ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম

দৈনিক শিক্ষাডটকম, ঢাবি |

সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান-নাতি-নাতনিদের জন্য বরাদ্দ করা ৩০ শতাংশ কোটাসহ ৫৬ শতাংশ কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলেন শিক্ষার্থীরা। ছাত্র-জনতার সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। অথচ অভ্যুত্থানের তিন মাস না পেরোতেই মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনি কোটা জন্য ৫ শতাংশ কোটা রেখে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) প্রশাসন। সময়ের স্বল্পতার জন্য এই কোটা পদ্ধতি সংস্কার করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ২১ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কমিটির বৈঠক হয়। পরে সার্বিক বিষয়ে ২৭ অক্টোবর একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠক হয়। এসময় কোটা সংস্কার নিয়ে কথা বলেন অধিকাংশ সদস্য। তবে সময়ের ‘স্বল্পতা’ দেখিয়ে এবারও গত সেশনের মতো ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানান উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ।

তবে সদস্যদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সেদিনই কোটা সংস্কারের লক্ষ্যে আইন অনুষদের ডিনকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। তবে সোমবার (৪ নভেম্বর) অনলাইনে ভর্তির আবেদন ও ভর্তি ফি জমা দেওয়া শুরু হলেও রোববার (৩ নভেম্বর) পর্যন্ত কমিটি গঠনের কোনো লিখিত বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি। ফলে এ কমিটির কোনো সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেই মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিদের ৫ শতাংশ কোটা রেখে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আবেদনের পঞ্চম ধাপে আবেদনকারী পরবর্তী পাতায় প্রদর্শিত ছবি-৫ এ অনুরূপ ফরমে তার পরীক্ষা কেন্দ্রের বিভাগীয় শহর বেছে নেবে এবং শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কোটার তথ্য জানাবে। আবেদনকারী শিক্ষার্থী যদি কোটার জন্য নির্ধারিত আসনে আবেদন করতে চায় তবে প্রযোজ্য কোটার ঘরে ক্লিক করে নিচের কাজ করবে- ‘এক্ষেত্রে ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তান/মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনি কোটার ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নম্বর দেবে ও মুক্তিযোদ্ধা সনদ আপলোড করবে।’

অন্যদিকে মেধা তালিকায় স্থান পাওয়ার পরের ধাপের বিজ্ঞপ্তিতে কোটা অংশের ‘ঙ’ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তান (সন্তান পাওয়া না গেলে নাতি/নাতনি) কোটার ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক ইস্যু করা সনদপত্র অথবা ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ২০০১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের অধীনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রতিস্বাক্ষরিত মুক্তিযোদ্ধার সনদপত্রসহ আবেদন করতে হবে।’

কোটায় ভর্তি প্রার্থীদের সংশ্লিষ্ট ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশের ৭ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ইউনিটের ডিন অফিস থেকে ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্র প্রদর্শনপূর্বক নির্ধারিত ফরম সংগ্রহ করতে হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এবিএম শহিদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি সামনে এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর লিখিত আবেদনও করেছেন।

তিনি আরও বলেন, ২৭ অক্টোবর কোটা সংস্কার করতে কমিটি করলেও এই কমিটির সদস্যরা লিখিত বিজ্ঞপ্তি পায়নি। আমাকে সদস্য করা হলেও আমি আজ (সোমবার) সেটা জানতে পারি। ফলে কমিটির কোনো বৈঠক ছাড়াই মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিদের কোটা রেখে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমি মুক্তিযোদ্ধাদের বিপক্ষে না। সেজন্য তাদের ভাতা দেওয়া হয়েছে। সন্তানদের চাকরির কোটা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাই বলে নাতি-নাতনিদের কোটা দিতে হবে? একজন গ্রামের ছেলে চান্স পাচ্ছে না তাদের কোটার জন্য। তাই এই কোটা অবশ্যই বাতিল করা জরুরি। না হলে আবু সাঈদসহ হাজারো ছাত্র-জনতার রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করা হবে।

ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এটা নিয়ে একাডেমিক কাউন্সিলে জোরেশোরেই আলোচনা হয়েছে। সেদিনই একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছিল। যেহেতু সময়ের স্বল্পতা ছিল এ বছর, তাই আগে করা হয়নি। তবে এটা আগামী মিটিংয়ের পরে রিভিউ হতে পারে।

উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, এটা একাডেমিক বিষয়, তাই এই বিষয়ে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ভালো বলতে পারবেন।

উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ বলেন, আমি কিছু বলতে পারব না। বিশ্ববিদ্যালয় উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) স্পোকস পারসন হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত এটা, তাই তিনিই বলবেন।

পরে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ড. সায়মা হক বিদিশাকে ড. মামুন আহমেদের মন্তব্য জানিয়ে প্রশ্ন করা হলেও তিনি কথা বলতে রাজি হননি।

২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের অনলাইন আবেদন গ্রহণ ও ফি জমা দেওয়া শুরু হয়েছে ৪ নভেম্বর। চলবে ২৫ নভেম্বর রাত ১১ ঢা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত।

প্রতি বছরের ন্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবারও ২০২৪-২৫ সেশনের ভর্তিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৫ শতাংশ, ওয়ার্ড/পৌষ্য কোটায় ১ শতাংশ, উপজাতি/ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায়, হরিজন ও দলিত সম্প্রদায় কোটায় ১ শতাংশ, প্রতিবন্ধী (দৃষ্টি, বাক, শ্রবণ, শারীরিক, নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার্স/হিজড়া) কোটায় ১ শতাংশ শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হবে। তাছাড়া গত বছর খেলোয়াড় কোটায় ৬০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করায় বিশ্ববিদ্যালয়, যা এবারও বহাল থাকবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! - dainik shiksha মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! অ্যাডহক কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha অ্যাডহক কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সোহরাওয়ার্দী কলেজ যেনো ধ্বং*সস্তূপ - dainik shiksha সোহরাওয়ার্দী কলেজ যেনো ধ্বং*সস্তূপ জোরপূর্বক পদত্যাগে করানো সেই শিক্ষকের জানাজায় মানুষের ঢল - dainik shiksha জোরপূর্বক পদত্যাগে করানো সেই শিক্ষকের জানাজায় মানুষের ঢল শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি সারানোর এখনই সময় - dainik shiksha শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি সারানোর এখনই সময় কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032219886779785