তারেককে ফেরাতে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে: তথ্যমন্ত্রী

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

পাঁচ মামলায় সাজার রায় মাথায় নিয়ে লন্ডনে বসবাসরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে সাজা কার্যকর করতে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে ‘আলাপ-আলোচনা চলছে’ বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। 

সমসাময়িক বিষয় নিয়ে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন তিনি। 

হাছান মাহমুদ বলেন, “এ ব্যাপারে আমরা ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছি। আলাপ-আলোচনা চলমান আছে।” 

ঘোষিত আয়ের বাইরে সম্পদের মালিক হওয়ার দায়ে তারেক রহমানকে ৯ বছরের কারাদণ্ড এবং তার স্ত্রী জোবায়দা রহমানকে ৩ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। 

বুধবার ঘোষিত ওই রায়ে দুজনকে জরিমানা করার পাশাপাশি তাদের অপ্রদর্শিত আয়ের পৌনে তিন কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করারও আদেশ দিয়েছেন বিচারক। 

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক ও তার স্ত্রী বিরুদ্ধে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এই মামলাটি হয় ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে। তখন তারেক গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।

২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে তারেক জামিনে মুক্তি পেয়ে সপরিবারে যুক্তরাজ্যে যান চিকিৎসার জন্য। এরপর তিনি আর দেশে ফেরেননি। প্রবাসে থেকেই বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান হন তিনি, মা কারাগারে যাওয়ার পর থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পদ নেন তিনি।

তারেক বিদেশে থাকা অবস্থায়ই এর আগে চারটি মামলায় তার বিরুদ্ধে সাজার রায় আসে। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে দুই বছর, অর্থ পাচারের দায়ে সাত বছর, জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০ বছর এবং একুশে অগাস্টের গ্রেনেড মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ হয় তার।

নতুন করে আরেক মামলায় সাজার রায় আসায় শুক্রবার সারা দেশে প্রতিবাদ সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।

সে প্রসঙ্গ টেনে হাছান মাহমুদ বলেন, “এই মামলা কিন্তু আমাদের সরকার দায়ের করেনি। এই মামলা করেছে তাদের পছন্দের তত্ত্ববধায়ক সরকার ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে। 

“কারণ ইয়াজ উদ্দিন সাহেব খালেদা জিয়ার দলের মানুষ ছিলেন, তাকে খালেদা জিয়া ও বিএনপিই রাষ্ট্রপতি বানিয়েছিলেন। ফখরুদ্দিন সাহেবকে ওয়াশিংটন থেকে ধরে এনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করা হয়েছিল। সেই সরকার সেনা সমির্থিত ছিল। তখন যিনি সেনাপ্রধান ছিলেন, সাতজনকে ডিঙ্গিয়ে খালেদা জিয়া তাকে সেনাবাহিনীর প্রধান বানিয়েছিলেন। তাদের পছন্দের মানুষরাই যখন ক্ষমতায় তখনই এই মামলা দায়ের হয়েছিল।”

আওয়ামী লীগ তারেক রহমানের ওপর প্রতিহিংসা পরায়ণ হলে দলের পক্ষ থেকেই মামলা করা হত বলে মন্তব্য করেন ক্ষমতাসীন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ। 

তিনি বলেন, “আসলে আইন, আদালত কোনো কিছুর ওপর তাদের (বিএনপি) আস্থা নেই এবং কোনো কিছুকেই তোয়াক্কা করে না। শুধু ক্ষণে ক্ষণে বিদেশিদের কাছে যায়, আমরা বিদেশিদের কাছে যাই না, বিদেশিরা প্রয়োজনে আমাদের কাছে আসে।” 

বিএনপিকে ‘নেতৃত্বশূন্য করতে’ নির্বাচনের আগে তারেক ও জোবায়দার সাজা দেওয়া হয়েছে বলে যে অভিযোগ দলটির নেতারা করেছেন, সে বিষয়েও তথ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। 

জবাবে তিনি বলেন, “সরকার যদি স্বঃপ্রণোদিত হয়ে কোনো কিছু করত, তাহলে এই মামলার রায় হওয়ার জন্য তো সাড়ে ১৪ বছর অপেক্ষা করতে হত না। 

“নির্বাচন তো এর আগেও দুটো হয়েছে, আমরা ক্ষমতায় থাকাকালীন। এটার সঙ্গে নির্বাচনের তো কোনো সম্পর্ক নেই, আমাদের সরকার প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে মোটেই করেনি। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বিচার হয়েছে, বিচারের রায় হয়েছে।” 

তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে এক প্রশ্নে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “এ ব্যাপারে আগেও একটি রায় ছিল- তারেক রহমানের কোনো বক্তব্য পত্রপত্রিকা বা টেলিভিশনে প্রচার করা যাবে না। প্রধান সারির গণমাধ্যম তারেক রহমানের কোনো বক্তব্য প্রচার করে না। 

“কিন্তু মাঝেমধ্যে কেউ কেউ ভুল করে করে এবং স্যোশাল মিডিয়ায় করে, ইউটিউব চ্যানেলে (তারেকের বক্তব্য) প্রচার হয়। আমি মনে করি এগুলো হচ্ছিল বিধায় আদালত আবার সাপ্লিমেন্টারি রায় দিয়েছে। কেউ যদি সেটার ব্যত্যয় ঘটায় তবে নিশ্চিতভাবে আদালত অবমাননা হবে, আদালত অবমাননা হলে আদালত সেক্ষেত্রে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।” 

বুধবার রংপুরে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় ‘স্মরণকালের বিশাল সমাবেশ’ হয়েছে দাবি করে হাছান মাহমুদ বলেন, “আমরা জনসভার ডাক দিয়েছিলাম, সেটি মহাসমাবেশে রূপ নিয়েছে। পুরো রংপুর শহরটা জনসভাস্থলে রূপান্তরিত হয়। লাখ লাখ মানুষ সেখানে যোগদান করেছে। 

“মানুষের মধ্যে যে বিপুল উৎসাহ, উদ্দীপনা আমরা দেখতে পেয়েছি শেখ হাসিনাকে সম্ভাষণ জানানোর জন্য, জনসভায় যোগ দেওয়ার জন্য, এতেই প্রমাণিত হয়, দেশের মানুষ শেখ হাসিনাকে কতটুকু ভালোবাসে এবং শেখ হাসিনার ওপর মানুষের আস্থা, বিশ্বাস ও সমর্থন রয়েছে।”


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ভিসি নিয়োগের দাবিতে এবার উত্তরবঙ্গ ব্লকেড বেরোবি শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ভিসি নিয়োগের দাবিতে এবার উত্তরবঙ্গ ব্লকেড বেরোবি শিক্ষার্থীদের দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! - dainik shiksha দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণার দাবি জামায়াতের - dainik shiksha ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণার দাবি জামায়াতের শিক্ষক আত্মগোপনে দায়িত্বে ছাত্ররা - dainik shiksha শিক্ষক আত্মগোপনে দায়িত্বে ছাত্ররা ভারতে পাঠ্যবই ছাপানোর বিপক্ষে ৯২ শতাংশ বাংলাদেশি - dainik shiksha ভারতে পাঠ্যবই ছাপানোর বিপক্ষে ৯২ শতাংশ বাংলাদেশি পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা - dainik shiksha পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা ভয়ংকর বিপদের মধ্যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী - dainik shiksha ভয়ংকর বিপদের মধ্যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035510063171387