ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে আনার ‍উদ্যোগ নিতে হবে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

করোনা মহামারিতে গত দেড় বছরে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে। বিশেষ করে এ মহাদুর্যোগে দরিদ্র থেকে অতিদরিদ্রের কাতারে এসে দাঁড়ানো বিপুলসংখ্যক পরিবার তাদের সন্তানদের লেখাপড়া থেকে সরিয়ে নিয়ে ছোটখাটো বিভিন্ন কাজে লাগিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। নিম্নবিত্ত পরিবারের অনেক শিশু বই-খাতা ছেড়ে নতুন করে ঝুঁকিপূর্ণ কর্মক্ষেত্রে যুক্ত হয়েছে। মেয়ে শিক্ষার্থীদের অনেকেরই বাল্যবিয়ে হয়ে গেছে। উদ্বেগজনক হারে শিক্ষার্থীদের এই ঝরে পড়া ঠেকাতে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এমনকি প্রস্তাবিত বাজেটেও এ খাতে সুনির্দিষ্ট কোনো বরাদ্দ নেই। ফলে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবৃত্ত শ্রেণির শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় বড় ধরনের ধস নেমেছে। উচ্চবৃত্তের সঙ্গে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবৃত্তের পরিবারের সন্তানদের শিক্ষার যে বৈষম্য বাড়ছে তা আরো প্রবল হয়ে উঠেছে। যা শিক্ষার হারের ওপর বড় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের ওপরে এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি। দেশের প্রান্তিক এলাকার প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার নিয়ে সংসয় দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) ভোরের কাগজ পত্রিকায় পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও জানা যায় বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পাওয়ার এন্ড পার্টিসিপেটরি রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স এন্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে প্রাথমিক পর্যায়ে ১৯ শতাংশ ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পড়াশোনার বাইরে চলে গেছে। ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত এ জরিপ পরিচালিত হয়। আগের বছর এর হার ছিল প্রাথমিকে ১৪ শতাংশ ও মাধ্যমিকে ২১ শতাংশ। গত ১২ সেপ্টেম্বর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দিন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি আশানুরূপ ছিল না। তবে ধারণা করা হয়েছিল যে, ধীরে ধীরে উপস্থিতি বাড়বে। কিন্তু মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য খুবই হতাশাজনক।

অনেক অভিভাবক বলেছেন, সপ্তাহে একদিন ক্লাস হওয়ার কারণে তারা শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ে পাঠাচ্ছেন না। এ সমস্যা সমাধানে শ্রেণিকক্ষে পাঠের সময় বাড়াতে হবে। করোনা সংক্রমণের জন্য কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ায় অভিভাবকরা এখনো ভয়ভীতিতে আছেন; তারা ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে পাঠাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সুতরাং এই মুহূর্তে দেশের প্রান্তিক পর্যায় থেকে শুরু করে সব শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়মুখী করা সরকারের অন্যতম চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষার্থীদের বৃত্তি, উপবৃত্তির পাশাপাশি পারিবারিক উদ্যোগ ও সচেতনতা বাড়াতে হবে। স্কুলে টিফিনের ব্যবস্থা করতে হবে। বাল্যবিয়ে হয়ে স্কুল থেকে যারা চলে যাচ্ছে তাদের উপবৃত্তি বাড়িয়ে দিতে হবে এবং যেসব ছেলে শিক্ষার্থী পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতার জন্য কাজে যেতে বাধ্য

হয়েছে তাদের ৪র্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪)-এর আওতায় আনতে হবে। উপবৃত্তি প্রদান করে কারিগরি শিক্ষায় ফেরত আনতে হবে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, পরিচালনা কমিটি ও অভিভাবকদের চেষ্টা করতে হবে। তাই শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়ে বাস্তবায়ন করতে পারলেই শিক্ষার্থীদের আগের রূপে শিক্ষাঙ্গনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

লেখক : সানজিদা জাহান লোপা, শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ - dainik shiksha প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার - dainik shiksha তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার - dainik shiksha স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন - dainik shiksha নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029659271240234