ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বার্ষিক সিনেট অধিবেশনে অর্থ মন্ত্রণালয় প্রণীত সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা বাতিলের প্রস্তাব করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা। বুধবার বিকালে আয়োজিত সিনেট সভায় তিনি এ প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। তিনি উপস্থাপনের পরে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ড. নিজামূল হক ভূঁইয়া প্রস্তাবে সমর্থন করেন। এরপর অধিবেশনে উপস্থিত সব সিনেট সদস্যই প্রত্যয় স্কিম স্থগিত বা বাতিলের পক্ষে বক্তব্য দেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় আনায় তা প্রত্যাখ্যান করে বাতিলের দাবিতে দীর্ঘদিন থেকে কর্মবিরতিসহ নানা ধরনের আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন সহ ঢাবি শিক্ষক সমিতি।
সিনেটে ঢাবি’র চলমান বাজেট অধিবেশনে জিনাত হুদা বলেন, ১৩ই মার্চে যে প্রত্যয় স্কিম প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে, তা বৈষম্যমূলক, মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও স্বায়ত্তশাসন বিরোধী। আমরা শিক্ষক হিসেবে যেসব সুবিধা পেতাম, প্রত্যয় স্কিমে তা কর্তন করা হয়েছে। পেনশন আমাদের একটি সুরক্ষা বলয়। কোন স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে পরামর্শ করে তা বাতিল করা হয়েছে, তা আমরা জানি না। এই প্রজ্ঞাপন জারির আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ কারও সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি।
তিনি বলেন, আমরা বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিয়ে দেশকে ভালোবেসে এখানে এসেছি। এভাবে বৈষম্য চললে মেধাবীরা এখানে আসবে না। আমরা এখনো সংলাপে বিশ্বাস করি।
তা না হলে পহেলা জুলাই থেকে ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা একত্রে সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যাবে। পেনশন আমাদের একটি সুরক্ষা বলয়।
অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন সিনেট সদস্য সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি শিক্ষকদের স্কিম বাতিলের দাবি শোনার পর বলেন, আমি অনুরোধ করছি, আন্দোলনে যাওয়ার আগে আর কী কী সুযোগ বা সম্ভাবনা আছে, তা দেখুন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে আমি আপনাদের পরামর্শ ও প্রস্তাব চাই, যাতে আমরা এটা নিয়ে কাজ করতে পারি। আমাদের যতটুকু চেষ্টা করার সুযোগ আছে, সেটি কাজে লাগাবো।
উল্লেখ্য, গত বছর সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন-২০২৩ প্রণয়ন করা হয়। গত ১৩ই মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এক প্রজ্ঞাপন জারি করে। সেখানে বলা হয়, চলতি বছরের ১লা জুলাইয়ের পর থেকে স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার চাকরিতে যারা নতুন যোগ দেবেন, তারা বিদ্যমান ব্যবস্থার মতো আর অবসরোত্তর পেনশন সুবিধা পাবেন না। তার পরিবর্তে নতুনদের বাধ্যতামূলক সর্বজনীন পেনশনের আওতাভুক্ত করা হবে। শুরু থেকেই সরকারের নেয়া এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।