ডাচ-বাংলার সোয়া ৩ কোটি টাকা সোনালী ব্যাংকে হাওয়া, গ্রেফতার ১

নিজস্ব প্রতিবেদক |

গেল জুলাই মাসে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের গাইবান্ধা শাখার সোয়া তিন কোটি টাকার একটি চেক সঠিক অ্যাকাউন্টে না পাঠিয়ে অন্য একটি অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেয় সোনালী ব্যাংক লিমিটেড গাইবান্ধা প্রধান শাখা। আর এ ঘটনা গোপন রাখার অভিযোগ উঠেছে সোনালী ব্যাংকের বিরুদ্ধে। শুরুতে সোনালী ব্যাংক কোনো আইনি পদক্ষেপ না নিয়ে ব্যাংকের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা করে চায়। তাতেই প্রকাশ হয়ে যায় ঘটনা। আর ভুল অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানোর ঘটনায় সোনালী ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তাকে শাস্তির আওতায় আনা হয়নি। এমনকি ডাচ-বাংলা ব্যাংক  থেকেও নেওয়া হয়েছিল না কোনো আইনি ব্যবস্থা।

ডাচ-বাংলা ব্যাংক, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও সোনালী ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড গাইবান্ধা শাখার একটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে সোনালী ব্যাংকের গাইবান্ধা প্রধান শাখায়। এই অ্যাকাউন্টে জমা হওয়া ৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা ঢাকায় ডাচ-বাংলা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানোর প্রয়োজন পড়ে। এজন্য গত ৬ জুলাই গাইবান্ধা ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ম্যানেজার সোনালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার (ক্যাশ) বি.এস.এম. ফনি ভূষণ বর্মনকে একটি চেক ও জমা ভাউচার দেন। ফনি ভূষণ বর্মন চেকটি দায়িত্বরত কর্মকর্তা শারমিন নাহারের কাছে সঠিকতা যাচাইয়ের (অথরাইজ) জন্য পাঠান। পরে কম্পিউটারে পোস্টিং দেওয়ার সময় ঢাকার জনশক্তি রপ্তানিকারক সংস্থা আল-আমির ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চলে যায় সমুদয় টাকা। এ ঘটনার এক মাস চার দিন পর গত বুধবার রাতে সোনালী ব্যাংক গাইবান্ধা প্রধান কার্যালয়ের ম্যানেজার মো. জাহিদুল ইসলাম গাইবান্ধা সদর থানায় একটি মামলা করেন। পরে মামলাটি তদন্তের জন্য গাইবান্ধা পিবিআইকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে গাইবান্ধা পিবিআই প্রেস ব্রিফিং করে। ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার এ. আর. এম আলিফ বলেন, গত ৪ আগস্ট সোনালী ব্যাংকের গাইবান্ধা প্রধান শাখার ম্যানেজার মো. জাহিদুল ইসলাম নিয়মিত তদারকি (রুটিন চেক) করার সময় ডাচ-বাংলা ব্যাংকের টাকা ঢাকার আল-আমির ইন্টারন্যাশনালের অ্যাকাউন্টে চলে যাওয়ার বিষয়টি টের পান। এরপর আল-আমির ইন্টারন্যাশনালের ‘স্বত্বাধিকারী’ মো. আবু তাহেরকে মোবাইল ফোনে না পেয়ে তার অ্যাকাউন্ট চেক করে দেখা হয়, তিন কোটি ১০ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। জমা আছে মাত্র ১৫ লাখ।

এ ঘটনায় পরে ঢাকায় সোনালী ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের জেনারেল ম্যানেজার ঢাকায় পিবিআইয়ের অ্যাডিশনাল আইজিপিকে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগ পেয়ে ঢাকা ও গাইবান্ধা পিবিআইয়ের একদল সদস্য গত সোমবার নোয়াখালী সদর থেকে আবু তাহেরকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন মঙ্গলবার বিকেলে আবু তাহেরকে নিয়ে অভিযানে নেমে ঢাকার দারুসসালাম থানার একটি এলাকায় তার শ্যালিকার বাসা থেকে ২০ লাখ টাকা ও পরদিন বুধবার দুপুরে রাজধানীর ভাটারা থানা এলাকার স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক থেকে ১০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। আল-আমির ইন্টারন্যাশনালের ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে, আবু তাহের প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার। তবে পিবিআইয়ের ব্রিফিংয়ে আবু তাহেরকে প্রতিষ্ঠানটির প্রোপ্রাইটর (স্বত্বাধিকারী) হিসেবে তুলে ধরা হয়। প্রতিষ্ঠানটির প্রকৃত মালিক মোহাম্মদ আমিনুল হক। যিনি সিইও হিসেবে দায়িত্বরত রয়েছেন প্রতিষ্ঠানটিতে। মোহাম্মদ আমিনুল হক সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, কাতার, ইউরোপ, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ওমানে জনশক্তি রপ্তানি করে থাকেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরে তার অফিসও রয়েছে। মোহাম্মদ আমিনুল হক বর্তমানে দেশে নেই জানিয়েছেন পিবিআইয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা।

সকালে সংবাদ সম্মেলনে ম্যানেজার আবু তাহেরকে মালিক হিসেবে তুলে ধরায় পিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়েও দেখা দিয়েছে প্রশ্ন।

প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার এ. আর. এম আলিফ আরও বলেন, অ্যাকাউন্টে ৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা পাওয়ার পর আবু তাহের ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা আত্মীয়-স্বজন ও ব্যবসায়িক পার্টনারসহ বিভিন্নজনের কাছে পাঠান, যা উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সোনালী ব্যাংক কর্র্তৃপক্ষ যেহেতু মামলার বাদী, তাই তাদের কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তবে এ ঘটনায় যদি ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত থাকে তবে তা তদন্তে পাওয়া যাবে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ পরিদর্শক মো. আবদুস সবুর, উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ইলিয়াস আলী ও মো. ইমদাদুল হক প্রমুখ।

গাইবান্ধা পিবিআইয়ের পরিদর্শক মো. আবদুস সবুর বলেন, ‘সোনালী ব্যাংক যদি ঘটনা বুঝতে পারার সঙ্গে সঙ্গেই আইনের আশ্রয় নিত, তাহলে পুরো টাকা তখনই উদ্ধার করা সম্ভব হতো। একমাত্র ব্যাংক কর্র্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণেই টাকাগুলো হাতছাড়া হয়ে গেছে। কিন্তু আমরা টাকা উদ্ধারে চেষ্টা চালাচ্ছি। আবু তাহেরকে গাইবান্ধা আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।’

এ বিষয়ে গাইবান্ধা ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপক রাশেদুল হাসান বলেন, ‘একটি অ্যাকাউন্টে সোয়া তিন কোটি টাকা হওয়ায় তা স্থানান্তর করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে চেকসহ জমা ভাউচার সোনালী ব্যাংক গাইবান্ধা প্রধান শাখায় জমা করা হয়। কিন্তু সেই টাকা আমাদের অ্যাকাউন্টে দেওয়া হয়নি। ঈদের ছুটির পর বিষয়টি বুঝতে পেরে কয়েকবার সোনালী ব্যাংককে জানানো হয়। কিন্তু পরে জানা যায়, সেই টাকা অন্য আরেকটি অ্যাকাউন্টে চলে গেছে।’

সোনালী ব্যাংকের ওই শাখার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা অভিযোগ করে বলেন, অন্য অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানোর পর ঘাটতি সমন্বয়ে তাদের সব কর্মকর্তার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা করে চাওয়া হয়।

তবে টাকা চাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে সোনালী ব্যাংক গাইবান্ধা প্রধান শাখার ম্যানেজার মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ভুলবশত এটি পোস্টিং হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। ঘটনাটি পিবিআইকে জানানো হয়। তারা তদন্ত করছে কারা কারা এর সঙ্গে জড়িত। পিবিআই টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে। যারা পোস্টিংয়ের দায়িত্বে আছেন তারা এটি ইচ্ছাকৃত নাকি ভুলবশত করেছেন তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্তে প্রমাণিত হলে তখন দায়ীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026359558105469