ইউনিক আইডি প্রদানের শর্ত অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের নাম বাংলা ও ইংরেজি দুটিই থাকতে হবে। বাংলা ও ইংরেজি নামে আলাদা জন্মনিবন্ধন হওয়ায় জন্ম-মৃত্যু রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে ২৬ লাখ শিক্ষার্থীর তথ্য ঝুলে রয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) বলছে, আওতাধীন এলাকার নাগরিকদের জন্মনিবন্ধনে নাম ও বয়স সংশোধন করবে। কিন্তু জাতীয় শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) বলছে, ইউনিক আইডির জন্য শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের তথ্য হালনাগাদ থাকতে হবে। বিশেষ করে জন্মনিবন্ধন এমন হতে হবে, যা অনলাইনে দেখা যায়।
ইউনিক আইডির জন্য অনেক শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের নাম ও বয়স সংশোধন করতে হচ্ছে। কিন্তু ডিএসসিসির ওই সিদ্ধান্তের কারণে সংশোধন করার পরও অনেক শিক্ষার্থীর তথ্য অনলাইনে দেখা যাচ্ছে না। এ কারণে নাম ও বয়স সংশোধন করতে সিটি করপোরেশনে না গিয়ে জন্ম-মৃত্যু রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে ব্যানবেইস।
গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর নীলক্ষেতে ব্যানবেইস মিলনায়তনে এক কর্মশালায় এ সুপারিশ করেন সংশ্লিষ্টরা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেবে সুশাসন প্রতিষ্ঠার নিমিত্ত অংশীজনের অংশগ্রহণে এই কর্মশালার আয়োজন করে ব্যানবেইস।
ইউনিক আইডি দেওয়ার প্রকল্পের নাম এস্টাবলিশমেন্ট অব ইন্টিগ্রেটেড এডুকেশনাল ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (আইইআইএমএস)। ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীর জন্য একটি ইউনিক আইডি তৈরি এবং সমন্বিত শিক্ষাতথ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি প্রণয়ন করতে ২০১৮ সালের জুলাই মাসে আইইআইএমএসের এ প্রকল্প নেয় সরকার। মূল প্রকল্প ছিল ৩১৩ কোটি ৩১ লাখ টাকার। পরে তা বাড়িয়ে করা হয় ৩৫৩ কোটি ২১ লাখ ৪২ হাজার টাকা।
এই আইডি ১৮ বছরের কম বয়সী শিশুদের দেওয়া হয়। ১৮ বছর পূর্ণ হলে এই আইডির তথ্য দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পাবে শিক্ষার্থীরা। জেলা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে এটি চলতি মাসেই উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে যাবে।
আইইআইএমএস উপপ্রকল্প পরিচালক ড. মো. নাসির উদ্দিন গনি বলেন, বাংলা ও ইংরেজি নামে আলাদা জন্মনিবন্ধন হওয়ায় জন্ম-মৃত্যু রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে ২৬ লাখ শিক্ষার্থীর তথ্য ঝুলে রয়েছে। তারা এখনই আইডি কার্ড পাবে না। তবে সব শিক্ষার্থীই এডুকেশন আইডি (এডু আইডি) পাবে। চলতি মাসের শুরুতেই ইউনিক আইডি কার্ড প্রেসে চলে গেছে। শিগগিরই তা শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে যাবে।
তিনি বলেন, ডিএসসিসির সিদ্ধান্তে অনেক শিক্ষার্থী ভুক্তভোগী হচ্ছে। সিটি করপোরেশনের সার্ভারের সঙ্গে জন্ম-মৃত্যু রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের সার্ভারের মিল নেই। সে কারণে সিটি করপোরেশন থেকে কোনো শিক্ষার্থী বা তাদের অভিভাবক জন্মনিবন্ধনে নাম বা বয়স সংশোধন করলে তা অনলাইনে দেখাবে না। আবার অনলাইনে জন্মনিবন্ধন দেখা না গেলে জন্ম-মৃত্যু রেজিস্ট্রারের কার্যালয় সেই শিক্ষার্থীর তথ্য গ্রহণ করছে না। তাই শিক্ষার্থীরা যাতে জন্ম-মৃত্যু রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে সংশোধনের আবেদন করে, সেই পরামর্শ দিয়েছি।
নীলক্ষেত হাই স্কুলের শিক্ষক আবিদা সুলতানা জানতে চান, জন্মনিবন্ধনের মতো ইউনিক আইডিও সংশোধন করা যাবে কি না? জবাবে ব্যানবেইস কর্মকর্তারা বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্রে যেমন নাম ও বয়স সংশোধন করা হয়, এখানেও করা যাবে। তবে সংশোধনের জন্য ব্যানবেইসে আসতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের মাধ্যমে যথাযথ প্রমাণপত্র নিয়ে আসার অনুরোধ থাকবে।
কর্মশালায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্যানবেইসের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মো. কায়ছার রহমান, পরিচালক (পরিসংখ্যান) অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেন মৃধা, উপপরিচালক (প্রশাসন) মো. জাফর আহম্মদ, উপপরিচালক (অর্থ) মো. ইব্রাহিম খলিল প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন ব্যানবেইসের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মো. সাবের মাহমুদ রিফাত।