ছয় মাস আটক থাকার পর আদালতের নিলামে ২১ লাখ ৪৩ হাজার টাকায় (ভ্যাটসহ) বিক্রি হয়েছে ১১টি ভারতীয় গরু। গতকাল মঙ্গলবার ঝিনাইদহ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রট আদালত চত্বরে সেগুলো নিলামে বিক্রি করা হয়। তবে গত বছরের ১১ জুন থেকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত গরুগুলোর খাবার ও লালন-পালনে দুইজন রাখালের পারিশ্রমিকসহ মোট ১৩ লাখ ২৮ হাজার টাকা খরচ দেখানো হয়েছে!
জানা গেছে, নিলামে সর্বোচ্চ ১৯ লাখ ৫ হাজার টাকার ডাকে গরুগুলো কিনে নেন শৈলকুপা উপজেলার কাচেরকোল গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন ও মির্জাপুর গ্রামের শওকত হোসেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক আবু সায়েম জানান, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ২১ জুন গভীর রাতে জেলার মহেশপুর উপজেলার নাটীমা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অবৈধভাবে পাচারকালে ভারতীয় ১১টি গরুসহ সুন্দরপুর গ্রামের চোরাকারবারি ফারুক হোসেন ও সাদিসহ তিনজনকে আটক করা হয়। গরু আটকের পর বিপাকে পড়ে পুলিশ। আদালতের কাছে নিলামের জন্য আবেদন করা হয়। এদিকে গরুর মালিকানা দাবি করে আদালতে মামলা করা হয়। পরে সেটি উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ায়। এদিকে মাসের পর মাস মামলা চলতে থাকার কারণে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মনোজিৎ কুমার মন্ডলকে গরুগুলোর দায়িত্ব দেয়া হয়। ঝিনাইদহ সদর থানা চত্বরেই একটি অস্থায়ী সেড নির্মাণ করে দুইজন রাখাল গরুগুলোর দেখাশোনা করতে থাকেন।
উপ-পরিদর্শক আবু সায়েমের দাবি, গরুগুলোর খাবার ও লালন-পালন বাবদ এ পর্যন্ত ১৩ লাখ ২৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এর মধ্যে প্রাণিসম্পদ বিভাগ ১২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা ও ৩০ হাজার টাকা তিনি নিজে খরচ করেছেন।
ঝিনাইদহ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির জিয়াউর রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, নিয়ম মেনে আদালত চত্বরে প্রকাশ্য নিলামে ১১টি গরু বিক্রি করা হয়। গরুর প্রকৃত মূল্য ১৯ লাখ ৫ হাজার টাকা। সরকারি মূল্য ধরা হয়েছিল প্রতিটির জন্য এক লাখ ৮০ হাজার টাকা। ভ্যাট ও আইটিসহ ২১ লাখ ৪৩ হাজার ১২৫ টাকা মূল্য পড়েছে।
এদিকে কুষ্টিয়ার গরুর খামারী হামিদুল ইসলাম, গাইবান্ধার গরুর খামারী ইউনূস মোল্লাসহ বেশ কয়েকজন খামারীর সঙ্গে এ নিয়ে কথা দৈনিক শিক্ষাডটকমের। খামারীদের ভাষ্য মোটাতাজাকরণের উদ্দেশে ছয় মাস লালন-পালনে খাবার খরচ ও দুইজন রাখালের পরিশ্রমিক বাবাদ ওই সাইজের প্রতিটি গরুর পেছনে ছয় মাসে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকার বেশি খরচ হওয়ার কথা না। সে হিসেবে ১১টি গরুর পেছনে সাড়ে ৪ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকার বেশি খরচ হওয়ার কথা না।
১১ গরু ছয় মাস পালতে ১৩ লাখ ২৮ হাজার টাকা খরচ অস্বাভাবিক উল্লেখ করে এক খামারী বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, থানায় থাকলে গরু কতো খায়!
এ অস্বাভবিক খরচের বিষয়ে জানতে বুধবার রাতে দৈনিক শিক্ষাডটকমের পক্ষ থেকে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় ঝিনাইদহ সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মনোজিৎ কুমার মন্ডলের সঙ্গে। তার দাপ্তরিক মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার চেষ্টা করার পরও কোনো সাড়া মেলেনি। তাই, তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।