টাইম ম্যানেজমেন্টের আদ্যোপান্ত

মিলি রহমান |
বলা হয়ে থাকে সময় ও স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। সত্যিকার অর্থে প্রত্যেক ব্যক্তিকে সময়ের মূল্য বুঝতে হয়। যদি সে সাফল্যের চূড়ায় উঠতে চায়। সময় অপচয় করলে কখনোই কেউ এ পৃথিবীতে নিজের পরিচয় তৈরি করতে পারে না বা নিজের কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখতে পারে না। টাইম ম্যানেজমেন্ট হচ্ছে সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহার করা এবং সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করা। প্রত্যেক ব্যক্তির জন্যই নির্দিষ্ট বিষয়ে নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা খুবই জরুরি। টাইম ম্যানেজমেন্ট শুধু একটি প্রতিষ্ঠানকে নয় একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
 
প্রতিদিনের কাজগুলোকে আমরা ক, খ, গ, ঘ অনুসারে সাজাতে পারি। যেমন  
ক -যে কাজগুলো খুবই জরুরি এবং গুরুত্বপূর্ণ।
খ- কাজগুলো গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু এখনই করা জরুরি নয়।
গ -কাজগুলো গুরুত্বপূর্ণ নয় কিন্তু করা জরুরি।
ঘ-কাজগুলো জরুরিও নয় গুরুত্বপূর্ণ নয়।
 
এক্ষেত্রে নিজেদের প্রয়োজন অনুসারে কাজগুলোর একটি তালিকা তৈরি করতে হবে। কিছু কাজ আছে যেগুলো আমরা দৈনন্দিন অভ্যাসবশত করি। যেমন ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ করা, গোসল করা, অফিস বা স্কুলের জন্য তৈরি হওয়া। আবার কিছু কাজ আছে আমাদের ভালো লাগা বা প্রয়োজনের তাগিদে আমরা করে থাকি। যেমন অফিসের কাজ , টিভি দেখা হোমওয়র্ক করা ইত্যাদি। যে কাজগুলো আমাদের অভ্যাসবশত করি সেগুলোর জন্য আসলে টাইম ম্যানেজমেন্টের দরকার হয় না। কিন্তু যেগুলো আমাদের প্রয়োজনের কাজ সেগুলোর জন্য আমাদের সময়কে সুন্দরভাবে সজ্জিত করা উচিত। তার জন্য দরকার একটি পরিকল্পনা এবং এ পরিকল্পনা অনুযায়ী যদি আমরা চলতে থাকি, তাহলে কিছুদিনের মধ্যেই আমাদের প্রয়োজনীয় কাজগুলো আমাদের অভ্যাস গত কাজে পরিণত হবে সত্যিকার অর্থে এটাই হচ্ছে টাইম ম্যানেজমেন্ট।
 
টাইম ম্যানেজমেন্টের মধ্যে যে বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকে তা হচ্ছে:
১. সঠিক পরিকল্পনা 
২. সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণ 
৩. একটি কাজের শেষ সময় সীমা নির্ধারণ 
৪. গুরুত্বের ভিত্তিতে কাজের শ্রেণীবিন্যাস 
এবং
৫.সঠিক কাজ সঠিক সময়ে করা
 
 
১. সঠিক পরিকল্পনা :
প্রতিদিনের কর্মপরিকল্পনা আগেই ঠিক করে রাখতে হবে। কাজের তালিকা করতে হবে। গুরুত্ব অনুসারে কাজকে ১,২,৩ সিরিয়াল করতে হবে। পেন্ডিং কাজগুলো একটা তালিকা করতে হবে। প্রতিদিনের কাজের ফাঁকে ফাঁকে পেন্ডিং কাজগুলো শেষ করে ফেলতে হবে। একটি করে কাজ শেষ হলে টিক চিহ্ন দিয়ে রাখতে হবে।
 
২. সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণ:
 যেকোনো প্রতিষ্ঠান লক্ষের সাথে কর্মী হিসেবে যদি নিজের লক্ষ্য ঠিক করা না যায় তাহলে ব্যাপারটা মাঝিবিহীন নৌকার মতই হবে।সুতরাং অবশ্যই সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে লক্ষ্যটি যেন বাস্তব সম্মত এবং অর্জন করার মত হয়।
 
 
৩.কাজের শেষ সীমা নির্ধারণ :
কোন কাজেই অনির্দিষ্টকালের জন্য সেটা রাখা উচিত নয়। একটি নির্দিষ্ট সীমা নির্ধারণ করতে হবে। কাজগুলোকে স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী এই দুই ভাগে ভাগ করতে হবে। কাজের ধরন ও  পরিধি বুঝে প্রতিটি কাজের জন্য সময় নির্ধারণ করতে হবে। সব সময় কর্তৃপক্ষের আদর্শের জন্য বসে না থেকে কাজ নিজের মনে করে সেখানে নিজের কর্তৃত্ব দেখাতে হবে।
 
৪. গুরুত্বের ভিত্তিতে কাজের শ্রেণিবিন্যাস:
সব কাজকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও কম গুরুত্বপূর্ণ এই দুই ভাগে ভাগ করতে হবে। হয়তো পরের দিনই অফিসে একটি জরুরি মিটিং আছে সুতরাং প্রথমে সেই মিটিংয়ের এজেন্ডা তৈরি করতে হবে। কিছু কাজ গ্রুপে করতে হয় কিছু কাজ একান্তই নিজের। চেষ্টা করতে হবে গ্রুপের কাজে নিজের অংশটি সময়ের মধ্যেই করে ফেলতে। তা না হলে পুরো কাজটি আটকে যাবে। সব কাজকে দৈনিক সাপ্তাহিক ও মাসিক এ তিন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।
 
৫. সঠিক কাজ সঠিক সময়ে করা :
প্রবাদে আছে  সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের দশ ফোঁড়। যখনকার কাজ ঠিক তখনই করে ফেললে কাজা বোঝা হবে না।
 
সময় ব্যবস্থাপনার উপকারিতা :
সময়ের সঠিক ব্যবহার একজন মানুষের ব্যক্তিগত ও কর্ম জীবনকে করে তোলে সুশৃংখল সমাজ ব্যবস্থ উপকারিতা অনেক
 
১. সময়ানুবর্তী ও নিয়মানুবর্তী করে তোলা:
সময়ের সঠিক ব্যবহার মানুষকে সময়ানুবর্তী ও নিয়মানুবর্তী করে তোলে পরিকল্পিত কাজ ও কাজের সঠিক নির্দেশনা কাজকে সময়ের মধ্যে নিয়মমাফিক করতে সাহায্য করে।
 
২. সুসংগঠিত করা :
সঠিক সময়ে কাজের তালিকা করে কাজ করলে মানুষ সবকিছু সুন্দর ভাবে করতে পারে। তার ডকুমেন্ট জরুরি ফাইল ফোল্ডার অন্যান্য অফিস সামগ্রী গোছালো থাকে এবং এগুলো খুঁজে পেতে তার অযথা সময় নষ্ট হয় না সময় বাঁচাতে সেসব কিছুই সুসংগঠিত করে।
 
৩. নৈতিক ও আত্মবিশ্বাসী করা :
সময়ের কাজ সময়ে করলে একজন ব্যক্তিকে আর কাজ না হবার জন্য হীনমন্যতায় ভুগতে হয় না অথবা অযথা চাতুরির আশ্রয় নিতে হয় না এছাড়াও সেসব আর আস্থাভাজন অপছন্দনীয় হয়ে ওঠে ফলে সে নৈতিকভাবে দৃঢ় চরিত্রের অধিকারী আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে।
 
৪. লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বুঝতে সাহায্য করে :
সময়মতো কাজ শেষ করলে মানুষ তার স্ব-স্ব ক্ষেত্রে সাফল্যের চূড়ায় অবস্থান করতে পারে সে খুব সার্থকতার সাথে তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ঠিক করে সেই অনুযায়ী সামনে আগাতে পারে।
 
৫. সময়মতো কাজ শেষ হলে প্রতিদিনের কাজের ধকল আর দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
 
৬. সময় ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কাজ করলে সময় মত কাজ শেষ হয়ে যাবে যার ফলে কাজকে আর কখনোই বোঝা মনে হবে না।
 
সময় ব্যবস্থাপনার কৌশল:
সময় ব্যবস্থাপনা আসলে সাফল্যকে হাতের মুঠোয় আনতে সময়ের সঠিক ব্যবহার। এটি অর্জনে নিম্নলিখিত কৌশলগুলো অবলম্বন করা যেতে পারে 
 
১.কাজের গুরুত্ব ঠিক করা।
২.নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কাজ শেষ করা।
৩.গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি কাজের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা।
৪. সবসময় কর্তৃপক্ষ বা বসের নির্দেশের অপেক্ষা না করা।
৫. সব সময় লক্ষ্য ঠিক রাখা।
৬. প্রতিদিন নিজের জন্য চায়ের ব্রেক নেট ব্রাউজিং সোশ্যাল মিডিয়া ও ব্যক্তিগত ফোন কলের জন্য সময় বের করা I
৭.বাস্তবসম্মত ও অর্জনযোগ্য লক্ষ্য ঠিক করা।
৮.অতিরিক্ত কাজের বোঝা না নেয়া।
৯.সুশৃংখল নিয়মানুবর্তী ও সময়ানুবর্তী হওয়া।
১০. প্রত্যেক জিনিস হাতের কাছে গুছিয়ে রাখা বিভিন্ন ডকুমেন্ট ফাইল ছোট ছোট স্টেশনারিজ গুছিয়ে রাখা এবং অপ্রয়োজনীয় জিনিস সরিয়ে ফেলা।
১১. প্রতিষ্ঠান কর্মক্ষেত্রকে শুধুমাত্র টাকার উৎস মনে না করে এদিকে নিজের বলে ধারণা লালন করা।
১২. হাতের কাছে নোটপ্যাড কলম রাখা এবং ছোট ছোট জরুরি তথ্য সেখানে লিখে রাখা । কোন ছেড়া কাগজ কিছু না লেখা।
 
কর্পোরেট জগতে সময় ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব:
কর্পোরেট অফিসগুলো নিজেদের প্রয়োজনেই অনেক বেশি গোছানো এবং তারা প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে সময়ের ব্যাপারে এবং কাজের গুণগত মানের ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন ।এখানে সময় ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব অনেক। 
 
১. প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানকে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কাজ শেষ করতে হয় । সময় ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কাজ করলে প্রতিষ্ঠান কর্মীরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারে।
 
২. কর্মীদেরকে সময় ব্যবস্থাপনা মাধ্যমে কাজের গুরুত্ব অনুধাবন করতে সাহায্য করে ।অতিরিক্ত কাজের চাপ কাউকে হতাশ করতে পারবে না এবং তারা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে জরুরি কাজগুলো শেষ করতে পারবে ।
 
৩. ফলপ্রসূ সময় ব্যবস্থাপনা ব্যক্তিকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, গ্রাহক এবং অধস্তন কর্মকর্তাদের কাছে প্রিয় করে তোলে। সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে অসুবিধা হলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাহায্য নিতে হবে ।সমস্যার জায়গাগুলোতে অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই। যেখানে সমস্যা সেখানে সমাধান বের করতে হবে ।কাজ শেষে প্রত্যেকটি ব্যাপার আবার চেক করতে হবে।
 
৪. সঠিক সময় ব্যবস্থাপনা পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি করে এবং অল্প সময়ের মধ্যে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছানো ব্যাপারে সহায়তা করে ।যারা সময়ের কাজ সময়ে করতে পারেনা তারা কিছু খোড়া অজুহাত দাঁড় করায়, যেমন অতিরিক্ত কাজের প্রেসার ,সময় স্বল্পতা ইত্যাদি।
 
৫. যিনি নিজের সময় ব্যাপারে শ্রদ্ধাশীল তিনি সহজেই বুঝতে পারেন অন্যরা কতখানি সময়ের অপচয় করছে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারেন।
 
কর্মক্ষেত্র ফলপ্রসূ সময় ব্যবস্থাপনার উপায় :
 
১. নিজের লক্ষ্য সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা উচিত। নিজের কাজ অনেক বেশি মনে হয় অথবা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করা সম্ভব হবে না বলে মনে হয়, সে ক্ষেত্রে অফিসের বসকে বিষয়টি বুঝিয়ে বলতে হবে  যে কোন কাজ দিলেই সেটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে সসঠিক সময়ে শেষ করতে না পারলে নিজের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হবে।
 
২. একটি কাজকে সমানভাবে সবার মধ্যে ভাগ করে দিতে হবে ।অধিনস্তদের দিয়ে কাজ করিয়ে নিতে হবে ।টিম লিডার হিসেবে যদি সব কাজ নিজেই করতে চান তাহলে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হবে নিজের দক্ষতা সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। 
 
৩. নিজেকে সুসংগঠিত রাখতে হবে ।নিজের ফাইল, জরুরী নথি, ভিজিটিং কার্ড ,ফোল্ডার সব গুছিয়ে রাখতে হবে।
 
৪. প্রতিষ্ঠানের প্রতি অনুগত থাকতে হবে। শুধুমাত্র বসকে দেখানোর জন্য কাজ করার অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে। মনে রাখতে হবে কাজের জন্যই আপনি বেতন পাচ্ছেন ।নিজের কাজে মনোযোগী তো মনোযোগী হতে হবে। অবশ্যই আত্মীয় স্বজন, বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের খোঁজ নিতে হবে। তবে কাজের সময় সেটি যেন অনেক দীর্ঘ সময় ধরে না হয় সেটি খেয়াল রাখতে হবে।
 
৫.আগে থেকেই কাজের পরিকল্পনা করে রাখতে হবে। আমাদের প্রত্যেকের কাজের একটি নির্দিষ্ট গতি ও ধরন আছে। শুধু কাজ করতে হবে বলেই কাজ না করে ভালোবেসে কাজ করতে হবে।
 
৬.লাঞ্চ ব্রেকের সময় খাবার খাওয়া উচিত তা না হলে ঘুম ঘুম লাগবে এবং কাজের স্বতঃস্ফূর্ত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
 
৭. সময়ানুবর্তী হতে হবে ।
 
৮. কোন ছোট কাজকে অবহেলা করা যাবে না ।যেমন ,জরুরি কাগজগুলো আপনি যদি বিষয়ভিত্তিক ফাইল করেনা রাখেন হয়তো জরুরী মিটিং এর আগে সমস্যায় পড়তে পারেন।
 
ছাত্রদের সময় ব্যবস্থাপনার কৌশল:
ছাত্রজীবনের সময়ের সঠিক ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।  কারণ ছাত্র জীবনের সময়ের অবহেলা মানুষের জীবনকে ব্যর্থতার ভরে দিতে পারে জীবন হয়ে উঠতে পারে দুর্বিষহ ছাত্রজীবনে সময় ব্যবস্থাপনার জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলো গুরুত্ব দিতে হবে।
 
১.নিজের জন্য লক্ষ্য ঠিক করা:
ছাত্রদের প্রথমে জানতে হবে তারা জীবনে কি অর্জন করতে চায় ।একটি কাগজ নিয়ে প্রথমে লিখতে হবে পাঁচ বছর পর সে নিজেকে কোথায় দেখতে চায়। সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা ঠিক করতে হবে। ছাত্রদের দুই রকমের পরিকল্পনা থাকতে হবে একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা অন্যটি স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা। যেমন, কেউ যদি বিসিএস ক্যাডার হতে চায় তাহলে গ্রাজুয়েশন কোর্স শুরু করার প্রথম থেকেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি চাকরির পরীক্ষার জন্য পড়তে হবে। 
 
২. পড়ার টেবিল গুছিয়ে রাখা:
নিজের বই খাতা নোট কলম পেন্সিল জ্যামিতি বক্স সবকিছু সুন্দর করে হাতের কাছে সাজিয়ে রাখতে হবে। যেন পড়তে বসে সময় নষ্ট না হয়।
 
৩. পাঠ পরিকল্পনা তৈরি করা  : 
পড়ার প্রথমেই বুঝতে হবে কোন বিষয়গুলো জরুরি গুরুত্বপূর্ণ এবং আগে পড়তে হবে পুরো সিলেবাস ভাল করে জানতে হবে তারপর প্রত্যেক সাবজেক্ট এর গুরুত্ব অনুযায়ী স্টাডি প্ল্যান তৈরি করতে হবে একদিনে কতগুলো সাবজেক্ট গুলো শেষ করা যাবে সেটার তালিকা তৈরি করতে হবে। এটা নিশ্চিত করতে হবে যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো আগে পড়া হয়েছে কিনা তারপরে অপেক্ষাকৃত সহজ বিষয়গুলো পড়তে হবে দিনের শুরুতেই যেসব গুরুত্বপূর্ণ নয় সেগুলো নিয়ে পড়লে শুধুমাত্র সময়ের অপচয় হবে।
 
৪. পঠিত বিষয় মার্ক করা :
যে যে বিষয় গুলো পড়া হয়ে গেছে সেগুলো দাগ দিয়ে রাখতে হবে। সেলফ মোটিভেশন হচ্ছে সাফল্যের পথে প্রধান পাথেয়। 
 
৫. পড়ার সময় অযথা খাওয়া বন্ধ করতে হবে :
পড়ার সময় অনেকেরই অভ্যাস থাকে চকলেট চিপস খাওয়া। এসব খাবারের পরিবর্তে ফল বা সালাদ খাওয়া ভালো। কারণ বার্গার ,পিজা,  ফাস্টফুড শক্তি যোগানোর চাইতে অনেক বেশি দুর্বল করে তোলে এবং ওজন বাড়িয়ে দেয়।
 
৬.নিজের SWOT অ্যানালিসিস করা:
S তে Strength, W   তে   Weakness, O  তে    Opportunity এবং T তে Threat বোঝায়।  পড়তে বসে খুঁজে বের করতে হবে কোথায় দুর্বলতা এবং কোথায় আরো বেশি পরিশ্রম করতে হবে। কঠিন বিষয়গুলো কে বাদ দেয়া কোন কাজের কথা না।  নিজের সাবজেক্টের বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করে কঠিন সাবজেক্ট একটু বেশি সময় দিতে হবে। যৌক্তিকতার ভিত্তিতে বিচার করতে হবে।
 
৭. পড়ায় বাধা সৃষ্টি করে এমন সব দূরে রাখতে হবে :
পড়ার সময় নিজের কাছে ,আশেপাশে ম্যাগাজিন ,কৌতুকের বই, গল্পের বই, সিডি, ভিডিও গেম , মোবাইল এগুলো রাখা যাবে না। টিভি দেখা এবং পড়া একই সময়ে করা যাবে না। এটা শুধুমাত্র সময়ের অপচয় হবে।
 
৮. সব পড়া শেষ হলে প্রতিদিন রিভিশনের জন্য সময় রাখতে হবে।
 
৯. দীর্ঘ সময় ফোন করে থাকা যাবে না :
পড়ার সময় আসলে নিজের গুরুত্ব টা বুঝতে হবে। পড়ার সময় অনেকক্ষণ ধরে ফোনে কথা বললে পড়ার মনোযোগ ব্যাহত হয়। পড়ার সময় অনেকক্ষণ ধরে কথা বলা যাবে না। মনে রাখতে হবে বন্ধু আত্মীয়-স্বজন এদেরকে দেবার মত সময় পরেও পাওয়া যাবে। কিন্তু পড়ার সময় নষ্ট হলে পরে আর সেটা মেকআপ দেয়া যায় না।
 
১০. সঠিক সময়ে পড়া :
যখন তখন বই নিয়ে বসলে পড়া হবে না। পড়ার একটি নির্দিষ্ট সময় থাকতে হবে। অনেকে অনেক ভোরবেলা পড়তে পছন্দ করে। অনেক সন্ধ্যায়। অনেকে মাঝরাতে। তবে সারাদিনে পড়ার জন্য বেশ কয়েকটি সময় নির্ধারণ করে রাখতে হবে।
 
পরিশেষে বলা যায় হারানো স্বাস্থ্য ফেরত পাওয়া যায় হারানো অর্থ ফেরত পাওয়া যায় হারানো সময় ফেরত পাওয়া যায় না। এ কথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু মানতে কষ্ট হয়। সময় মানেই সাফল্য, সময় মানে অর্থ, সময় মানে খ্যাতি। সময় মানে সবকিছু। তাই সবাইকে নিজের মত করে সময়ের সদ্ব্যবহার করা জানতে হবে। টাইম ম্যানেজমেন্ট আসলে কিছুই না। এটা একটা অভ্যাস। যেটা একদিনে কারোই হবে না। প্রতিদিন আস্তে আস্তে সময়কে নিজের বশে এনে সময়ের সদ্ব্যবহার করতে হবে। তাহলেই জীবন হবে সুন্দর।
 
 
লেখক : মিলি রহমান, সহযোগী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা ইন্টান্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

পাঠকের মন্তব্য দেখুন
মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি - dainik shiksha মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! - dainik shiksha খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ - dainik shiksha এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা - dainik shiksha মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! - dainik shiksha মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0067369937896729