বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তিগত কন্টেন্ট এর অভিগম্যতার অভাবে বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষায় অধ্যয়নরত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা নানাভাবে শিক্ষাগ্রহণে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছেন।
সম্প্রতি ভিজুয়ালি ইম্পেয়ার্ড পিপলস সোসাইটি (ভিপস) কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মাঝে পরিচালিত একটি গবেষণায় এ তথ্য জানা গেছে। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) এর ইয়ুথ এনগেজমেন্ট ইন ডেমোক্রেসি (ইয়েড) প্রকল্পের সার্বিক সহায়তায় এবং গ্লোবাল রিসার্চ অ্যান্ড মার্কেটিং (জি আর এম) এর কারিগরি সহায়তায় গবেষণাটি পরিচালিত হয়।
এই গবেষণা দেখা যাচ্ছে, ৭৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী সীমিত পারিবারিক আয়ের কারণে উচ্চশিক্ষার জন্য সহায়ক প্রযুক্তি কিনতে বাধার সম্মুখীন হন। ৯৩ শতাংশ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী তাদের উপযোগী পাঠ্য উপকরণ পান না। উপরন্তু, ৯১ দশমিক ৫৫ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন, দক্ষ প্রশিক্ষকের অভাব রয়েছে। একই সঙ্গে ৯৭ শতাংশ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন ভর্তি কার্যক্রমে প্রবেশগম্যতার অভাবে অন্যের ওপর নির্ভর করেন।
এ ছাড়া অভিগম্যতা বিষয়ে পৃথক আইন এবং এক্সেসিবল কন্টেন্ট তৈরিতে রাষ্ট্রের সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা না থাকায় প্রায় ৯০ শতাংশ সরকারি-বেসরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ও ডিজিটাল সেবায় অংশগ্রহণে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, গত ৯ মার্চ আগারগাঁওয়ের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে ‘উচ্চ শিক্ষায় প্রযুক্তি ব্যবহারে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি হওয়া চ্যালেঞ্জ ও প্রতিবন্ধকতা: বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট” শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি অংশীজনদের সাথে অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি রাজধানীর আগারগাঁওয়ের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে ফিডব্যাক সভা হয়। ওই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন এর সদস্য প্রফেসর ড. মোঃ সাজ্জাদ হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন লেখক, শিক্ষক ও তথ্য প্রযুক্তিবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। এছাড়া আইসিটি ডিভিশনের অ্যাসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) প্রকল্পের ন্যাশনাল কনসালট্যান্ট (অ্যাকসেসিবিলিটি) ভাস্কর ভট্টাচার্য এবং মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) এর প্রকল্প কর্মকর্তা ফারজানা সুলতানা ছিলেন সম্মানিত অতিথি। সভায় সভাপতিত্ব করেন ভিপস সভাপতি অ্যাডভোকেট মোঃ মোশারফ হোসেন মজুমদার।
ফিডব্যাক সভায় আলোচনায় সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েবসাইট ও ডিজিটাল সেবাকে প্রবেশগম্য এবং শিক্ষকদের পাঠদানের প্রক্রিয়ায় প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ দেওয়া হয়। এছাড়াও প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী-বান্ধব রিসোর্স সেন্টার স্থাপন ও কার্যকর করতে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়। টেক কোম্পানিগুলোকে সহায়ক প্রযুক্তি উদ্ভাবনের প্রতি এগিয়ে আসার জন্য গুরুত্বারোপ করা হয়।
আরো বলা হয়, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষের ব্যবহার উপযোগী সহায়ক প্রযুক্তি সহজলভ্য করার লক্ষ্যে আমদানিকৃত সহায়ক প্রযুক্তির বিপরীতে এইচ এস কোড নির্ধারণের মাধ্যমে শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর রহিত করা জরুরি এবং সহায়ক প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও গবেষণায় সরকারি প্রণোদনা প্রয়োজন। এছাড়া দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ডিভাইসের অপ্রতুলতার সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে সরকারিভাবে বিনামূল্যে ল্যাপটপ ও স্মার্টফোন দেয়ার দাবিও ওঠে।