টাকার অভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না শিক্ষক বাবা ও ছেলের

রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি |

শিক্ষক বাবা মো. নুরুল ইসলাম ও ছেলে মো. মামুন মিয়া দুই জনেই পুঙ্গ জীবন যাপন করছেন। কর্মহীন হওয়ায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন ছয় সদস্যের একটি পরিবার। চিকিৎসক বলছেন উন্নত চিকিৎসা করা হলে স্বাভাবিকভাবে জীবন যাপন করতে পারবেন তারা। তাই পরিবারটি সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে।

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার রৌমারী সদর ইউনিয়নের ব্যাপারীপাড়া (নুরপুরপাড়া) গ্রামের মৃত্যু আবুল হোসেনের ছেলে শিক্ষক নুরুল ইসলাম (৬৯)।  তিনি শিক্ষা জীবন শেষ করে ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে স্থানীয় নুরপুর দারুচ্ছুন্নাহ দাখিল মাদরাসায় ইবতেদায়ী শাখায় সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। ওই মাদরাসায় সামান্য টাকা বেতন পেতেন। সেই টাকা দিয়ে কোন মতে চলতো তার সংসার। ভাগ্যের কি পরিহাস চাকরিতে কর্মরত থাকাবস্থায় অসুস্থ হয়ে তার দুই পা বাকা হয়। এরপর দু পা দিয়ে হাটাচলা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়।
 
এ অবস্থায় পরিবারের লোকজনের ও শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় তাকে মাদরাসায় নিয়ে যেতেন এবং ছুটি শেষে একইভাবে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হতো। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি চাকুরি থেকে অবসরে যান এবং মাদরাসা থেকে এককালীন প্রায় ২ লাখ টাকা পান। এ টাকা দিয়ে তার তিনটি মেয়ের বিয়ে দেয়া হয়। এতে তার সহায় সম্বল সব শেষ হয়ে যায়।

অপর দিকে সংসারের দায়িত্ব পড়ে তার একমাত্র ছেলে মামন মিয়ার কাছে। সে ঢাকা শহরে দিনমুজুরের কাজ করে যা পায় তা দিয়ে অতিকষ্টে সংসার চলতো তাদের। দেড় বছর আগে এক ব্যক্তির সহযোগিতায় ইউনিটি পরিবহনে হেলপার হিসেবে কাজ করেন। এই কাজের বিনিময় মালিক তাকে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা দিত প্রতিদিন। সে তার শারিরিক প্রতিবন্ধী বাবা, বৃদ্ধ মা, স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে অনাহারে অর্ধহারে চলত তার দিন। বছরের বিশেষ কিছু দিনেও ভালো খাবার দিতে পারতেন না পরিবার পরিজনের মুখে।  

এরই মধ্যে নেমে আসে তার ঘরে অন্ধকারের ছায়া। গত ৭ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ জেলার ভৈয়লর সংলগ্ন রাস্তায় রাত ২ টার দিকে ইউনিটি পরিবহনটি ঢাকা থেকে রৌমারী উদ্দেশ্যে আসছিল। এসময় হেলপার মামন বাসের দরজায় দাড়ানো অবস্থায় অপর দিক থেকে আসা একটি ট্রাক তাকে ধাক্কা দিলে সে চলন্ত বাস থেকে রাস্তায় পড়ে এবং একটি পা ভেঙে চুর্ণবিচুর্ণ হয়। এসময় ওই বাসে থাকা স্টাফরা তাকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরবর্তীতে আহত থাকা অবস্থায় আরও অবনতির দিকে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে পুঙ্গ হাসপাতালে রেফার্ড করেন।

মামন মিয়া জানান, ৩০৫১ নং ইউনিটি পরিবহন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা হাবিবুর রহমান চিকিৎসার সব দায়িত্ব নেয়ার আশ্বাস দিলেও তিনি পাত্তাই দিচ্ছেন না। এরই মাধ্যে তাদের হাতে থাকা সহায় সম্বল সব শেষ হয়ে যায়। টাকার অভাবে চিকিৎসা নিতে না পারায় বাড়িতে পুঙ্গ জীবন যাপন করছেন। ওই পরিবারটি অনাহারে অর্ধহারে দিনকাটাছে। সমাজের বিত্তবান ও জনপ্রতিনিধিগণ চিকিৎসার্থে এগিয়ে না আসলে নিঃস্ব হয়ে যাবে পরিবারটি। 

চিকিৎসকরা বলছেন, উন্নত চিকিৎসা করা হলে বাবা-ছেলে উভয় সুস্থ হয়ে উঠবেন।

শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষক নুরুল ইসলাম স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সমাজের বিত্তবানসহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য আকুতি জানিয়েছেন। পরিবারটির সঙ্গে যোগাযোগের ফোন নম্বর ০১৭৬২৪৪২১২২।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ঢাবি-জাবিতে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দুঃখ প্রকাশ - dainik shiksha ঢাবি-জাবিতে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দুঃখ প্রকাশ সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স নিয়ে যা বললেন সারজিস - dainik shiksha সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স নিয়ে যা বললেন সারজিস পিটিয়ে হত্যার আগে সেই ব্যক্তিকে ভাত খেতে দিয়েছিলেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha পিটিয়ে হত্যার আগে সেই ব্যক্তিকে ভাত খেতে দিয়েছিলেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা দ্বাদশ শ্রেণির বিষয়-গ্রুপ পরিবর্তনের সময় বাড়লো - dainik shiksha দ্বাদশ শ্রেণির বিষয়-গ্রুপ পরিবর্তনের সময় বাড়লো ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা - dainik shiksha ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ করার প্রস্তাব - dainik shiksha সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ করার প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0056159496307373