ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবে আমাদের করণীয়

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

মতি চাচা চিন্তা করছে গ্রাম থেকে শহরে যাবে। তো যেই চিন্তা সেই কাজ। চাচাজি তিন মাইল হেঁটে রেল স্টেশনে হাজির। বহু কষ্ট করে একখান টিকিটও কাটছে সে। টিকিটটা যত্ন-অত্ন করে বুকপকেটে রেখে একবার তৃপ্তিতে হাতও বোলালো ওটাতে। এখন কেবল ট্রেনের জন্য অপেক্ষা। ট্রেনের দিরং (বিলম্ব) দেখে ভাবলো শহরেই যেহেতু যাব একটু পরিপাটি হয়ে নিই। আগপাছ চিন্তা না করে ঢুকলো স্টেশনের সেলুনে। সোজা নাপিত মশাইকে বললো, দেউ দেখিনি আমার গোঁফদাড়ি কেটে! তো নাপিত মশাই গোঁফদাড়ি কাটছে। আধা গোঁফদাড়ি কামাতেই ট্রেন এসে হাজির! এই দেখে নাপিত বলল, ‘চাচা, আপনি না শহরে যাবেন? আপনার ট্রেন তো যায়।’ এটা শুনে চাচাজি নাপিতকে হুংকার দিয়ে বলল, ‘যাইলে যাক? টিকেট তো আমার হাতে! তার যাওনের পথ বন্ধ।’ বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। নিবন্ধটি লিখেছেন পিয়াল হাসান।

শহরময় ডেঙ্গু নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুনে বোকা মতি চাচার গল্পটি মনে পড়লো। আমাদের সবার অবস্থা এখন মতি চাচার মতো। আমার বারান্দায়, ছাদে, ফাঁকা আঙিনায় চোখের সামনে আদমজি পাটকলের চেয়েও বড়ো সাইজের এডিস মশার কারখানা বানিয়ে বসে আছি আর চিন্তা করছি, মেয়র সাহেব আছে না? তার কাজ কি? ওসব সে ধ্বংস করুক। এটা তার কাজ। এই আমি মাঠ গরম করতে কী-বোর্ডে বসলাম। আরে ভাই, মশা আপনার ঘরে কিংবা আঙিনায় জন্ম নিয়ে মেয়র বাবুকে কামড়াতে যাবে না। ও একটা জাত হারামি। প্রথম সুযোগেই উড়ে এসে আপনাকে, বউ-বাচ্চাকে তড়াশ-তড়াশ করে কামড় বসাবে। আর নিশ্চয়ই আপনি কামড় খেলে মেয়র সাহেবের ডেঙ্গু হবে না, হবে আপনার ও পরিবারের। এজন্যই আগে নিজের ব্যবস্থা দেখেন। তারপর অন্যদের কথা বলেন।

ভাবতে পারেন আমি মনে হয় মহামারি ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে ইয়ারকি করছি! একদম না। আমার পাশের রুমের ছেলেটার গত রাতে জ্বর এসেছে। জ্বর ১০২ ডিগ্রি। ডেঙ্গু জ্বরের যত বিলক্ষণ এরই মধ্যে সবই উপস্থিত। সে কাজ করে খাওয়া মানুষ। রোজ তাকে অফিসে যেতে হয়। প্রতিবেশী হিসেবে এখন আমার পালা, আমিও প্রমাদ গুনছি আর হা করে মশার ওড়াউড়ি দেখছি। এক একটা মশা বাদুড়ের সাইজ। হেলিকপ্টারের মতো শব্দ করে চক্কর খাচ্ছে। তবে আমি প্রখ্যাত অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক স্যারের মতো মশার ব্যাপারে অত কঠোর হতে পারিনি। স্যার না কী বিশাল কক্ষের মাঝখানে মশারি টানিয়ে সেটার ভেতর চেয়ার-টেবিল ফিট করে পড়াশোনা করতেন। কেউ গেলে মশারির ভেতর থেকে বের হয়ে তাকেও নিয়ে ঢুকে যেতেন। স্যারের জগৎ ছিল মশামুক্ত জগৎ। আমরা চাই রাষ্ট্র টাকাকড়ি খরচ করে মশামুক্ত নগর উপহার দিক। কামানে কাজ না হলে মিসাইল ফুটাক। টাকা তো জনগণের টাকাই। মানুষগুলো ডেঙ্গুর ভয়ে ভীত হয়ে আছে। এত ভয় মনে হয় ভূতকেও পায় না। যে করেই হোক নগরবাসীকে তথা দেশবাসীকে ডেঙ্গুর হাত থেকে বাঁচাতেই হবে।

এরই মধ্যে একটা বড়ো সংখ্যক মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রত্যেকটি জীবন সমান মূল্যবান। যে করেই হোক জীবনগুলো বাঁচাতে হবে। মেয়র সাহেবদের অনুরোধ করব গোপাল ভাঁড়ের মতো কথা না বলে কাজ করুন। বেশি করে কাজ করুন। আপনাদের কাজ চোখে পড়লে কেউ অস্বীকার করবে না। অবশ্য আপনাদের চোখ, মুখ দেখলে বোঝা যায় ডেঙ্গু না হলেও ডেঙ্গু রোগীর চেয়েও কষ্টে আছেন। মশা না ধরলেও জনগণ আপনাদের ধরে বসে আছে।

এদিকে সরকারের ভাষ্যমতে, তারা মশা মারতে কাজ করে যাচ্ছেন কিন্তু দিনমান না ঘুরতেই নতুন করে মশা হচ্ছে। বর্ষাকাল। বৃষ্টি হয় আর সেই বৃষ্টিতে আমাদের অবহেলায় কিংবা অগোচরে পানি জমে। সেই জমে যাওয়া পানিতে কচুর লতির মতো এডিস মশার লার্ভা হচ্ছে। সরকার ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা সহজকরণ করেছে। স্বল্প খরচে চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাড়িতে বাড়িতে গিয়েও চিকিৎসার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। সবই হয়েছে। এখন সবার জায়গা থেকে দায়িত্বশীল হয়ে এই মহামারি প্রতিরোধ করতে হবে। এই মহামারি রোধ করা কারো একার কাজ না। মশা মারার ওষুধ ছিটানো যেমন সিটি করপোরেশনের কাজ তেমনি আঙিনায় জমে থাকা পানিতে মশার আস্তানা ভেঙে দেয়া, আপনার আমার নাগরিক দায়িত্ব।

লেখক : সাবেক শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026171207427979