ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১০০ বছর পার হয়েছে। এই শত বছরে ১ হাজার ৮১২ জনকে পিএইচডি ও ১ হাজার ৬৭০ জনকে এমফিল ডিগ্রি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬৬৩টি পিএইচডি ডিগ্রি দিয়েছে কলা অনুষদ এবং সবচেয়ে কম ছয়টি দিয়েছে চারুকলা অনুষদ।
বাংলা, ইসলামিক স্টাডিজ, উদ্ভিদবিজ্ঞান, রসায়ন বিভাগ সবচেয়ে বেশি দিয়েছে। এছাড়া ২৭ জনকে ডিএসসি, আট জনকে ডিএড ও ১২ জনকে ডিবিএ ডিগ্রি দিয়েছে দেশের প্রাচীনতম এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল কালাম সরকারের ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় : শতবর্ষের গবেষণা-পিএইচডি ও এমফিল’ শীর্ষক গবেষণা গ্রন্থ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে রক্ষিত ডকুমেন্ট থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
এসব উত্স যাচাই করে দেখা যায়, কলা অনুষদের ১৭ বিভাগ শত বছরে ৬৬৩টি পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করে। হার অনুযায়ী দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জীববিজ্ঞান অনুষদে ৩৫৮টি, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে ১৮৮টি, বিজ্ঞান অনুষদে ১৮৩টি, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে ১২৪টি, ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদে ৫২টি, ফার্মেসি অনুষদে ২৬, আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সাইন্সে ১৯, আইন অনুষদে ১৪টি ডিগ্রি দেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে কম পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়া হয়েছে চারুকলা অনুষদে। প্রতিষ্ঠার ৭৩ বছরে মাত্র ছয়টি পিএইচডি দেওয়া হয় বিভাগটি থেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০টি ইনস্টিটিউট থেকে ডিগ্রি দেওয়া হয় ১১৪টি। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৪৮টি ডিগ্রি দেওয়া হয় পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট থেকে।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ব্রিটিশ শাসনামলে পিএইচডি-এমফিল ডিগ্রি প্রদানের হার সীমিতসংখ্যক। এই সংখ্যা কিছুটা বৃদ্ধি পায় পাকিস্তান শাসনামলে। সর্বশেষ স্বাধীন বাংলাদেশে এ ডিগ্রির হার বাড়তে থাকে। গত কয়েক দশক ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদানের হার বেড়েছে।
আবুল কালাম সরকার বলেন, কলা অনুষদের অনেক শিক্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে থাকেন, এ অনুষদের গবেষণা তুলনামূলক সহজ হওয়ায় গবেষকরা পিএইচডি নিতে বেশি আগ্রহী হন। বিজ্ঞানের বিভাগগুলো এক্ষেত্রে একটু ভিন্ন চিত্র বহন করে। এসব ডিগ্রির মধ্যে কিছু অভিসন্দর্ভ বিশ্ববিদ্যালয়ে সংরক্ষিত রয়েছে, অনেক ডিগ্রির কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না।
আবুল কালাম সরকার বলেন, পিএইচডি অনেক হলেও সবগুলো যে মানসম্মত হয়েছে তা নয়। অনেক গবেষকই জানেন, তার অভিসন্দর্ভ মানসম্মত নয়, তাই পিএইচডি ডিগ্রি পাওয়ার পর তা সরিয়ে ফেলেছেন, অনেকগুলো অভিসন্দর্ভ বিশ্ববিদ্যালয় সংরক্ষণ করেনি। যার কারণে সবগুলো ডিগ্রির অভিসন্দর্ভ পাওয়া যায় না।
এমফিল নেই যে সব বিভাগে : তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান, ফলিত গণিত, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, পপুলেশান সাইন্স, উইম্যান অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ, দুর্যোগ বিজ্ঞান, অঙ্কন ও চিত্রায়ন, গ্রাফিক ডিজাইন, প্রিন্ট ম্যাকিং বিভাগ ও স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিটে কোনো এমফিল গবেষণা নেই।
পিএইচডি-এমফিল নেই যে সব বিভাগে : অন্যদিকে পিএইচডি এবং এমফিল কোনো গবেষণাকর্ম নেই এমন বিভাগের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদভুক্ত ১৬টি বিভাগের পরিস্থিতি এমন। এসব বিভাগে গবেষণার কাজও সীমিতসংখ্যক। বিভাগগুলো হলো— নৃত্যকলা, অর্গ্যানাইজেশান স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড লিডারশিপ, টেলিভিশন চলচ্চিত্র ও ফটোগ্রাফি, ক্রিমিনোলজি, যোগাযোগ বৈকল্য, প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকেশান্স, জাপানিজ স্টাডিজ, সমুদ্রবিজ্ঞান, আবহাওয়া বিজ্ঞান, নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং, থিওর্যাটিক্যাল অ্যান্ড কম্পিউটেশনাল কেমিস্ট্রি, রোবটিক্স অ্যান্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং, মৃিশল্প, ভাস্কর্য, কারুশিল্প, শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগ। এমনকি কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট, লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট, শক্তি ইনস্টিটিউটেও কোনো পিএইচডি-এমফিল অভিসন্দর্ভ রচিত হয়নি।
বছরভিত্তিক বিবেচনায় ডিগ্রির সংখ্যা বাড়লেও গবেষণার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বলে মনে করেন উচ্চশিক্ষা-সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, পিএইচডি ডিগ্রি বৃদ্ধির সংখ্যাগত এ চিত্র দিয়ে গবেষণার উন্নয়ন ঘটেছে, এটা দাবি করার সুযোগ নেই। কারণ পিএইচডি গবেষণার মাধ্যমে যে প্রভাব ও সাফল্য আসার কথা, সেটি দৃশ্যমান নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্যান্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেসব পিএইচডি গবেষণা হচ্ছে, তার উল্লেখযোগ্যসংখ্যক অভিসন্দর্ভই আন্তর্জাতিক মানসম্মত জার্নালে প্রকাশিত হয় না। এছাড়া চৌর্যবৃত্তির অভিযোগও রয়েছে অনেক গবেষকের বিরুদ্ধে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিষয়ে উচ্চতর গবেষণায় আগ্রহীদের জন্য উন্নত বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় স্কলারশিপসহ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। তাই এসব বিষয়ে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই গবেষণার জন্য বিদেশে পাড়ি জমান। এজন্য বিজ্ঞান-প্রকৌশলে আমরা পিএইচডি গবেষক অনেক কম পাই।