মহামান্য পোপ ফ্রান্সিসের আমন্ত্রণে ভ্যাটিকান সিটিতে অনুষ্ঠিত মানব সৌভ্রাত্র বিষয়ক সভায় অংশ নিয়েছেন নোবেল লরিয়েট প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী ৩০ জন ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিগণ একটি মানব সৌভ্রাত্র বিষয়ক ঘোষণা প্রস্তুত করতে ভ্যাটিকান সিটিতে সমবেত হন। প্রফেসর ইউনূস এই ঘোষণাপত্রের খসড়া তৈরিতে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন এবং ঘোষণাপত্র চূড়ান্তকরণের সময় তিনি এ-সংক্রান্ত কমিটির সভায় সভাপতিত্ব করেন।
১০ জুন রোমের সেইন্ট পিটার্স স্কোয়ারে জনসমক্ষে এই মানব সৌভ্রাত্র বিষয়ক ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়। পোপ ফ্রান্সিস সেইন্ট পিটার্স স্কোয়ারে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে প্রফেসর ইউনূস কর্তৃক পঠিত এই ঘোষণাপত্রটি তার নিকট থেকে গ্রহণ করার কথা ছিল। অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে ভর্তি থাকায় অনুষ্ঠানে সশরীরে উপস্থিত হতে পারেননি তিনি। ভ্যাটিকানের সেক্রেটারী অব স্টেট কার্ডিনাল পিয়েত্রো পারোলিন পোপের পক্ষে ঘোষণাপত্রটি গ্রহণ করেন।
প্রফেসর ইউনূস এবং নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী নাদিয়া মুরাদ যৌথভাবে ঘোষণাপত্রটি পাঠ করেন এবং উপস্থিত জনগণের তুমুল করতালির মধ্য দিয়ে বিশ্বব্যাপী টেলিভিশন মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচারিত এই অনুষ্ঠানে ঘোষণাপত্রটিতে স্বাক্ষর করেন। পোপ ফ্রান্সিসের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে স্বাক্ষরিত ঘোষণাপত্রটি তার নিকট উপস্থাপন করা হবে।
রোমের সেইন্ট পিটার্স স্কোয়ারে ভ্যাটিকান মানব সৌভ্রাত্র বিষয়ক ঘোষণাপত্রটি ভ্যাটিকানের সেক্রেটারী অব স্টেট কার্ডিনাল পিয়েত্রো পারোলিনের নিকট হস্তান্তরের পর তাঁর সাথে করমর্দন করছেন নোবেল লরিয়েট প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ীদের মধ্যে মারিয়া রেসা, কোস্টারিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট অস্কার আরিয়াস, কলম্বিয়ার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট সান্তোস, লেইমা বোয়ি, তাওয়াক্কুল কারমান, ডেনিস মুকওয়েজ ও শিরিন এবাদি এবং জাতিসংঘ উদ্বাস্তু বিষয়ক হাইকমিশনার (UNHCR), আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA), নিউক্লিয়ার যুদ্ধ নিরোধে চিকিৎসকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন (IPPNW), নিউক্লিয়ার অস্ত্র বিলোপে আন্তর্জাতিক ক্যাম্পেইন (ICAN), কৃষি আর্থিক সেবা কর্পোরশন (AFSC), ইউনিসেফ (UNICEF) সহ বিভিন্ন নোবেল জয়ী সংস্থা এই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন ও চূড়ান্তকরণের কাজে জড়িত ছিলেন।
মানব সৌভ্রাত্রের এই ঘোষণায় প্রফেসর ইউনূসের “তিন শূন্য”র পৃথিবী অর্থাৎ শূন্য বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীকরণ ও শূন্য বেকারত্বের পৃথিবী প্রতিষ্ঠার রূপকল্পটি বিশেষভাবে স্থান পেয়েছে। ঘোষণাপত্রে রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে যুদ্ধ ও সংঘাত নিরুৎসাহিত করতে বিভিন্ন দেশে প্রফেসর ইউনূস প্রস্তাবিত শান্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয় স্থাপনের ধারণাটি আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করা হয়।
ঘোষণাপত্রে প্রকৃতির সাথে শান্তি স্থাপনে পরিবেশগত সৌভ্রাত্র গড়ে তোলা, সৃষ্টির প্রতি দায়িত্ব পালন এবং টেকসই জীবনপ্রণালী প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানানো হয়। বিশেষভাবে জোর দেয়া হয় সকল মানুষের সমানভাবে এগিয়ে যেতে অধিকতর সামাজিক সৌভ্রাত্র, সকলের জন্য মর্যাদা ও সমান অধিকার নিশ্চিতকরণ, শিক্ষার প্রসার, মর্যাদাপূর্ণ কাজ ও সুবিচার, আতিথেয়তা, সংহতি ও সহযোগিতা, সকলের জন্য খাদ্য নিশ্চিত করতে টেকসই কৃষি, একটি যথার্থ প্রতিবেশগত উত্তরণ, এবং একটি সামাজিক সংহতি অর্থনীতির উপর। এই সৌভ্রাত্রের চূড়ান্ত লক্ষ্য একটি মহত্তর সমাজ ব্যবস্থা যা পৃথিবীতে স্বাধীনতা ও সাম্য ত্বরান্বিত করবে।