চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সহকারী প্রক্টর অরূপ বড়ুয়ার স্ত্রী অভি বড়ুয়ার নিয়োগ সুপারিশ বাতিল করা হয়েছে। শুক্রবার (১৪ জুলাই) অনুষ্ঠিত চবির ৫৪৪তম সিন্ডিকেট সভায় অভি বড়ুয়ার এ নিয়োগ সুপারিশ বাতিল করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সিন্ডিকেট সদস্য।
যেখানে প্রার্থী অভি বড়ুয়াকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে বিভাগীয় সভাপতির ‘নোট অব ডিসেন্ট’, পরিকল্পনা কমিটি থেকে বাদ পড়া, আবেদনের শর্তাবলি পূরণ না করা, গত ২০ বছরে তার কোনো চাকরির অভিজ্ঞতা না থাকা, তাকে নিয়োগ না দিতে উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে লিগ্যাল নোটিশ ও বিজ্ঞাপিত পদের অতিরিক্ত আরও দুজনকে সুপারিশসহ প্রার্থী অভি বড়ুয়ার বিভিন্ন অসংগতি অনিয়মের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।
গণমাধ্যমে সংবাদটি প্রকাশের পরপরই শুরু হয় দেশব্যাপী আলোচনা-সমালোচনা। এদিকে সংবাদটি দৃষ্টিগোচর হলে যথারীতি নড়েচড়ে বসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরে গতকাল (১৪ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৪৪তম সিন্ডিকেট সভায় বাতিল করা হয় ওই সহকারী প্রক্টরের স্ত্রী অভি বড়ুয়ার নিয়োগ সুপারিশ।
গত বছরের ২৫ জানুয়ারি ও ২৪ আগস্ট পালি বিভাগে প্রভাষক পদে আলাদা দুটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ। দুটিতেই সহকারী প্রক্টরের স্ত্রী অভি বড়ুয়া আবেদন করেছিলেন। তবে তিনি স্নাতকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম না হয়েও আবেদনপত্রে উল্লেখ করেছিলেন, যা সত্য নয়। এ ছাড়া বিজ্ঞাপনে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে প্রাপ্ত নম্বরের শতকরা হিসাব উল্লেখ করার কথা থাকলেও তিনি তা উল্লেখ করেননি। এসব কারণে তার আবেদন বাতিল করে বিভাগীয় পরিকল্পনা কমিটি।
বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর অভি বড়ুয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে নিজের ভুল স্বীকার করে গত ৬ নভেম্বর পুনরায় তিনি সংশোধনী আবেদনপত্র জমা দেন। তবে আবেদনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় সে আবেদনপত্রও গ্রহণ করা হয়নি।
পরিকল্পনা কমিটির এ সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করেই অভি বড়ুয়াকে সাক্ষাৎকারে ডাকে কর্তৃপক্ষ। গত ১৩ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় ভাইভা বোর্ড। ওই বোর্ডে পালি বিভাগের সভাপতি শাসনান্দ বড়ুয়ার আপত্তি সত্ত্বেও অভি বড়ুয়াকে সবার আগে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়।
জানতে চাইলে পালি বিভাগের সভাপতি শাসনানন্দ বড়ুয়া রুপন বলেন, বিজ্ঞপ্তির শর্ত পূরণ না করা, পরিকল্পনা কমিটি থেকে বাদ পড়া ও সাক্ষাৎকারে যথাযথ প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারার কারণে তিনি অভি বড়ুয়াকে নিয়োগ না দেওয়ার পক্ষে ছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের একজন সদস্য বলেন, আবেদনপত্রের তথ্যে ত্রুটি থাকা, বিজ্ঞাপনের শর্ত পূরণ না করা ও বিভাগীয় সভাপতির ‘নোট অব ডিসেন্ট’ এর কারণে সিন্ডিকেট সভায় অভি বড়ুয়ার নিয়োগ সুপারিশের অনুমোদন দেওয়া হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ, সংবিধি এবং শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা অনুযায়ী কোন বিভাগে কতজন শিক্ষক দরকার হবে; তা নির্ধারণ করে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় পরিকল্পনা কমিটি। এরপর শূন্য পদের বিপরীতে প্রকাশিত হবে বিজ্ঞপ্তি। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আবেদনকারীদের তথ্য যাচাই-বাছাই করা হবে। এরপর এসব তথ্য পাঠানো হবে নিয়োগ বোর্ডে। বোর্ড প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নিয়ে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করবে। এরপর সর্বশেষ সিন্ডিকেট সভায় নিয়োগের চূড়ান্ত অনুমোদন হবে।