ড. ইউনূসকে বিদেশ যেতে আদালতের অনুমতি নিতে হবে

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় সাজার রায় থেকে অব্যাহতি পাওয়া গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বিদেশ গমনের ক্ষেত্রে আদালতের অনুমতি নিতে হবে। এ মামলার বাকি তিন আসামিকেও বিদেশযাত্রার ক্ষেত্রে একই আদেশ প্রতিপালন করতে হবে।

এ সংক্রান্ত বিষয়ে করা রিভিশন আবেনের ওপর শুনানি নিয়ে সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দিয়েছেন।

একই সঙ্গে ড. ইউনূসসহ চারজনের সাজার রায় স্থগিত করে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের দেয়া আদেশ কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।

এদিন ড. ইউনূসের ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের রায়ের কার্যক্রম স্থগিত করে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের দেয়া আদেশের বিরুদ্ধে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের করা আবেদনের বিষয়ে শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন হাইকোর্ট।

আদালতে আজ কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান। ড. ইউনুসসহ চারজনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন। তার সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার খাজা তানভীর আহমেদ। 

খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ড. ইউনূসসহ চার বিবাদীকে বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে আদালতের (শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের) অনুমতি নিতে হবে। এছাড়া তাদের দণ্ড বাতিলের বিষয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। রুলে তাদের দেয়া ছয় মাসের দণ্ড স্থগিত করে দেয়া আদেশ কেন বাতিল করা হবে না, তা জনেতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।

এর আগে গতকাল রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) শ্রম আইন লঙ্ঘনের এ মামলায় ড. ইউনূসসহ চারজনের সাজার রায় স্থগিত করে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের দেয়া আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর। সেই আবেদনে আদালতের অনুমতি ছাড়া ড. ইউনূস যেন বিদেশ যেতে না পারেন সে বিষয়েও আর্জি জানানো হয়।আবেদন করা হয়েছে।

শ্রম আইন লঙ্ঘনের ওই মামলায় গত ১ জানুয়ারি ড. ইউনূসসহ চারজনকে ছয় মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেন ঢাকার শ্রম আদালত-৩ এর বিচারক বেগম শেখ মেরিনা সুলতানা।

রায় ঘোষণার পর আপিল করার শর্তে তাদের এক মাসের জামিন দেন একই আদালত। ড. ইউনূস ছাড়া অন্য তিনজন হলেন- গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুর জাহান বেগম ও মো. শাহজাহান।

তাদের শ্রম আইনের ৩০৩ (ঙ) ধারায় সর্বোচ্চ ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১০ দিনের কারাদণ্ড দেয়া হয়। অন্যদিকে ৩০৭ ধারায় ২৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১৫ দিনের কারাদণ্ড দেন আদালত।

এরপর আসামিপক্ষ ওই রায়ের বিরুদ্ধে গত ২৮ জানুয়ারি আপিল করেন। শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল আবেদনটি ওইদিন শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। আদালত সে আবেদন মঞ্জুর করে পাঁচ হাজার টাকা বন্ডে এক মাসের জন্য জামিন দেন। রায় ঘোষণার পর আপিলের শর্তে তাদের এক মাসের জামিন দেন একই আদালত। সেই সময়সীমার মধ্যেই আপিল করেন দণ্ডপ্রাপ্তরা।

তৃতীয় শ্রম আদালতের দেয়া রায় আগামী ৩ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত করেন শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে চারজনকে জামিন দেন। পরবর্তী শুনানির জন্য ৩ মার্চ দিন ধার্য করা হয়।

শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের ২৮ জানুয়ারি দেয়া আদেশের বৈধতা নিয়ে আবেদনটি করা হয়েছে বলে জানান আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। তিনি বলেন, রায় স্থগিত করার এখতিয়ার নেই আপিল আদালতের। আইনের যে ধারায় তারা (ড. ইউনূসসহ চারজন) আপিল করেছেন, সে ধারায় পুরো রায় স্থগিতের কোনো বিধান নেই। রায়ে দুটি দিক থাকে। একটি সাজা ও অন্যটি দণ্ড। আপিল ট্রাইব্যুনাল দুটিই স্থগিত করে দিয়েছেন। এই অংশ অবশ্যই বাতিল হওয়া উচিত। কারণ, উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত ও ফৌজদারি কার্যবিধির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

ওই আবেদনের কপি পাওয়ার বিষয়টি জানিয়ে ড. ইউনূসসহ চারজনের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন ‘আসলে আবেদনটি করা হয়েছে হয়রানি করার জন্য। শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে যখন ড. ইউনূসসহ চারজনের আপিল আবেদন করা হয়, সেখানে সাজা সাসপেন্ড চাওয়া হয়েছিল। এটি আবেদনে সুষ্পষ্টভাবে আছে। আপিল ট্রাইব্যুনালে তখন ওনারা (বাদীপক্ষের আইনজীবী) আপত্তি জানান যে সাসপেন্ডেড হবে না, স্টে হবে। উনিই (বাদীপক্ষের আইনজীবী) আপত্তি তুলেছেন, তাহলে বিষয়টি নিয়ে আবার এসে এখানে ক্রিমিনাল রিভিশন (আবেদন) করলেন।

আবেদনের প্রার্থনায় দেখা যায়, তৃতীয় শ্রম আদালতের ১ জানুয়ারি দেয়া রায় ও আদেশের কার্যক্রম স্থগিত করে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের ২৮ জানুয়ারি দেয়া আদেশ কেন বাতিল হবে না, এ বিষয়ে রুল চাওয়া হয়েছে। রুল হলে তৃতীয় শ্রম আদালতের রায় ও আদেশ স্থগিত করে ট্রাইব্যুনালের ২৮ জানুয়ারি দেয়া সিদ্ধান্তের অংশবিশেষের কার্যক্রম স্থগিত চাওয়া হয়েছে।

তৃতীয় শ্রম আদালতের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের প্রতি নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট আদালতের অনুমতি ছাড়া প্রতিপক্ষ (ইউনূসসহ চারজন) যেন দেশত্যাগ করতে না পারেন, সে বিষয়ে নির্দেশনা দেয়ার আর্জিও জানানো হয় আবেদনে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পাঠ্যবইয়ের কাগজের বার্স্টিং ফ্যাক্টর কমানোর ধান্দায় মুদ্রাকররা - dainik shiksha পাঠ্যবইয়ের কাগজের বার্স্টিং ফ্যাক্টর কমানোর ধান্দায় মুদ্রাকররা বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ না পাওয়া শিক্ষকদের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ না পাওয়া শিক্ষকদের তথ্য আহ্বান কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহে ফের ই-রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha শিক্ষক শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহে ফের ই-রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ ববি উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আল্টিমেটাম - dainik shiksha ববি উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আল্টিমেটাম এসব কিন্তু শিক্ষার্থীদের কাজ নয় - dainik shiksha এসব কিন্তু শিক্ষার্থীদের কাজ নয় প্রাথমিকের দুই ফুটবল টুর্নামেন্টের নাম বদলে গেলো - dainik shiksha প্রাথমিকের দুই ফুটবল টুর্নামেন্টের নাম বদলে গেলো please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028290748596191