টিসিবির লাইনে মধ্যবিত্তের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরাও

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক |

আমরা যারা মেসে থাকি, কমবেশি সবারই আর্থিক সমস্যা আছে। চাইলেই বাড়ি থেকে যখন তখন টাকা আনতে পারি না। এ কারণে সবাই মিলে একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সপ্তাহে একবার একজন টিসিবির লাইন থেকে বাজার করব। সে অনুযায়ী আজকে আমার বাজার ছিল। তাই আর ক্লাসে যাওয়া হয়নি। দুই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে প্রয়োজনীয় বাজার করলাম। 

কথাগুলো বলছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আইরিন সুলতানা। 

ফাইল ছবি

হতাশা মেশানো কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে রাজধানীতে এসেছি পড়ালেখার উদ্দেশ্যে। কিন্তু খরচ যেভাবে বাড়ছে তাতে সামনে কী যে হবে, কিছুই বুঝতে পারছি না। এর একটা সুরাহা দরকার। সরকারের কাছে সবিনয় অনুরোধ, দ্রব্যমূল্যের দিকটা একটু দেখেন। তাতে আমাদের মতো শিক্ষার্থীসহ নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্তরা উপকৃত হবেন।

একই কথা কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী এনামুলের মুখেও।

তিনি বলেন, আগে মেসে তিন হাজারের মধ্যে তিনবেলার খাবার হলেও এখন লাগছে প্রায় চার হাজার টাকা। খরচ কমাতে তাই বাধ্য হয়ে মেসের সবাই সপ্তাহে অন্তত দুবার টিসিবির ট্রাক থেকে মালামাল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারের মতো এমন চিত্র রামপুরাতেও। সেখানকার এক মুদি দোকানি বলেন, পণ্যের যে দাম তাতে চক্ষুলজ্জা ফেলে সবাই টিসিবির পণ্য নেয়। নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্তের পাশাপাশি বড়লোকও খোঁজ পেলে ড্রাইভার-কাজের লোক দিয়ে পণ্য নিয়ে যায়।

কথা হয় সিএনজি অটোরিকশাচালক বায়জিদ মুন্সির সঙ্গে। তিনি বলেন, দুই ঘণ্টা দাঁড়ালে একটা ট্রিপ মিস হবে। কিন্তু পণ্য পেলে তো ৪০০ টাকা সাশ্রয় হবে। এ কারণেই টিসিবির লাইনে দাঁড়িয়েছি।

টিসিবি লাইনে আড়াই ঘণ্টা দাঁড়ানো আইসক্রিম বিক্রেতা ময়নুল। তিনি বলেন, গাড়ি দেখলেই আর রক্ষা নেই, পেছনে পেছনে মানুষ মৌমাছির মতো ছুটে আসে। আর এখন তো ফোনের যুগ। সবাই মুহূর্তেই খবর পেয়ে যায়। এরপরও কী করা, জিনিস কিনতে লাইনে দাঁড়ানো।

টিসিবি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর ৫০টি স্থানে ফ্যামিলি কার্ড ছাড়া বিশেষ ট্রাক সেলে পণ্য বিক্রি করে টিসিবি। প্রতিটি ট্রাকে ৩৫০ জনের জন্য পণ্য থাকে। তবে অধিকাংশ জায়গায়ই নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষের চেয়ে বেশি মানুষ উপস্থিত থাকেন, যারা পণ্য কিনতে পারেন না।

টিসিবির এসব পণ্যের মধ্যে লিটারপ্রতি ভোজ্যতেল ১০০ টাকা, ১ কেজি মসুর ডাল ৬০ টাকা, চাল ৩০ টাকা ও আলু ৪০ টাকায় কেনা যায়। এই চার পণ্য কিনতে একজন গ্রাহককে গুনতে হয় ৫৯০ টাকা। এই একই পণ্য খুচরা বাজার থেকে কিনতে লাগে প্রায় ১ হাজার টাকার মতো। অর্থাৎ, টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য কিনলে অন্তত ৪শ’ টাকার বেশি সাশ্রয় হয়।

এ কারণে টিসিবির লাইনে মাছ-মাংস ও সবজি বিক্রির দাবি তুলেছেন ক্রেতারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় টিসিবির লাইনে দাঁড়ানো গৃহিণী খাদিজাতুল কোবরা বলেন, টিসিবি থেকে শুধু চারটা জিনিস কেনা যায়। চাল, মসুর ডাল, আলু আর তেল। মাছ-মাংস বা কোনো তরকারি পাওয়া যায় না। কিন্তু এটা দরকার। বিষয়টি ভেবে দেখতে সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি। তাহলে আমাদের মতো মধ্যবিত্ত মানুষ আরেকটু ভালো থাকতে পারবে।

একই কথা শাহরিয়ার রোকনের মুখেও। তিনি বলেন, জিনিসপত্রের যে দাম তাতে পেরে উঠছি না। সরকারের প্রতি দাবি, টিসিবিতে যেন মাছ-মাংস-সবজিও বিক্রি করা হয়। তাহলে আমাদের মতো নিম্ন-মধ্যবিত্তদের আর কিছু লাগবে না।

এ বিষয়ে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্যবাহী ট্রাকে দায়িত্বরত একজন বলেন, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্তের সঙ্গে বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেসে থাকা শিক্ষার্থীরাও এখন লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনতে আসছেন। এ সময় প্রায়ই তারা মাছ, মাংস ও তরকারি বিক্রির দাবি জানাচ্ছেন। এখন টিসিবি থেকে যদি এসব বিক্রির ব্যবস্থা করা হয় তাহলে আমরা মানুষের কাছে সেভাবেই সবকিছু পৌঁছে দেব।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পাঠ্যবইয়ের কাগজের বার্স্টিং ফ্যাক্টর কমানোর ধান্দায় মুদ্রাকররা - dainik shiksha পাঠ্যবইয়ের কাগজের বার্স্টিং ফ্যাক্টর কমানোর ধান্দায় মুদ্রাকররা বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ না পাওয়া শিক্ষকদের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ না পাওয়া শিক্ষকদের তথ্য আহ্বান কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহে ফের ই-রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha শিক্ষক শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহে ফের ই-রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ ববি উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আল্টিমেটাম - dainik shiksha ববি উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আল্টিমেটাম এসব কিন্তু শিক্ষার্থীদের কাজ নয় - dainik shiksha এসব কিন্তু শিক্ষার্থীদের কাজ নয় প্রাথমিকের দুই ফুটবল টুর্নামেন্টের নাম বদলে গেলো - dainik shiksha প্রাথমিকের দুই ফুটবল টুর্নামেন্টের নাম বদলে গেলো please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0023348331451416