তীব্র গরমে বদলে গেছে আদালতের পরিবেশ

দৈনিক শিক্ষাডটকম, আদালত প্রতিবেদক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম, আদালত প্রতিবেদক: দেশজুড়ে চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ। পুড়ছে ফসলের খেত, শুকিয়ে যাচ্ছে নদী-নালা, জলাশয়। ফেটে চৌচির হচ্ছে ফসলের মাঠ। তীব্র গরমে হিটস্ট্রোকে মারা যাচ্ছেন কর্মজীবী মানুষ। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

দেশজুড়ে কাঠফাটা গরমে হারিয়ে গেছে আদালতের চিরচেনা পরিবেশও। গত বছরের ১১ মে হিটস্ট্রোকে মারা যান ঢাকা আইনজীবী সমিতির নিয়মিত সদস্য সৈয়দ শফিউল ইসলাম আলাউদ্দিন। তার মৃত্যুর পর  আইনজীবীদের দাবির মুখে গত বছরের ১৩ মে বিচার কাজে অংশ নেয়ার সময়ে কোর্ট গাউন পরার বাধ্যবাধকতা তুলে নেয় সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন। পরে শীতকালে ফের কোর্ট গাউন পরার নির্দেশ দেয়া হয়।

এ বছর এপ্রিলের শুরুতেই গরমের তীব্রতা বাড়লে আগেভাগেই গত ৪ এপ্রিল এক আদেশে বিচারিক আদালতে বিচারক ও আইনজীবীদের কালো কোট ও গাউন পরার আবশ্যকতা নেই বলে জানায় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নির্দেশে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. গোলাম রব্বানী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।

সুপ্রিম কোর্ট প্রশানের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের সব অধস্তন দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত/ট্রাইব্যুনালসমূহের বিচারক ও আইনজীবীদের ক্ষেত্রমতো সাদা ফুলশার্ট বা সাদা শাড়ি/সালোয়ার কামিজ ও সাদা নেক ব্যান্ড/কালো টাই পরিধান করবেন। এক্ষেত্রে কালো কোট এবং গাউন পরিধান করার আবশ্যকতা নেই। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ আদেশ বলবৎ থাকবে।

সুপ্রিম কোর্টের সেই নির্দেশের পর হারিয়ে গেছে দেশের আদালতের সেই চিরচেনা পরিবেশ। যেখানে প্রচণ্ড গরমেও আদালতের আইনজীবী, বিচারকরা কোর্ট-টাই, গাউন পরে বিচারকার্য পরিচালনা করতেন, সেখানে তারা শুধু সাদা জামার ওপরে টাই পরে শুনানি করছেন। আর নারী আইনজীবীরা সাদা শাড়ি অথবা সাদা সালোয়ার কামিজ ও সাদা নেক ব্যান্ড পরে আদালতে শুনানি করছেন। গরমে কালো কোর্ট গাউনের বিভীষিকা না থাকলেও শান্তিতে নেই আইনজীবী কিংবা বিচারপ্রার্থীরা। তাদের মধ্যে আইনজীবীদের অবস্থা বেশ খারাপ।

সকাল ৯টার পর থেকেই আইনজীবীদের ছুটতে হয় এক কোর্ট থেকে আরেক কোর্টে। এ এজলাস থেকে ওই এজলাসে। সবার পরনে কালো প্যান্ট, সাদা শার্ট ও কালো টাই বা সাদা নেক ব্যান্ড। নারী আইনজীবীদের সাদা শাড়ি কিংবা সাদা সালোয়ার কামিজের সাথে সাদা নেক ব্যান্ড। সকালেই তাপমাত্রা উঠে যায় ৩৫/৩৬ ডিগ্রি। গরমে দৌড়াদৌড়িতে ঘামে নেয়ে একাকার সবাই। কপাল বেয়ে টপটপ করে মাটিতে ঝরে পড়ে নোনা ঘাম। আর গরম সহ্য করতে না পেরে অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকে।

খুব একটা প্রশান্তিতে নেয় বিচারপ্রার্থীরাও। গ্রেফতারি পরোয়ানা থেকে বাঁচতে মামলার হাজিরা দিতে এ গরমেও আদালতে এসে হাজির হন তারা। কেউ কেউ আসেন তার করা মামলা বাঁচাতে কিংবা সাক্ষ্য দিতে। কারো কারো আইনজীবীদের চেম্বারে জায়গা হলেও অধিকাংশই থেকে যান আদালতের বারান্দায় কিংবা কোনো গাছের ছায়ায়।

আদালতে ডিউটিরত পুলিশের অবস্থা বেশ করুণ। তাদের বসার তেমন কোনো জায়গা নেই। বেশিরভাগ সদস্যকেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। আসামিদের নিরাপত্তার অনেক সময় পুলিশ সদস্যদের রোদে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। গত ২২ এপ্রিল আদালতে রোদে ডিউটিরত থাকাবস্থায় এক নারী পুলিশ সদস্য অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে দ্রুত পার্শ্ববর্তী ন্যাশনাল মেডিক্যাল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

গরমের তীব্রতা সম্পর্কে ঢাকা বারের আইনজীবী ইব্রাহিম দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আগে আদালতে আসতাম সকাল ৯টায়। রোদ থেকে বাঁচতে এখন সকাল ৮টাতেই চলে আসি। আদালতে কাজ শেষ হলেও বাসায় যেতে পারি না। রোদের তাপ কমার জন্য অপেক্ষা করি। তারপর ৫টা, সাড়ে ৫টার দিকে বাসায় যাই।

মামলার হাজিরা দিতে আসা রবিউল ইসলাম রবি নামে এক ব্যক্তিও প্রায় একই কথা জানান। সকাল সাড়ে ১০টা কোর্টের কার্যক্রম শুরু হবে জেনেও সকাল ৮টা নাগাদ আদালতে এসে উপস্থিত হন তিনি। প্রখর তাপপ্রবাহ আর গরমে জ্যাম এড়াতেই তিনি এতো সকালে আদালতে আসেন বলে জানান।

 

শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান - dainik shiksha সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা - dainik shiksha লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক কেনো বদলি চান - dainik shiksha শিক্ষক কেনো বদলি চান ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে - dainik shiksha ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033760070800781