তদন্ত কমিটির অনেক প্রশ্নেরই উত্তর দিতে পারেননি ড. সোবহান

রাবি প্রতিনিধি |

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বিতর্কিত গণনিয়োগকে কেন্দ্র করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির অনেক প্রশ্নেরই কোনো জবাব দিতে পারেননি বিদায়ি ভিসি প্রফেসর ড. এমএ সোবহান। বরং অনেক সময় তিনি মাথা নিচু করে চুপ থেকেছেন। তদন্ত কমিটি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ২৩ মে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা যায়, রাবিতে সব নিয়োগের ওপর গত বছর ১০ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিষেধাজ্ঞা দেয়। মন্ত্রণালয়ের এ নিষেধাজ্ঞা মেনে বিজ্ঞাপিত সব পদের নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করার পরও আবার কেন সেসব বিজ্ঞাপিত পদগুলোয় বিতর্কিত নিয়োগ দিলেন-এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারেননি ড. সোবহান।

তদন্ত কমিটি সূত্র জানায়, রাবিতে বিতর্কিত নিয়োগের সব দায়দায়িত্ব পুরোপুরি বিদায়ি ভিসি সোবহানের ওপরেই বর্তায়। ড. সোবহানও জানিয়েছেন, যেসব কর্মকর্তাকে তিনি বিতর্কিত নিয়োগ কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করিয়েছেন তাদের খুব একটা দায় নেই। কারণ তার (সাবেক ভিসি) নির্দেশ অনুসারেই তারা কাজ করতে বাধ্য হয়েছেন। তদন্ত কমিটির কাছে ড. সোবহান এ স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। তবে যেসব কর্মকর্তা এ বিতর্কিত নিয়োগে নিজের ভাই-ভাতিজা আত্মীয়স্বজনকে নিয়োগ দিয়েছেন, সেসব দায় তাদেরই নিতে হবে। নিয়োগে স্বাক্ষরকারী সহকারী রেজিস্ট্রার তারিকুল ইসলাম তার দুই ভাইকে চাকরি দিয়েছেন। উপরেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী তার ছেলেকে চাকরি দিয়েছেন। এসব বিষয়ে তদন্ত কমিটি খতিয়ে দেখছে। সূত্র জানায়, বিদায়ি ভিসির নির্দেশ অনুসারে রেজিস্ট্রার প্রফেসর আব্দুস সালাম বিতর্কিত নিয়োগে স্বাক্ষর করেননি। স্বাক্ষর না করে তিনি (সালাম) যথাযথভাবে তার দায়িত্ব পালন করেছেন বলে তদন্ত কমিটি তাকে ধন্যবাদ দিয়েছে।

মঙ্গলবার তদন্ত কমিটির প্রধান ও ইউজিসির সিনিয়র সদস্য ড. মুহাম্মদ আলমগীর জানান, রাবির বিতর্কিত গণনিয়োগের বিষয়ে তারা প্রতিবেদন তৈরির কাজ করছেন। কমিটি অতিরিক্ত সময় নেবে না। ২৩ মে প্রতিবেদন জমা দেবে।

সূত্র জানায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে রাবির গণনিয়োগকে অবৈধ ঘোষণা করায় নিয়োগের বৈধতার কিছু নেই। তদন্ত কমিটিও নিয়োগের সব নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখে এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে। বিদায়ি ভিসি তার বলয়ভুক্ত গোষ্ঠী, শ্রেণি ও সংগঠনের লোকদের খুশি করতে এ ধরনের বেহিসাবি কাজ করেছেন। আবার এ নিয়োগের পেছনে তার ব্যক্তিগত স্বার্থও জড়িত ছিল বলে মনে করে তদন্ত কমিটি। ২০১৭ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে ভিসি হওয়ার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসাবে অবসর গ্রহণ ও পেনশনসহ সব সুযোগ ও আর্থিক পারিতোষিক ড. সোবহান তুলে নেন। আবার একেবারে বিদায়ের কয়েক ঘণ্টা আগে গণনিয়োগ দিয়ে তিনি স্বার্থহাসিলেও মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন।

নাম প্রকাশ না করে তদন্ত কমিটির একজন সদস্য বলেন, বিদায়ি ভিসি ড. সোবহান তদন্ত কমিটির সামনে দেওয়া মৌখিক জবানবন্দিতে বলেছেন, বিতর্কিত ১৪১ জনবল নিয়োগের পুরো দায়দায়িত্ব তার। তবে নিয়োগের জন্য বিভিন্ন মহলের চাপ ছিল বলে তিনি কমিটির কাছে স্বীকার করেছেন। এসব নিয়োগের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি ভাবিত নন বলেও কমিটিকে তিনি নিজেই জানান। নিয়োগ টিকবে কি, টিকবে না-এ নিয়ে তার কোনো ভাবনা নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও রাবির পরবর্তী প্রশাসন যেটা ভালো মনে করবে, সেটাই করবেন। এমন সব অভিমত কমিটির কাছে প্রকাশ করেন ড. সোবহান।

উল্লেখ্য, ৫ মে রাতে রাবির বিদায়ি ভিসি ড. সোবহান ১৪১ জনকে নিয়োগ দেন। পরদিন তার কার্যদিবসের শেষদিনে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কড়া পুলিশ পাহারায় ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন ড. সোবহান। এদিনই শিক্ষা মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি গঠন করে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032219886779785