দৈনিকশিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের (ডিএসএ) মামলাগুলোর সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সরকারের স্বাধীন কমিশন গঠন করা উচিত বলে মনে করছে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)। গতকাল সিজিএস আয়োজিত ‘অনন্ত দুর্দশা: ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট-এ অভিযুক্তদের অবস্থা’ শীর্ষক ওয়েবিনারে উপস্থাপিত ডিএসএ বিষয়ক চতুর্থ গবেষণা প্রতিবেদনে সরকারের করণীয় হিসেবে এ সুপারিশ করা হয়।
সিজিএস চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের উপস্থাপনায় প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড অধ্যাপক এবং আটলান্টিক কাউন্সিলের অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো ড. আলী রীয়াজ।
ড. আলী রীয়াজ বলেন, ‘ডিএসএর ক্ষেত্রে সরকার মামলার তথ্য প্রকাশ করতে চায় না। এ বিষয়ে সরকারি তথ্য বলতে সংসদে আইনমন্ত্রীর দেয়া তথ্য। সেখানেও পূর্ণাঙ্গ তথ্য নেই। আইনমন্ত্রীর দেয়া তথ্যানুসারে ৭০০১টি মামলা হয়েছে বলা হলেও এই আইনের অধীনে সর্বমোট গ্রেফতার সংখ্যা, কারাগারে আটক ব্যক্তির সংখ্যা এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় সম্পর্কিত কোনো তথ্য জানানো হয়নি।’
তিনি আরো বলেন, সিজিএসের গবেষণায় অক্টোবর ২০১৮ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত দায়েরকৃত ১ হাজার ৪১০টি মামলার বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। এ তথ্যানুযায়ী মোট অভিযুক্ত ৪ হাজার ৪০৪ জন, গ্রেফতার হয়েছেন ১ হাজার ৫১৯ জন। ১ হাজার ৪৮৬ অভিযুক্তের মধ্যে রাজনীতিবিদ ৩১ শতাংশ, শিক্ষার্থী ৯, শিক্ষক ৩ এবং সাংবাদিক ২৯ শতাংশ। পেশা অনুযায়ী মোট গ্রেফতার হয়েছেন ৫৬৩ জন। মামলাগুলোর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর মানহানির জন্য মামলা হয়েছে ১৯০টি, গ্রেফতার হয়েছেন ১৬ এবং অভিযুক্ত হয়েছেন ৪৬৪ জন। মন্ত্রীদের মানহানির জন্য মামলা হয়েছে ৮০টি, গ্রেফতার হয়েছেন ৬৮ এবং মোট অভিযুক্ত হয়েছেন ৩৩৭ জন। রাজনীতিবিদদের মানহানির দায়ে মামলা হয়েছে ২০৮টি, অভিযুক্ত হয়েছেন ৭২৪ এবং গ্রেফতার হয়েছেন ১৩৫ জন। ১০ ভুক্তভোগীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ১২টি মামলার পর্যালোচনার বিচারের আগেই দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক রাখা, চার্জশিট দাখিলে দীর্ঘসূত্রিতা, ব্যক্তিগত স্বার্থে ভিন্নমতাবলম্বীদের অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করার প্রবণতা দেখা যায়।
সিজিএস চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এখন সাইবার নিরাপত্তা আইন নামে এসেছে। এটি আমাদের বাক-স্বাধীনতা, ভোটাধিকার তথা নাগরিক অধিকারগুলোকে সংকুচিত করে ফেলেছে। কয়েকদিন পর ৭ তারিখে নির্বাচনের নামে একটি প্রহসনের নাটক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এবং এটি হয়েও যাবে। এর পর দেখা যাবে এ কর্তৃত্ববাদী সরকার আরো বেশি কর্তৃত্বপরায়ণতার দিকে ধাবিত হবে এবং এ ধরনের সরকারের জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার এ ধরনের আইন। কারণ এ আইনের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ভয় সংক্রমিত করা সম্ভব হচ্ছে। মানুষ এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটা লাইক দিতে বা মন্তব্য করতেও ভয় পায়।এ আইনের জন্য মানুষ এখন স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ করতে পারছে না। তাই এ আইনকে অবশ্যই বাতিল করা প্রয়োজন।’
ওয়েবিনারে উপস্থিত অন্য আলোচকদের মধ্যে ছিলেন মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক ও ভুক্তভোগী মো. আব্দুল কাইয়ুম, রংপুর জেলা জজ কোর্টের অ্যাডভোকেট মো. রায়হান কবীর, আর্টিকেল নাইনটিন বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার রুমকী ফারহানা এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ফারুখ ফয়সল।