মোবাইল কোর্টের এই আদেশের বিরুদ্ধে ঢাকার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আপিল করেন হাতি দুটির প্রকৃত মালিক আব্দুল মালেক ও মোহাম্মদ নৈমুল্লাহ। আদালত সেই আপিল নামঞ্জুর করেন। এই আদেশের বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে ফৌজদারি রিভিশন দায়ের করা হয়। ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ অক্টোবর রিভিশন মঞ্জুর করেন আদালত। এরপর থেকে বিষয়টি সরকার পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে আপিলের অপেক্ষায় রয়েছে।

ঢাকা চিড়িয়াখানার সহকারী কিউরেটর মিহির কুমার দে জানান, হাতি দুটি বর্তমানে তাদের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। আদালতের পরবর্তী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে সর্বশেষ - dainik shiksha শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে সর্বশেষ শিক্ষা ক্যাডারে অধ্যাপক হচ্ছেন যারা - dainik shiksha শিক্ষা ক্যাডারে অধ্যাপক হচ্ছেন যারা ভিসি নিয়োগের দাবিতে এবার উত্তরবঙ্গ ব্লকেড বেরোবি শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ভিসি নিয়োগের দাবিতে এবার উত্তরবঙ্গ ব্লকেড বেরোবি শিক্ষার্থীদের মসজিদ ইবাদাতের পাশাপাশি জ্ঞানচর্চারও একটি কেন্দ্র হতে পারে: ঢাবি উপাচার্য - dainik shiksha মসজিদ ইবাদাতের পাশাপাশি জ্ঞানচর্চারও একটি কেন্দ্র হতে পারে: ঢাবি উপাচার্য ঢাকা বোর্ডের পরিদর্শক আবুল মনছুর ভূঁঞার ঘুষ বাণিজ্য - dainik shiksha ঢাকা বোর্ডের পরিদর্শক আবুল মনছুর ভূঁঞার ঘুষ বাণিজ্য দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! - dainik shiksha দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণার দাবি জামায়াতের - dainik shiksha ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণার দাবি জামায়াতের ভারতে পাঠ্যবই ছাপানোর বিপক্ষে ৯২ শতাংশ বাংলাদেশি - dainik shiksha ভারতে পাঠ্যবই ছাপানোর বিপক্ষে ৯২ শতাংশ বাংলাদেশি ভয়ংকর বিপদের মধ্যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী - dainik shiksha ভয়ংকর বিপদের মধ্যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029640197753906