সর্বজনীন পেনশন ‘প্রত্যয়’ স্কিম বাতিলের দাবিতে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টানা তৃতীয় দিনের কর্মবিরতিতে অচল হয়ে পড়েছে সারা দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম। ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি।
বুধবার (৩ জুলাই) সকাল থেকে সারা দেশের ৩৫ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় দিনের মতো সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে।
দৈনিক আমাদের বার্তা প্রতিনিধি জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় দিনের মতো ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ছিলো। প্রশাসনিক ভবনের দাপ্তরিক কার্যক্রমও হয়নি। এ কর্মবিরতির সমর্থনে এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের মূল ফটকের ভেতরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকেরা।
এ সময় ফার্মেসি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. ফিরোজ আহমেদ বলেন, সর্বজনীন পেনশন ‘প্রত্যয়’ স্কিমে শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করা হলে একজন শিক্ষক দেড় কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। প্রত্যয় স্কিমে শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে।
তিনি পেনশন কর্তৃপক্ষকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ক্ষতি করে ভালো থাকতে পারবেন না। শিক্ষকেরা দেশের বিবেক। দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা তাদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছে। সুপার গ্রেডের জন্য আন্দোলন করছে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের বেতন স্কেল নিয়ে সম্মানহানি করা হচ্ছে। আমাদর যে পেনশন স্কিম ছিলো সেখান থেকে আমাদের সরিয়ে ভবিষ্যতে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা হচ্ছে।
দৈনিক আমাদের বার্তার জবি প্রতিনিধি জানান, ‘প্রত্যয়’ স্কিম বাতিলের দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। ফলে বন্ধ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম।
শিক্ষকদের কর্মসূচির বিষয়ে জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. শেখ মাশরিক হাসান বলেন, আমরা বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সঙ্গে সমন্বয় করে আন্দোলন করছি। পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত একইভাবে আমাদের আন্দোলন চলবে।
এদিকে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের দৈনিক আমাদের বার্তার প্রতিনিধিরা একই ধরনের কর্মসূচির সংবাদ পাঠিয়েছেন।
বাংলাদেশ আন্তবিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী ফেডারেশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী পরিষদের উদ্যোগে সাধারণ সম্পাদক মো. আসাদুজ্জামান এর সঞ্চালনায় এবং সভাপতি মো. শরীফ হোসেন ভূইয়ার সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সম্মুখে কর্মবিরতি ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় বক্তারা বলেন, রাতের একটি কুচক্রী মহল এবং সচিবরা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংসের পাঁয়তারা করছে। প্রত্যয় স্কিমের ফলে বেতন, উৎসব ভাতা কিছুই থাকবে না। আর ৩০/৪০ বছর পরে যে পেনশনের সুবিধা দেখানো হচ্ছে সেটা আমরা প্রতিমাসে পাঁচ হাজার টাকা করে কোনো বিমায় রাখলেও পাবো তাহলে এই প্রত্যয় স্কিমের যৌক্তিকতা কী আমরা বুঝি না।
এর আগে গত রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে ‘প্রত্যয়’ স্কিম বাতিলের দাবিতে সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণা দেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া। তাদের দাবিগুলো হলো-‘প্রত্যয়’ স্কিমের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন।
প্রসঙ্গত, গত ১৩ মার্চ একটি প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, সব স্ব-শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা ও তাদের অধীন অঙ্গ-প্রতিষ্ঠানগুলোর চাকরিতে যেসব কর্মকর্তা বা কর্মচারী চলতি বছরের ১ জুলাই ও তার পরে নতুন যোগদান করবেন, তাদের সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইনের অন্তর্ভুক্ত করবে সরকার।