ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পর্যালোচনার সুপারিশ মানবাধিকার কমিশনের

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ‘বিতর্কিত’ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পর্যালোচনা করার পক্ষে মত দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। সংস্থাটি মনে করে, স্বাধীন মতপ্রকাশের জন্য একজনের মানবাধিকার লঙ্ঘন করা যেমন ঠিক নয়, তেমনি ওই ব্যক্তিরও উচিত নয় স্বাধীনতার যাচ্ছেতাই ব্যবহার করা। ৯ মে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনের কাছে পেশ করা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের প্রতিবেদনে এ অভিমত ব্যক্ত করা হয়েছে। কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রপতির কাছে এ প্রতিবেদন দেয়।

মানবাধিকারকর্মীরা দীর্ঘদিন স্বাধীন ও কার্যকর মানবাধিকার কমিশন গঠনে ‘প্যারিস নীতিমালা’ অনুসরণের তাগিদ দিয়ে আসছেন। নীতিমালা অনুযায়ী, মানবাধিকার-সংক্রান্ত কাজে সম্পৃক্তদের নিয়ে উন্মুক্ত ও অংশগ্রহণমূলক বাছাই-নিয়োগ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মানবাধিকার কমিশন গঠনের কথা থাকলেও, বাস্তবে এখানে নিয়োগের আগ পর্যন্ত কেউ জানতে পারেন না কারা, কী বিবেচনায় কমিশনের জন্য মনোনীত বা নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। অবশ্য প্যারিস নীতিমালার কিছু বিষয়েও স্পষ্টতা প্রত্যাশা করে কমিশন। ভারতকে ‘এ’ দিলেও বাংলাদেশের মানবাধিকার কমিশনের ক্ষেত্রে ‘বি’ স্ট্যাটাস দেওয়াকে বৈষম্যমূলক মনে করে তারা।

প্রতিবেদনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ করে সাংবাদিকদের হয়রানির খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পর নিন্দা জানিয়ে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার নিশ্চিতের সুপারিশ করা হয়েছে। বিচারবহির্ভূত যে কোনো হত্যা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। আর রাষ্ট্রকেই এ লঙ্ঘন ঠেকাতে হবে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড শূন্যের কোঠায় আনার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অ্যাডভোকেসি চালিয়ে যাচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে কমিশন।
দেশে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মতো অসাম্প্রদায়িক দেশে এ ধরনের হামলা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য বারবার এ অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। কেউ ধর্ম অবমাননা করলে তাঁকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা দরকার বলে মনে করে কমিশন।
নারীর প্রতি সহিংসতার প্রসঙ্গ তুলে প্রতিবেদনে বলা হয়, ধর্ষণের মূল কারণ বের করা গেলে প্রতিরোধের কার্যকর উপায় পাওয়া যাবে। এ জন্য প্রথমবারের মতো কমিশন ধর্ষণের কারণ চিহ্নিত করে সরকারের কাছে কার্যকর সুপারিশ করতে একটি ন্যাশনাল ইনকোয়ারি কমিটি গঠন করে এবং ওই কমিটির ৩৭টি সুপারিশ ১৭টি মন্ত্রণালয় বা দপ্তরে পাঠানো হয়।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন গঠনের পর এক যুগ পার হয়েছে। এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের অন্যান্য মানবাধিকার কমিশনের তুলনায় ১৩ বছরে পা দেওয়া এ কমিশনকে ‘নবীন’ মনে করেন এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নে জনবল বৃদ্ধি এবং তাঁদের দক্ষতা উন্নয়নে অনেক কিছু করা দরকার।

আর স্বাধীনভাবে কাজের স্বার্থেই আর্থিক সীমাবদ্ধতা দূর হওয়া দরকার বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
কমিশন আরও মনে করে, তাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ জনবল বৃদ্ধি ও স্থায়ী অফিস ভবন নির্মাণ। এ জন্য সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ চলমান। পাশাপাশি কমিশনকে কার্যকর ও স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে হলে ‘প্যারিস নীতিমালা’র আলোকে সংশোধন করা জরুরি। প্রতিবেদনে বলা হয়, কমিশন মানুষের ক্ষোভ ও অভিযোগ পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে শুনতে চায়। তবে বাস্তবে জনবল স্বল্পতায় সব অভিযোগ সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আমলে নেওয়া বা নিষ্পত্তি করা সম্ভব নয়।

ই-ফাইলিংসহ তথ্যপ্রযুক্তি-সংক্রান্ত বিষয়ে উন্নতি হলেও কমিশনের অভিযোগ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি এখনও সেকেলে রয়ে গেছে। কমিশন মনে করে, একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশে, যেখানে বহু ধর্ম, বহু ভাষা এবং নৃগোষ্ঠীর সহাবস্থান রয়েছে, সেখানে সবার মানবাধিকার সুরক্ষা অত্যন্ত দুরূহ।

জানতে চাইলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কমিশনের কর্মকাণ্ড, সফলতা তুলে ধরার পাশাপাশি কিছু আইনগত সীমাবদ্ধতার কথা রাষ্ট্রপতিকে বলেছি। জবাবে এগুলো সমাধানে তিনি সম্মত বলে মত দেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্যারিস নীতিমালার আলোকে কিছু অবস্থান স্পষ্ট হওয়া দরকার। প্রতিবেদনে এসব বিষয়ে একাধিক সুপারিশ দেওয়া হয়েছে।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ভিসি নিয়োগের দাবিতে এবার উত্তরবঙ্গ ব্লকেড বেরোবি শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ভিসি নিয়োগের দাবিতে এবার উত্তরবঙ্গ ব্লকেড বেরোবি শিক্ষার্থীদের দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! - dainik shiksha দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণার দাবি জামায়াতের - dainik shiksha ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণার দাবি জামায়াতের শিক্ষক আত্মগোপনে দায়িত্বে ছাত্ররা - dainik shiksha শিক্ষক আত্মগোপনে দায়িত্বে ছাত্ররা ভারতে পাঠ্যবই ছাপানোর বিপক্ষে ৯২ শতাংশ বাংলাদেশি - dainik shiksha ভারতে পাঠ্যবই ছাপানোর বিপক্ষে ৯২ শতাংশ বাংলাদেশি পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা - dainik shiksha পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা ভয়ংকর বিপদের মধ্যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী - dainik shiksha ভয়ংকর বিপদের মধ্যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.004547119140625