অকথ্য ভাষায় গালিগালাজের অডিও ফাঁস ও শিক্ষার্থীদের নির্যাতনে অভিযুক্ত ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়। তিনি জানিয়েছে, ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রমাণ পাওয়া গেলে ছাত্রলীগ নেত্রী রিভার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ইডেন কলেজে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোকদিবস পালনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, আমার বিষয়টি জানতে পেরেছি। দায়িত্বপ্রাপ্ত যারা আছেন তাদের বলেছি বিষয়টি তদন্ত করতে। যে অডিওটি ভাইরাল হয়েছে সেটি আমরাও শুনেছি। বিষয়টি আমরা দায়িত্বপ্রাপ্তদের বলেছি, তারা খোঁজ খবর নিচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের জন্যই বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কাজ করে। আমরা আগেও বলেছি আমরা অন্যায়কে প্রশয় দেইনি।
তিনি আরও বলেন, আপনারা জানেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। বিভিন্ন সময়ে ছাত্রলীগকে বিতর্কিত করতে অনেকে অনেক ধরণের কথা বলে। কিন্তু আমরা বিষয়টিকে মিথ্যা বা সত্য সে বিষয়ে এখনই বলতে পারছি না। কিন্তু এ ধরণের ঘটনা তিনি ঘটিয়ে থাকলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।
জয় আরও বলেন, বিষয়গুলোকে নিয়ে অতিরঞ্জিত করে প্রচার করা হচ্ছে বলেও আমার মনে হচ্ছে।
সম্প্রতি রুমে থাকতে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভার টাকা দাবি নিয়ে দুই ছাত্রীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করার অডিও ফাঁস হয়েছিল। পরে সেই ছাত্রীদের আটকে রেখে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে, আটকে রাখা অবস্থায় ওই দুই ছাত্রীর কাছ থেকে আগের ঘটনা অডিও ভাইরাল করার স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য হুমকি দিয়েছেন রিভা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ. মঙ্গলবার সকালের দিকে সাড়ে ছয় ঘণ্টা মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের পর অবশেষে ‘মিথ্যা স্বীকারোক্তি’ দিতে বাধ্য হন ওই দুই ছাত্রী। ইডেন কলেজের রাজিয়া বেগম ছাত্রীনিবাসের একটি কক্ষে এ নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি নেয়া হয়। পরে হলের প্রাধ্যক্ষ নারগিস রুমা গিয়ে ওই দুই ছাত্রীকে উদ্ধার করেন।
বিকেলে ফাঁস হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেত্রী এবং শিক্ষক ভুক্তভোগী দুই ছাত্রীকে ঘটনা খুলে বলার জন্য নানাভাবে আশ্বস্ত করছেন। এই ভিডিও ক্লিপ দৈনিক শিক্ষাডটকমের হাতে পৌঁছেছে।
ভিডিওতে একজন ভুক্তভোগীকে বলতে দেখা যায়, ছাত্রলীগ সভাপতি তাঁদের আটকে রেখে ‘এক পায়ে পাড়া দিমু, আরেক পায়ে টাইনা ছিঁড়ে ফেলব’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ মিথ্যা এই মর্মে স্বীকারোক্তি দিতে বলেন। ওই ঘটনার অডিও রেকর্ড করতে নির্দেশ দিয়েছেন শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সুমনা মীম-এমন স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করেন। স্বীকারোক্তি না দিলে বিবস্ত্র করে ভিডিও করে ভাইরাল করে দেয়ার হুমকি দেন রিভা। তখন দুই ছাত্রী রিভার লিখে দেয়া স্বীকারোক্তি পড়তে বাধ্য হন। সেটি রিভা এবং অন্যরা রেকর্ড করেন।
এর আগে গত ২০ আগস্ট ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে না যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলের কক্ষ থেকে বের করে দেয়ার হুমকি-ধমকির বিষয়ে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা।
ক্ষমাপ্রার্থনা করে ২০ আগস্ট রাতে ফেসবুকে পোস্টে রিভা লিখেছেন, ‘ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের প্রতিটি কর্মীর সাথে আমার আত্মার সম্পর্ক। এরা আমার পরিবারের সদস্য ছাড়া অন্য কিছু নয়। একান্ত ব্যক্তিগত পরিবেশে হলেও দায়িত্বশীল জায়গা থেকে অসংযত ভাষার প্রয়োগ আমার অপরাধ হয়েছে বলে আমি স্বীকার করছি। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আমাকে এমন শিক্ষা দেয় না, তাই সংগঠনের প্রতি আমি ক্ষমাপ্রার্থী।’