ঢাবি থেকে ২০ বছরেও সরেনি পরমাণু কেন্দ্র

দৈনিক শিক্ষাডটকম, ঢাবি |

১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তান আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে স্থাপিত হয় ‘পরমাণু শক্তি কেন্দ্র, ঢাকা’। ঢাবির প্রাণকেন্দ্র টিএসসিতে তিন একর জায়গাজুড়ে নির্মিত এ কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক কর্মকাণ্ড শুরু হয় ১৯৬৫ সালে। বর্তমানে যা বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের অধীনে রয়েছে। নব্বইয়ের দশকে এই কেন্দ্রটি সাভারে স্থানান্তর করে এর জমি ও ভবনগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এর পরিপ্রেক্ষিতে বারবার বৈঠক শেষে ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের কেন্দ্রটি স্থানান্তরের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি। কেন্দ্র সরাতে ঢাবি প্রশাসন বারবার তাগাদা দিলেও কর্ণপাত করছে না পরমাণু শক্তি কমিশন কর্তৃপক্ষ। এতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সবার মধ্যেই ক্ষোভ বিরাজ করছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দের ১ অক্টোবর টিএসসিতে এক পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া প্রতিশ্রুতি দেন, পরমাণু শক্তি কেন্দ্র সাভারে স্থানান্তর করা হবে এবং এটির জমি ও ভবনগুলো ঢাবিকে দেওয়া হবে। প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকীর মাধ্যমে ওই বছরের ৩১ অক্টোবর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে চিঠি দেওয়া হয়। একই বছরের ২৫ নভেম্বর ঢাবি রেজিস্ট্রার তৎকালীন আণবিক শক্তি গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি দেন। ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দের ২০ ডিসেম্বর রেজিস্ট্রার চিঠি দেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিবকে। এরপর ওইদিনই এর জবাবে মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব সৈয়দা আফরোজা বেগম ঢাবি উপাচার্য এসএমএ ফায়েজকে ফিরতি চিঠি পাঠান। এরপর ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ জানুয়ারি জমি ও ভবনগুলো হস্তান্তরের দাবি জানিয়ে ঢাবি উপাচার্য বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে চিঠি দেন।

 

এরপর কয়েক দফায় সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মধ্যে চিঠি চালাচালি হলেও কাজ হয়নি।

ঢাবির এস্টেট অফিস জানায়, আগের সব চিঠিরই অনুলিপি পরমাণু শক্তি কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট কার্যালয়েই পাঠানো হয়েছে; কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। বিষয়টির সমাধানে ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কমিশন কর্তৃপক্ষের কাছে অন্তত ১০ বার চিঠি দেওয়া হয়েছে এবং একাধিকবার সভার আয়োজন করা হয়েছে। কিন্তু পরমাণু শক্তি কেন্দ্র স্থানান্তরের কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপই নিচ্ছে না কমিশন।

এ বিষয়ে ঢাবির লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, যেখানে জায়গার স্বল্পতা থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ ও ইনস্টিটিউটগুলো ঠিকঠাক একাডেমিক কার্যক্রম চালাতে পারছে না, শ্রেণিকক্ষ ভাগাভাগি করতে হচ্ছে বিভাগগুলোকে, সেখানে টিএসসির মতো জায়গায় পরমাণু শক্তি কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠান থাকার প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মনে করি না। এটিকে দ্রুত স্থানান্তরের দাবি জানাই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন  বলেন, দ্রুত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরমাণু শক্তি কেন্দ্র সরানো উচিত। কারণ এত বিভাগ, অনুষদ, ইনস্টিটিউট, গবেষণা কেন্দ্রসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল পরিধির কারণে অবকাঠামোগত স্থাপনা ও জায়গার অনেক প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এজন্য দখল হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানের জমি দখলমুক্ত করে উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করে গবেষণা ও শিক্ষা কার্যক্রম প্রসারে গুরুত্ব দিতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, টিএসসির মতো জনবহুল এলাকায় এ ধরনের প্রতিষ্ঠান থাকার যৌক্তিকতা নেই। এভাবে জায়গা বরাদ্দ দিতে দিতে এখন বিশ্ববিদ্যালয়েরই ভালো একটি ল্যাব, গবেষণাগার বা স্থাপনা করার জায়গা নেই। নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কয়েকটি বিভাগ বা ইনস্টিটিউটের জন্য এ জায়গা ল্যাব বা গবেষণাগার হিসেবে রাখা যেতে পারে। এর আগেও বিষয়টি নিয়ে সাবেক দুই উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। আশা করি, বর্তমান উপাচার্য বিষয়টিকে গুরুত্ব দেবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট ম্যানেজার ফাতেমা বিনতে মুস্তাফা বলেন, পরমাণু শক্তি কেন্দ্রের জমি ও ভবন হস্তান্তর করার আনুষ্ঠানিক কাজ আগেই সম্পন্ন হয়ে গেছে। এ নিয়ে পরমাণু শক্তি কমিশনসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আমাদের একাধিকবার সভা হয়েছে। সভায় এটা আমাদের কাছে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত হয়েছে বারবার। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে দেখিনি।

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চেয়ে পরমাণু শক্তি কেন্দ্রের পরিচালক ড. শামশাদ বেগম কোরাইশীর দপ্তরে গেলেও তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি। পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান ছাড়া কারও এই বিষয়ে কথা বলার এখতিয়ার নেই বলে জানান তিনি। অন্যদিকে, বক্তব্য জানতে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মো. শওকত আকবরকে একাধিকবার ফোন করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

ঢাবির উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিস বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। এটা (পরমাণু কেন্দ্রের ভূমি ও ভবন) যেন খুব তাড়াতাড়ি আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়, সে ব্যাপারে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
অষ্টাদশ শিক্ষক নিবন্ধন: চতুর্থ দিনের ভাইভায় যেসব প্রশ্ন - dainik shiksha অষ্টাদশ শিক্ষক নিবন্ধন: চতুর্থ দিনের ভাইভায় যেসব প্রশ্ন বাসচাপায় ববি ছাত্রী নিহত, সড়ক অবরোধ - dainik shiksha বাসচাপায় ববি ছাত্রী নিহত, সড়ক অবরোধ কৃষি গুচ্ছের বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয় পছন্দক্রম পূরণ শুরু - dainik shiksha কৃষি গুচ্ছের বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয় পছন্দক্রম পূরণ শুরু ছয় মেডিক্যাল কলেজের নাম পরিবর্তন করে প্রজ্ঞাপন - dainik shiksha ছয় মেডিক্যাল কলেজের নাম পরিবর্তন করে প্রজ্ঞাপন শিক্ষার্থী পরিচয়ে ডাকাতির চেষ্টা, গ্রেফতার ১৩ - dainik shiksha শিক্ষার্থী পরিচয়ে ডাকাতির চেষ্টা, গ্রেফতার ১৩ কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0023472309112549