সম্প্রতি জ্বালানি তেলের সংকট মোকাবিলার জন্য জ্বালানি মন্ত্রণালয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাপ্তাহিক ছুটি তিনদিন করার প্রস্তাব দেয়। এতে জনগণের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। গত ১২ আগস্ট শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এক অনুষ্ঠানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিন করার জন্য চিন্তা ভাবনা চলছে বলে জানান। এ ব্যাপারে হয়তো অনেকেই তার পক্ষে-বিপক্ষে মতামত দেবেন।
প্রথম কথা হল আমাদের দেশে শিক্ষার মান অনেক নিচে। পৃথিবীর ১৯৬টি দেশের মধ্যে রাংকিং করলে দেখা যায় আমাদের দেশের অবস্থান ১২৮ বা ১৩৮ তম। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পৃথিবীর সেরা হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে নেই।
করোনা মোকাবিলার জন্য সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছিলো। তাতে যে ক্ষতি হয়েছে তা আদৌ রিকভারি করা যায়নি। মাঝে সিলেটে বন্যার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। অনেক শিক্ষার্থীর বই খাতা পানিতে ভেসে গেছে। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা সময়মতো নেয়া সম্ভব হয়নি। এতেও শিক্ষার্থীদের অনেক ক্ষতি হয়েছে।
এখন যদি আবার জ্বালানির সংকট মোকাবেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাপ্তাহিক ছুটি বাড়িয়ে দুইদিন করা হয় তাহলে শিক্ষার আরও ক্ষতি হবে। আমদের শিক্ষার্থীরা অনেক কিছু পিছিয়ে যাবে। করোনার সময় জাতিসংঘ থেকে এক বিবৃতিতে বলেছিলো, যেকোনো সংকটে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সবার পরে বন্ধ হবে এবং সবার আগে খুলবে।
২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে যথাক্রমে এপ্রিল ও জুন মাসে। উচ্চ মাধ্যমিকের ব্যাপক সিলেবাস, সংক্ষিপ্ত সময়ে কোর্স সম্পন্ন করা কঠিন। তারপর যদি সাপ্তাহিক ছুটি দুইদিন হয় তাহলে শিক্ষার্থীরা কোর্স শেষ করতে পারবে না। তারা হয়তো পরীক্ষা দেবে, পাসও করবে কিন্তু দুর্বলতা থেকে যাবে।
তাই জ্বালানি সংকটের অজুহাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাপ্তাহিক ছুটি দুইদিন না করে তার বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাবতে হবে। এখন গরমের প্রভাব কিছুটা কমতে শুরু করেছে। সব অফিস আদালতে এসি বন্ধ রাখা যেতে পারে। সরকার যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাপ্তাহিক ছুটি দুইদিন করে তাহলে জ্বালানির কিছুটা সাশ্রয় হয়তো হবে, সেক্ষেত্রে প্রাইভেট, কোচিং সেন্টারের গুরুত্ব বেড়ে যাবে। অভিভাবকদের অতিরিক্ত টাকা ব্যয় হবে। আর দরিদ্র অভিভাবকরা সন্তানদের টাকার অভাবে ঠিকমত প্রাইভেট পড়াতে সক্ষম হবে না, তাদের সন্তানেরা বেশি পেছনে পড়ে যাবে। শিক্ষায় বৈষম্য সৃষ্টি হবে।
তাই শিক্ষামন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করতে চাই জ্বালানি সংকট মোকাবেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাপ্তাহিক ছুটি দুইদিন করার চিন্তা পুনঃ বিবেচনা করবেন।
লেখক : মোহাম্মদ আলী শেখ, সহকারী অধ্যাপক, ফরিদপুর।