গতমাসে সাদা দলের ব্যবসা অনুষদে একটি ঘটনার জেরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মার্কেটিং বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমানকে দলের সদস্য পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, গত ২৪ নভেম্বর অনুষদের সভায় দলের একজন শিক্ষকের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। এ ঘটনার জেরে লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে ড. মিজানুর রহমানের অভিযোগ, অগণতান্ত্রিক উপায়ে ও ব্যক্তিগত আক্রোশের জেরে তার বিরুদ্ধে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সাদা দলের সভায় হট্টগোলের বিষয়ে জানা যায়, গত ১৫ জুনে জার্নাল কমিটির সভায় একজন নারী সদস্যের ওপর মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এবিএম শহীদুল ইসলামের অবিচারের প্রতিবাদ করেন অধ্যাপক মিজানুর রহমান। এ নিয়ে বাকবিতণ্ডা হয়। শহীদুল ইসলাম বিষয়টি নিয়ে সাদা দল ব্যবসায় অনুষদ শাখার কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেন। অধ্যাপক মিজানুর রহমান চার দিনের সফরে কানাডায় থাকাকালীন সময়ে এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ জুন মাগরিবের নামাজের পর তড়িঘড়ি করে দলের অধিকাংশ সদস্যের অনুপস্থিতিতে এবং একজন সদস্যের নোট অব ডিসেন্ট নিয়ে ড. মিজানের সদস্যপদ ‘সাময়িক স্থগিত’ রাখা হয়। এরপর ১ অক্টোবর মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শহীদুল অধ্যাপক মিজানের বিরুদ্ধে তার অভিযোগ লিখিতভাবে প্রত্যাহার করে নেন।
অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেওয়ার ফলে ২৫ নভেম্বর ব্যবসায় অনুষদ শাখা সাদা দলের সভায় অধ্যাপক মিজানুর রহমান হাজির হলে দুই-তিনজন শিক্ষক অধ্যাপক মিজানের উপস্থিতি নিয়ে আপত্তি তোলেন। তবে উপস্থিত অন্য ৯ জন শিক্ষক মিজানের উপস্থিতি নিয়ে আপত্তি তোলেননি। এ সময় ‘অফিশিয়ালি’ কোনো সিদ্ধান্ত না জানানো এবং যে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অধ্যাপক মিজানকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, সে অভিযোগ প্রত্যাহার সত্ত্বেও কেন তার অব্যাহতি প্রত্যাহার হবে না’ তা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সাময়িক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এটা নিয়ে মূলধারার কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে খবর প্রকাশিত হয়।
এদিকে একটি সূত্র জানিয়েছে, আগামী ১৩ ডিসেম্বর দলের আহ্বায়ক নির্বাচিত করা হবে। এটা সামনে রেখে বর্তমান আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান ও সাবেক আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলামসহ তার আশপাশের কিছু মানুষের ‘অপছন্দের লোক’কে দূরে সরিয়ে রাখতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, আমার বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে কী অভিযোগ ছিল, কী কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো আমি কিছুই জানি না। আমার কোনো বক্তব্যও শোনা হয়নি। যেখানে ১০ তারিখের কর্মসূচি নিয়ে কেন্দ্রসহ সারাদেশের কর্মী-সমর্থকরা ব্যস্ত তখন সাদা দলের তথাকথিত নেতৃত্ব ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে আপস করে দলের মধ্যে সুপরিকল্পিতভাবে বিভাজন সৃষ্টির জন্য এই কাজ করেছে। এটা অগণতান্ত্রিক এবং স্বৈরাতান্ত্রিক, এটা হতে পারে না।
এ বিষয়ে সাদা দলের ব্যবসায় অনুষদ শাখার আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম জাহিদ বলেন, ‘উনি (অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান) ওনার কথা বলেছেন। উনি কি বলেছেন সেটা তার ব্যাপার। আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে বলেন।’ বহিষ্কার ও অভিযোগের বিষয়ে অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমানের অবস্থানের কথা তুলে ধরা হলে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম জাহিদ অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘তার বক্তব্য তো ভালোই শুনেছেন।’ এরপর আপনার বক্তব্য জানতে চাই জানালে তিনি বলেন, ‘সংগঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওনার কিছু বলার থাকলে সেটা উনি বলবেন। এ বিষয়ে সংগঠন সিদ্ধান্ত নেবে।’
এদিকে সাদা দলের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমানের কাছে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক। আর ওই সিদ্ধান্ত অনুষদের। এখানে আমার বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ নেই। তাছাড়া আমি অনেক সাংবাদিকের ফোন পাচ্ছি। কিন্তু আমাকে এখনো এ ঘটনার বিষয়ে লিখিত বা মৌখিক কোনভাবেই কিছু জানানো হয়নি। জানানো হলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে বা এ বিষয়ে কি হয়েছে তা বলা যাবে।’