ঢাকার ৯৫ শতাংশ বাড়িঘর অনুমোদনহীন: গণপূর্তমন্ত্রী

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

রাজধানী ঢাকার প্রায় ৯৫ শতাংশ বাড়িঘর অনুমাদনহীন বলে মন্তব্য করেছেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে ‌আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ ও বাধা’ শীর্ষক সেমিনারটি আয়োজন করে বিআইআইএসএস।

সেমিনারে স্থপতি ইকবাল হাবিবের বরাত দিয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী বলেছেন, ঢাকা শহরের প্রায় ৯৫ শতাংশ বাড়িঘর অনুমোদনবিহীন। এ অনুমোদনবিহীন বাড়িঘরগুলোকে যাতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অনুমোদনের আওতায় আনা যায়, এজন্য একটি কমিটি আছে। এমন একটি কমিটি আছে, তা গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী হওয়ার আগে আমি জানতামই না।

তিনি আরো বলেন, ঢাকাই বাংলাদেশ নয়, ঢাকার বাইরেও বাংলাদেশ আছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমরা যারা ঢাকায় থাকি, তারা ঢাকার বাইরে বাংলাদেশ আছে, সেটা বুঝতে চায় না। এমনকি যারা গ্রামে থাকে তারাও মনে করে ঢাকায় চলে যাওয়া ভালো, ওটাই বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, নগরায়নকে শুধু বিল্ডিং তোলা এবং কিছু মানুষের বসবাসের সুবিধা ও জীবন-জীবিকার সঙ্গে যুক্ত করলে চলবে না। নগরায়নের সঙ্গে এখন প্রকৃতির বিস্তৃতির কথাও খেয়াল রাখতে হবে। ইকো-ফ্রেন্ডলি একটি অবস্থান তৈরি করতে হবে।

প্রকৃতিকে ধ্বংস করে দিয়ে নগরায়ন করা হচ্ছে মন্তব্য করে র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী আরো বলেন, নগরায়ন করতে গিয়ে প্রকৃতির কথা খেয়াল রাখা হচ্ছে না। নগরায়নের ক্ষেত্রে শুধু বিল্ডিং তুললেই হবে না, আরো অনেক কিছু দেখতে হবে। আমরা নগরায়নের নামে বুড়িগঙ্গাকে শেষ করে দিয়েছি। শুধু বুড়িগঙ্গা নয়, পুরো পানি ব্যবস্থাটাকেই আমরা ধ্বংস করে দিয়েছি। এটাকে কিভাবে উদ্ধার করা যায়, সেটাকেও নগরায়নের পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কথা চিন্তা করতে হবে।

প্রতিদিন কৃষিজমি নগরায়নের ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমরা নগরায়ন করতে গিয়ে যত কৃষি জমি আছে, যত জলাশয় আছে, সব তো ধ্বংস করে দিয়েছি। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা খুবই কঠিন। তাই বলে বসে থাকলে চলবে না। আমাদের এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এজন্য মহাপরিকল্পনা দরকার।

তিনি বলেন, প্রকৃতি ধ্বংস না করে নগরায়ন করা সম্ভব, শুধু যারা কাজটি করবেন, তাদের মধ্যে দেশপ্রেম থাকতে হবে। তাদের এ মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতে হব, দেশটা তার এবং তার ভবিষ্যৎ বংশধরদের। দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মনমানসিকতা থাকতে হবে।

রাজনীতিবিদ ও আমলাদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, আমাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। এক জায়গা থেকে সব পরিকল্পনা হওয়া উচিত। সেটা না হলেও অন্তত সমন্বয় থাকা উচিত। আমাদের সবাইকে দেশপ্রেমের জায়গা থেকে বিষয়গুলো দেখা উচিত।

তিনি বলেন, প্রকৃতি ধ্বংসের দায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি বা জাতীয় পার্টির ওপর চাপিয়ে দিলে হবে না। এ কাজটি আমরা সবাই মিলে করেছি। আমরা সবাই মিলে যে দুষ্কর্মটা করেছি, সেই দুষ্কর্ম থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আমাদের চেষ্টা করতে হবে। নিজেদের দায়িত্বটা সঠিকভাবে পালন করতে হবে।

বিআইআইএসএস এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. আবু বকর সিদ্দিক খানের স্বাগত বক্তব্যে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইআইএসএস এর গবেষণা পরিচালক শেগুফতা হোসেন।

এছাড়া বিআইআইএসএস এর চেয়ারম্যান ও রাষ্ট্রদূত এ এফ এম গওসোল আযম সরকারের সঞ্চালনায় সেমিনারে আলোচক হিসেবে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও সেন্টার ফর আরবান স্টাডিজ (সিইউএস) এর চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, বিশ্ব ব্যাংকের নগর উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ঈশিতা আলম অবনী, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. খন্দকার শাব্বির আহমেদ।

সেমিনারে আলোচকরা বলেছেন, টেকসই শহর তৈরি করা বিশ্বব্যাপী একটি অগ্রাধিকার হয়ে উঠেছে। দ্রুত নগরায়ন, অবকাঠামোগত অগ্রগতি ও শহরমুখী অভিবাসন বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করেছে, যার ফলস্বরূপ শহরগুলোতে প্রকৃতি, মানব জীবন এবং সম্পদের উপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশও এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। বাংলাদেশের বড় শহরগুলো যানজট, জলাবদ্ধতা, বায়ু-জল-মাটি দূষণ এবং ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে ভুগছে। পরিকল্পিত এবং টেকসই নগরায়ন অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পূর্বশর্ত এবং এসডিজি ১১ এ বর্ণিত এই প্রয়োজনীয়তাকে বাংলাদেশ গুরুত্ব প্রদান করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্বে সরকার সেই লক্ষ্যগুলি বাস্তবায়নে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং তা অর্জনে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সরকারের এসব প্রচেষ্টার অগ্রভাগে রয়েছে।

বক্তা ও প্যানেলিস্টরা নগরায়ণের ফলে উদ্ভূত সমস্যাদি মোকাবিলায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার এবং অন্যান্য মহানগরের ক্ষেত্রে গৃহীত সর্বোত্তম কার্যপদ্ধতিগুলো থেকে শিক্ষালাভের মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশে টেকসই উন্নয়নের প্রসারের জন্য পরামর্শ প্রদান করেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি - dainik shiksha শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা - dainik shiksha সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার - dainik shiksha স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম - dainik shiksha ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত - dainik shiksha ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক - dainik shiksha ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.002345085144043