সিকিমে হড়পা বানের (ফ্লাশ ফ্লাড) পর বদলে গেছে তিস্তার গতিপথ। গত অক্টোবরের ওই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের প্রভাব সাধারণ জনজীবনে যেমন পড়েছে, তেমনই বিপর্যস্ত পশুপাখিদের জীবনও। বস্তুত, এখনো তিস্তার নিম্ন অববাহিকা অঞ্চল পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে পারেনি। তার প্রমাণ মিললো গজলডোবায়। এ বার পরিযায়ী পাখিদের দেখাই মিললো না সেভাবে।
ডিসেম্বরের শেষ থেকে গজলডোবার তিস্তাপাড়ে আস্তানা গাড়তে থাকে পরিযায়ী পাখিরা। মধ্য এশিয়া এবং ইউরোপের বিভিন্ন জায়গা থেকে পরিযায়ী পাখিদের ভিড় শুরু হয় গজলডোবা ব্যারেজ-সহ ফুলবাড়ি ব্যারেজ বা জলাভূমিতে। এ বছর ফুলবাড়ির জলাভূমিতে পরিযায়ী পাখিদের তা-ও দেখা মিলেছিল। কিন্তু গজলডোবায় তাদের দেখাই নেই। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, তিস্তায় যে বিপর্যয় ঘটেছিল তারই ফল ভোগ করতে হচ্ছে। নদীতে পলির পরিমাণ এতো বেশি যে তাদের খাদ্যভাব দেখা দিয়েছে। সে কারণেই এ বছর তিস্তায় পরিযায়ী পাখির সংখ্যা যথেষ্ট কম। দীর্ঘ কয়েক বছর পাখিদের নিয়ে কাজ করছে অপটোপিক নামে একটি সংগঠন। তাদের সভাপতি দীপজ্যোতি চক্রবর্তী বলেন, ‘এ বছর গজলডোবার পরিস্থিতি করুণ। তিস্তার বিপর্যয়ের ফলে পলির পরিমাণ নদীতে এতোটাই বেশি যে এ বার খাদ্যভাব দেখা দিয়েছে পরিযায়ী পাখিদের। তা ছাড়া, বিপর্যয়ের পর বাসস্থানও নষ্ট হয়ে গেছে।’
গজলডোবা ব্যারেজের পাশে যে জলাভূমি রয়েছে, তা কচুরিপানায় ভর্তি। বেত গাছের বাগান পাশেই। সেখানেই পরিযায়ী পাখিদের অস্থায়ী বাসস্থান। কিন্তু তিস্তার বিপর্যয়ের পর সেই জলাভূমির পুরোনো পানি বেরিয়ে গিয়ে নতুন পানি ঢুকেছে। ফলে সামগ্রিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটে গেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ওই পাখিরা খুবই শান্ত পরিবেশে থাকতে পছন্দ করে। গজলডোবার ওই জায়গাটা তাদের জন্য উপযুক্ত। এ বার বহু আলোকচিত্রী এসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কারণ পাখিই যে নেই! দীপজ্যোতি বলছেন, ‘কয়েক বছর লেগে যাবে আগের পরিবেশ তৈরি হতে। ততো দিন পরিযায়ী পাখিদের দেখাও তেমন ভাবে মিলবে না। কারণ যে পরিযায়ীরা ঘুরে চলে গেছে, আগামী বছর তাদের এই জায়গায় আবার আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ।’’
কলকাতা থেকে গজলডোবায় এসেছিলেন আলোকচিত্রী হীরক সেনগুপ্ত। উদ্দেশ্য ভাল কয়েক’টা ছবি তোলা। কিন্তু নিরাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে তাঁকে। তিনি বলেন, ‘তিস্তায় বিপর্যয়ের পর দেখলাম প্রায় ৭০ শতাংশ পাখিই আর গজলডোবায় নেই। ভোরের আলোর ফোটার সময় শুধু কয়েকটির দেখা মেলে।’ বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত বিশেষজ্ঞরা। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের দার্জিলিং জেলা কমিটির সম্পাদক দেবর্ষি ভট্টাচার্যের কথায়, ‘এটা খুবই দুঃখের যে গজলডোবায় এ বার পরিযায়ী পাখির সংখ্যা প্রায় নেই। পরিযায়ী পাখিরা কোথায় গেলো তা সমীক্ষা ছাড়া বলা সম্ভব নয়। ফুলবাড়ির জলাভূমিতে এ বছরও বিপুল সংখ্যক পরিযায়ী পাখি এসেছে। আমরা সমীক্ষা করছি। বিগত কয়েক বছরের হিসাব ধরলে সব মিলিয়ে প্রায় ৯৮ প্রজাতির পাখি ছিল। এ বছর আমরা গণনা শুরু করেছি।’ সূত্র: আনন্দবাজার
শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।