কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) পরিচালক ড. আবু ইউসুফ আব্দুল্লাহর হদিস নেই। এমনকি সরকারের পতনের এক মাস পর শিক্ষার্থীরা তার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েও তার দেখা মেলেনি।
ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, তিনি গত ৩০ জুন আইবিএর পরিচালদের দায়িত্ব নেন এই সময় থেকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একবারের জন্যও সাক্ষাৎ করেননি। সর্বোচ্চ কর্মকর্তার অনুপস্থিতে ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম থমকে আছে।
এই অবস্থায় গত ১০ সেপ্টেম্বর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকদের একটি বৈঠক হয়। সেখানে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দাবি-দাওয়া জানান। দাবিগুলো কতোটা বাস্তবায়ন হলো সেটা নোটিশ আকারে দেয়ার আহ্বান জানান তারা।
কিন্তু গত ১৯ সেপ্টেম্বর শিক্ষার্থীরা জানতে পারেন, আজ রোববার থেকে ক্লাস শুরু হবে। এই সংবাদ পাওয়ার পর শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের কাছে মেইল করে ক্লাস করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
বাংলাদেশ পোস্ট শিক্ষকদের কাছে পাঠানো মেইলে একটি কপি পেয়েছে। সেখানে লেখা, অন্তত ১ সপ্তাহ আগে নোটিশ পাওয়া প্রয়োজন ছিলো। কিন্তু সেটা না মেনে তাদেরকে ক্লাস শুরু করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যারা ঢাকার বাইরে অবস্থান করছে এতো শর্ট নোটিশে তাদের ক্লাসে ফেরা সম্ভব নয়। মেইলে বলা হয়েছে, ‘আমরা যে দাবিগুলো জানিয়েছিলাম সেগুলো এখনো পূরণ করা হয়নি।’
তারা ক্লাস অন্তত এক সপ্তাহ পেছানোর দাবি জানিয়েছে। উল্লেখ্য, গত ১০ সেপ্টেম্বর শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের সঙ্গে একটি বৈঠকে বসেন। সেখানে তারা ইনস্টিটিউটে ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি বন্ধসহ বিভিন্ন দাবি দাওয়া জানান।
আইবিএর একজন শিক্ষার্থী বলেন, আমরা কিছু সংস্কারের দাবি জানিয়েছি। পরিচালকে অন্য জায়গায় মিটিং করতে দেখেছি কিন্তু শিক্ষার্থীরা তার সাক্ষাৎ পায়নি। তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। তার মুখ থেকে আমরা এসব বিষয়ে বক্তব্য শোনাসহ আমাদের দাবি বাস্তবায়নে পদক্ষেপ চাই।
সূত্র জানিয়েছে, আইবিএর পরিচালক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম দফায় ১১-২১ সেপ্টেম্বর ছুটি নেন। এরপর তিনি ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত ছুটি চেয়েছেন।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর পরিচালক ও নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু ইউসুফ মো. আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। এ ছাড়া তিনি গত ২৫ আগস্ট নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর সরাসরি উপস্থিত থেকে শারীরিকভাবে আন্দোলনরতদের আক্রমণ করেন। হত্যাকাণ্ডের মতো অভিযুক্ত শিক্ষক এখনো কীভাবে বহাল থাকেন সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে শিক্ষার্থী।
সূত্র জানায়, শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ড. ইউসুফ আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলাসহ দুইটি মামলা হয়েছে। গত ২৮ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়। এই মামলায় তাকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় তাকে আওয়ামী লীগ নেতা ও অর্থ যোগানদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া ২৯ আগস্ট বনানী থানায় আরেকটি হত্যাচেষ্টা মামলা হয়।
গত ৭ সেপ্টেম্বর অধ্যাপক আবু ইউসুফ মো. আবদুল্লাহকে গ্রেফতার করে ডিবি। রাজধানীর বনানী থেকে তাকে গ্রেফতার করে তাকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছিলো। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মুচলেকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
আইবিএর ভারপ্রাপ্ত পরিচালক অধ্যাপক ড. শাকিল হুদা শিক্ষার্থীদের মেইল পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয়ভাবে হয়েছে। আমরা কর্তৃপক্ষে নির্দেশ পালন করেছি। শিক্ষার্থী ক্লাসে ফিরতে সময় চেয়েছে এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আইবিএর পরিচালকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা নিয়ে তিনি বলেন, এটা আইনগত বিষয়।
সার্বিক বিষয়ে কথা বলতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান যোগাযোগ করা হলে ফোনে পাওয়া যায়নি।