ঢাবিতে পাকিস্তানি সংগঠনের সেমিনার, ক্ষুব্ধ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

ঢাবি প্রতিনিধি |

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচার থিয়েটার ভবনের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে সেমিনার করেছে পাকিস্তানের সংগঠন দাওয়াতে ইসলামের শিক্ষা বিভাগ ঢাবি শাখা। সংগঠনটির শিক্ষা বিভাগ, ঢাবি শাখার ব্যানারে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মারুফ এ সেমিনারের আয়োজন করেন বলে জানা যায়।

চলতি মাসের গত ৩ জানুয়ারি এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পাকিস্তানি আলেম ও সংগঠনটির প্রধান (মারকাযী মজলিশে শূরার নিগরান) মাওলানা হাজি ইমরান আত্তারী। আত্তারী সেমিনারে উর্দু ভাষায় বক্তব্য দেন বলে জানা যায়। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। 

জানা যায়, ২০১৫ সালের ১৪ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় পাকিস্তানের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্তে বলা হয়, পাকিস্তানের সঙ্গে বিদ্যায়তনিক, গবেষণামূলক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়াকেন্দ্রিক কোনো সম্পর্ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থাকবে না। আজ থেকে কোনো শিক্ষক-শিক্ষার্থী, প্রতিনিধিদল পাকিস্তানে যাবে না, সেখানে স্কলারশিপ বা বৃত্তির সুপারিশও করবে না বিশ্ববিদ্যালয়। 

সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের পরেও কেন এ সেমিনার, তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। আরবি বিভাগের এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মারুফ বাংলাদেশে দাওয়াতে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন। ঢাবি শাখার প্রধান পরিচয় দিয়ে তিনি সেখানে বক্তব্য দিয়েছেন।’  

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সম্পর্ক নেই, কিন্তু কীভাবে মারুফ স্যার এ কাজ করলেন? যাদের সঙ্গে আমাদের শত্রুতা রয়েছে, গণহত্যা ও নির্যাতন করেছে, সে দেশের লোকেরা এসে সেমিনার করে গেল! যা আমাদের জন্য লজ্জার।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মারুফ বলেন, ‘আমি সেখানে শ্রোতা হিসেবে ছিলাম। সংগঠনটির সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমার পরিবার, আমি নিজে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির সঙ্গে রাজনীতি করি। পাকিস্তানের কোনো সংগঠনের সঙ্গে আমি জড়িত থাকব, তা হতে পারে না।’

সেমিনার কক্ষটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের অধীনে। সে হিসেবে সেখানে কোনো ধরনের সেমিনার, আলোচনা সভা করতে গেলে ডিনের অনুমতি নিতে হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছির বলেন, ‘ডিন অফিসের যে কর্মকর্তা বিষয়টি দেখেন, তাঁর মাধ্যমে জানতে পেরেছি, আরবি বিভাগের একজন শিক্ষক সেদিন (৩ জানুয়ারি) কক্ষ ফাঁকা আছে কি না জানতে চান, ওনার নাম আব্দুল্লাহ আল মারুফ। ফাঁকা আছে বিষয়টি জানালে তিনি সেখানে সেমিনার করবেন বলে জানান। তবে কোন ধরনের প্রোগ্রাম, সেটি জানানো হয়নি। সাধারণত শিক্ষকেরা বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিভিন্ন প্রোগ্রাম করে। সে রকম প্রোগ্রাম মনে করেছি।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘সেমিনারের দিন একটি তথ্য আসে, যাঁরা আয়োজন করেছেন, তাঁদের সঙ্গে আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে দূরত্ব রয়েছে, সাম্প্রদায়িক কোনো কিছু রয়েছে। বিষয়টি ওই শিক্ষককে (মারুফ) ফোনে অবহিত করি এবং প্রোগ্রাম বন্ধ করতে অনুরোধ করি। কিন্তু প্রোগ্রাম শেষ পর্যন্ত হয়েছে। বিষয়টি দুঃখজনক।’ 

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ধর্ম প্রচার ও প্রসারের জায়গা নয়। এটি অসাম্প্রদায়িক বিশ্ববিদ্যালয়, এখানে সাম্প্রদায়িক কোনো কিছু প্রয়োগ করার নিয়ম নেই।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আমি যখন বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত হই, তখনই বিষয়টি জানতে চেয়েছি। তাঁকে অবহিত করেছি, আমাকে জানালে বিস্তারিত জানাতে পারব।’ 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
আগের নিয়মে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগারিক নিয়োগের দাবি - dainik shiksha আগের নিয়মে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগারিক নিয়োগের দাবি শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ - dainik shiksha শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ মাদকের গডফাদারদের ধরার নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার - dainik shiksha মাদকের গডফাদারদের ধরার নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার শিক্ষা প্রশাসনে বদলি আতঙ্কে নাহিদ-দীপু সিন্ডিকেটের ৯২ কর্মকর্তা - dainik shiksha শিক্ষা প্রশাসনে বদলি আতঙ্কে নাহিদ-দীপু সিন্ডিকেটের ৯২ কর্মকর্তা দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! - dainik shiksha দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই পক্ষের হাতাহাতি, সভা পণ্ড - dainik shiksha বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই পক্ষের হাতাহাতি, সভা পণ্ড শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে সর্বশেষ - dainik shiksha শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে সর্বশেষ অগ্রসর সমাজ তৈরির লক্ষ্যই বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন - dainik shiksha অগ্রসর সমাজ তৈরির লক্ষ্যই বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.002997875213623