ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির বিচার হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান। তিনি বলেছেন, তারা আমানতের খিয়ানত করেছে। তারা জুলাইয়ের ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে ছিল। তাদের দাসত্ব ও প্রভু ভক্তি পুরো শিক্ষক সমাজকে কলুষিত করেছে।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে বেনার নিউজ বাংলা আয়োজিত ‘কী চাই নতুন বাংলাদেশে’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘আমরা সমতাভিত্তিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চাই। সমতা অথবা ন্যায়। আমাদের লক্ষ্য হবে মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা। পশুকেও নির্যাতন করা অন্যায়। কোনও মানুষকে যদি আপনি মানুষ মনে করেন তাহলে আর অন্যায় করবেন না। নতুন বাংলাদেশে আমি চাই না কোনও ধর্মকে নিপিড়ন করা হোক। বাংলাদেশ ধর্ম-বর্ণ জাতি নির্বিশেষে সবার।’
তিনি বলেন, ‘অনেকে বলেন ২০০৮ থেকে বা ২০১৪ থেকে ফ্যাসিবাদের সূচনা হয়েছে। আমি বলি ১৯৭২ থেকেই ফ্যাসিবাদীর সূচনা হয়েছে। বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদীর সূচনা হয়েছে যারা যুদ্ধ করে নাই তাদের জাতির জনক বানানো দিয়ে। অথচ যারা যুদ্ধ করেছে, ত্যাগ শিকার করেছে, তাদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। আমরা তরুণদের কাছে চিরঋণী তারা আমাদের হারানো স্বাধীনতাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন।’ এসময় তিনি ৫ আগস্টকে তৃতীয় স্বাধীনতা বলেও আখ্যায়িত করেছেন।
সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘ইতিহাসকে আসলে যারা ভুলিয়ে দেয় তারা ফ্যাসিবাদ। ইতিহাস মোটেও অতীত নয়। ইতিহাস হচ্ছে বর্তমান। চিন্তার ক্ষেত্রে, ধ্যান ধারণার ক্ষেত্রে, সবক্ষেত্রে আমাদের স্বাধীনতা থাকতে হবে। এদেশের শতকরা ২৬ জন লোক এখনও স্বাক্ষর করতে পারে না। শিক্ষার ক্ষেত্রে সর্বজনীনতা আনতে হবে। শিক্ষা হবে বিনামূল্যে, শিক্ষার জন্য কেন পয়সা লাগবে।’
আমাদের ছেলেমেয়েরা বিদেশে যায়, কারণ আমরা তাদের জন্য এখনও কোনও আশার প্রদীপ জ্বালাতে পারিনি। আমাদের মানবাধিকারের আগে নাগরিকদের অধিকারের কথা বলতে হবে। মানবাধিকার নিশ্চিতের প্রথম শর্ত সবাইকে আইনের অধীনে থাকতে হবে।’
বাংলা ভাষা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বাংলা ভাষা রাষ্ট্রের কোনও কাজেই ব্যবহার করা হয় না। বাংলা এখন আন্তর্জাতিক দিক থেকেও প্রায় বিলুপ্ত ভাষা। কিছুদিন আগে বিবিসি বাংলা রেডিও বন্ধ করে দিয়েছে। আমাদের উচিত আগে বাংলাদেশের সব কাজ বাংলায় হবে, এটা নিশ্চিত করতে হবে। সবকিছুর নাম বাংলায় করতে হবে। রাষ্ট্রভাষা যেহেতু বাংলা, আমাদের সব কিছু বাংলা হতে হবে।’
শ্রমিকদের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘মজুরি সংস্কার কমিশন এখনও হয়নি, এটা করা দরকার। যারা আমাদের দেশের ভিত্তি তাদের মজুরি নিশ্চিত করতে হবে। আমরা দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ চাই। ১৮ হাজারের নিচে আয় যদি ধরা হয় তাহলে প্রকৃতপক্ষে ৮০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে।’