ঢাবির রোভার সম্পাদকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

দৈনিক শিক্ষাডটকম, ঢাবি |

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) রোভার স্কাউট গ্রুপের সম্পাদক ও প্রধান রোভার স্কাউট লিডার মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, স্বেচ্ছাচারিতা, গঠনতন্ত্র, নিয়ম ভঙ্গসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। এমনকি তার নিয়োগ নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। এ নিয়ে সাবেক-বর্তমান রোভারদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। যদিও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের এই শিক্ষক তার বিরুদ্ধে উঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

সংগঠন সংশ্লিষ্টরা বলেন, রোভার স্কাউট গ্রুপের কোষাধ্যক্ষকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া বার্ষিক ৩ লাখ টাকা অনুদান ছাড়া অন্য কোনো হিসাব তিনি দেননি। গত চার বছরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে রোভারদের জন্য বরাদ্দের লাখ লাখ টাকা তিনি নিজের কাছে রাখেন। রোভারদের নামমাত্র কিছু টাকা আপ্যায়নের জন্য দিয়ে, বাকি টাকা তিনি কীভাবে খরচ করেছেন তার হিসাব দেননি। টিএসসি রোভার ডেনে ব্যবহারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুটি ফোন দেওয়া হয়। সেগুলোর একটি নিজের বিভাগীয় অফিসে এবং আরেকটি নিজের বাসায় নিয়ে গেছেন। তিনি ছাত্রদের কাউন্সিল ফান্ডে জমাকৃত টাকাও নিজের কাছে রাখেন। 

জানা যায়, ২০১৯-২০ সেশনের মেট কাউন্সিলের ক্যামেরা কেনার ৪৫ হাজার এবং বিভিন্ন জায়গা থেকে উপার্জিত ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার কোনো হদিস নেই। ২০২২ খ্রিষ্টাব্দেও সংগঠনের ৪০ হাজার টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে রেখেছেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে ডিউটিতে কর্তৃপক্ষকে ৫০-৪০ জনের কথা বলে পাঠান ৩০ জন। বাকিদের সম্মানী তিনি নেন।

সংগঠনটির এক জ্যেষ্ঠ রোভার স্কাউট লিডার বলেন, তিনি কোনো সভা করেন না। এমনকি গ্রুপ কমিটির সভাপতির সঙ্গে মিটিংয়ের কথা বললেও এড়িয়ে যান। তার সঙ্গে যোগাযোগও করেন না। সভাপতি ও সিনিয়র লিডারদের কাউকে না জানিয়ে বার্ষিক দীক্ষাসহ অন্যান্য অনুষ্ঠানের সব সিদ্ধান্ত একাই নেন।

গত ৩১ অক্টোবর তিনি তৎকালীন উপাচার্য অনুমোদিত একটি নিয়োগপত্র দেখান। এতে উল্লেখ করা হয়, তিনি আবারও প্রধান রোভার স্কাউট লিডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। যদিও গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এই নিয়োগ শুধু উপউপাচার্য (প্রশাসন) দিতে পারেন। আর প্রধান রোভার স্কাউট লিডার নামে কোনো পদ সংগঠনে নেই।

সম্প্রতি নতুন চেয়ার-টেবিল কেনার জন্য বরাদ্দকৃত টাকা দিয়ে পুরোনো কিছু চেয়ার মেরামত করান তিনি। প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় পরীক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও তিনি রোভারের সমন্বয়ক হিসেবে সম্মানী নেন। যে কোনো অনুষ্ঠানে ডিউটিরতদের জন্য নিম্নমানের খাবার এবং শিক্ষকদের বাসায় গরু, মুরগি, দই, খাশিসহ নানা পদের খাবার পাঠান তিনি। 

ঢাবির রোভার স্কাউটের কোষাধ্যক্ষ স্কাউটার ড. মো. মুমিত আল রশিদ বলেন, ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর থেকে আমি এই পদে আছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো রোভারা করে। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় তাদের আপ্যায়ন বাবদ লাখ লাখ টাকা দেয়। কিন্তু গত ২০২০ থেকে ২০২৩ সাল—এই চার বছরের টাকা অ্যাকাউন্টে জমা হয়নি। এই টাকা কীভাবে খরচ হয়েছে তার হিসাব আমরা পাইনি।

জানতে চাইলে মাহমুদুর রহমান বলেন, এই অভিযোগগুলো সত্য নয়। কেউ ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে এসব করছে বা বলছে। উপাচার্য কীভাবে আমাকে নিয়োগ দিয়েছেন তা আমি জানি না। নিয়োগ তো আর আমি নিজে নিতে পারি না। আগের সম্পাদক যে পদ্ধতিতে ব্যয় করেছেন আমিও সেভাবে অর্থ ব্যয় করেছি। ভলান্টিয়ারদের আপ্যায়ন বাবদ যে টাকা আসে সেটি প্রক্টর অফিসই দেখে।

তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, রোভার স্কাউটের সামগ্রিক কার্যক্রম তখন মাহমুদুর রহমান দেখভাল ও সমন্বয় করছিলেন। কিন্তু তার পদ না থাকায় কাজ সমন্বয় করতে অসুবিধা হয় বলে আমাকে জানান। ওই সময় আমরা অনেক পদই রেগুলার করা শুরু করি। ওই সুবাদে তারও অনুমোদন হয়ে যায়। যদিও নিময় অনুযায়ী আসলে ভালো হতো।

ঢাবির প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, রোভার স্কাউট সম্পাদকের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ আমরা শুনেছি। বিষয়টি নিয়ে এখনো কোনো ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি গঠিত হয়নি। তবে একটি সভায় এসব নিয়ে কথা হয়েছে।

ঢাবির প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, রোভার স্কাউটের সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে প্রক্টরসহ আমরা উপাচার্যের সঙ্গে একটি বৈঠক করেছি। প্রমাণাদির ভিত্তিতে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে উপাচার্য জানিয়েছেন।

সার্বিক বিষয়ে জানতে ঢাবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালকে একাধিকবার কল দিয়ে ও বার্তা পাঠিয়ে সাড়া পাওয়া যায়নি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি - dainik shiksha শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা - dainik shiksha সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার - dainik shiksha স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম - dainik shiksha ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত - dainik shiksha ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক - dainik shiksha ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027120113372803