পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীর বিরুদ্ধে বাড়ি দখল ও হয়রানির অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সাবেক শিক্ষক স্বামী। তার অভিযোগ, স্ত্রীকে তালাক দেয়ার পর তিনি তার নিজের বাড়িতে উঠতে পারছেন না।
বুধবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে জেলা শহরের একটি পার্কে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তেঁতুলিয়া সরকারি কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক আছমত আলী।
অভিযুক্ত নারী ও তার স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ তার প্রভাবশালী স্বজনদের হুমকিতে তিনি নিয়মিত কলেজে যেতে পারছেন না বলেও অভিযোগ করা হয়।
লিখিত বক্তব্যে কলেজশিক্ষক আছমত আলী বলেন, ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ইটাকুমারী হাসনা এলাকার নুরুল ইসলামের মেয়ে নুর বানুর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি শুরু করে নুরবানু। চাকরির পর থেকেই স্বামীর অবাধ্য হলে সংসারে অশান্তি শুরু হয়। এ নিয়ে একাধিকবার সালিশ ও মামলা হয়। স্ত্রীর পরিবারের লোকজন সময় অসময়ে তাকে লাঞ্ছিত করতেন।
তেঁতুলিয়া উপজেলা সদরে জমি কিনে নিজের করা বাড়িতে বসবাস করতেন আছমত। তাদের সংসারে স্কুলপড়ুয়া এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। সংসারে অশান্তি চরম আকার ধারণ গতবছরের অক্টোবরে কাজির মাধ্যমে নুর বানুকে তালাক দেন আছমত। তালাক কার্যকরের পরে আবার বিয়ে করলেও তার ঘরবাড়ি দখল করে রাখেন তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী নূর বানু। পরে বাড়িতে উঠতে গেলে নুর বানুর লোকজন তাকে লাঞ্ছিত করেন এবং নানাভাবে হুমকি দেন।
এরপর স্থানীয় পর্যায়ে সালিশের মাধ্যমে বাড়িটি তালাবন্ধ রাখা হলেও মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) সাবেক স্ত্রী নুর বানু আবারও সাবেক স্বামীর বাড়িতে ওঠেন। এতে সহযোগিতা তার আত্মীয় ও ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ করিম সিদ্দিকী।
কলেজশিক্ষক আছমত আলী বলেন, ‘আমি নুর বানুর মানসিক অত্যাচারে তাকে তালাক দিতে বাধ্য হয়। কিন্তু তার নির্যাতন থেকে এখনো মুক্তি পাচ্ছি না। আমার বাড়ি দখল করে নিয়েছে। আমাকে আমার বাড়িতে ঢুকতে দিচ্ছে না। তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদ করিম সিদ্দিকী অবৈধভাবে তাকে আমার বাড়িতে তুলে দিয়েছেন। তার কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে আমাকে গাছে ঝুলিয়ে মারধরের হুমকি দেন। আমার কাছে এর কল রেকর্ড আছে। নিজের ঘরবাড়ি থাকতেও ভাড়া বাড়িতে থাকছি।’
এ বিষয়ে তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী নুর বানু বলেন, ‘আমার স্বামী বিয়ের পর থেকে যৌতুকের জন্য আমার ওপর নির্যাতন করতো। আমি চাকরি করে যে টাকা পেতাম, সব টাকা নিয়ে নিতো সে। আমার টাকায় জমি কিনে বাড়ি করেছে। আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিতে ব্যর্থ হয়ে সে আরেকটি বিয়ে করে পঞ্চগড়ে থাকে। আমার সন্তানদের কথা চিন্তা করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা আমাকে তার বাড়িতে উঠিয়ে দিয়েছেন।’
ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ করিম সিদ্দিকী বলেন, তাকে কোনোধরনের হুমকি দেওয়া হয়নি। তাদের বিষয়টি নিয়ে দশবারের বেশি সালিশ হয়েছে। সবশেষ বাড়িসহ জমিটি দুই সন্তানের নামে দানপত্র করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়, কিন্তু আছমত আলী তা মানেননি। পরে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের নিয়ে আমরা সন্তানসহ ওই নারীকে সেই বাড়িতে তুলে দেই।